''নয়টার গাড়ি কয়টায় ছাড়ে?'' এহেন প্রশ্নে বাংলা কবিতার কবিগণ আদৌও বিশ্বাস করেন না। তাই, ১২/০১/২০১৮ তারিখ শুক্রবার ঠিক ৩-০০ টায় কবিদের সম্মিলনে আড্ডা শুরু হলো, কবি অনিরুদ্ধ বুলবলের মিরপুর-১ এর বাসায়।
একে একে উপস্থিত হলেন, কবিতার প্রতি ভালোবাসায় নিবেদিত কবিগণ, প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া- প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে। । আর সাথে করে নিয়ে আসলেন ভালোবাসার স্মারক (অন্য বন্ধুদেরকে খাওয়ার জন্য) কিছু না কিছু খাবার। কি না ছিলো সেই খাবারের তালিকায়? কয়েক প্রকার চকোলেট, ক্যাণ্ডি, বিস্কুট, মিষ্টি, চানাচুর...। আর কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের মুড়ি আর চা। সবকিছু মিলে জমজমাট আড্ডা।
প্রথমে পরিচিতির পালা শুরু। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর; কবি ও কবিতা প্রাসঙ্গিকতায় আলোচনা এবং ফাঁকে ফাঁকে কবিকণ্ঠে স্বরচিত কবিতাপাঠ। কেউ কেউ তার কবিতা পাঠ করার পর, কবিতাটি লেখার প্রেক্ষাপট ও ভাবনাকে অন্যান্যদের মাঝে তুলে ধরেছেন। এতে কবিতার অন্তর্নিহিত মাধুর্য শ্রোতাদের মাঝে আরো বেড়ে গেলো।
এরই একফাঁকে ভারতীয় কবি চিত্ত রঞ্জন সরকার-এর কবিতা 'কবি সম্মেলন ২০১৮' পাঠ করলেন আসর কবি নাজমা আক্তার এবং কবি রবিউল হাসান-এর কণ্ঠে আবৃত্তি হলো কবি অনুপ মজুমদারের কবিতা 'মিলন মেলা' । কবিতা পাঠের পর উপস্থিত সকলে করতালি দিয়ে কবিতাপাঠক ও কবিদেরকে অভিনন্দন জানালেন। কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা, আড্ডা সব মিলিয়ে মাগরিবের আযান পর্যন্ত চললো নিরবচ্ছিন্নভাবে।
মাগরিব নামাজের পর শুরু হলো কবি রুনা লায়লা আর কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের সুখকর আপ্যায়ণ। বয়সের দিক দিয়ে একটু ওজন কম (নবীণ) দু'চারজন কবি আসন থেকে উঠে গিয়ে তাদেরকে সহায়তা করলেন। মুখরোচক খাদ্যসামগ্রী খাওয়া আর কথা চললো সমানতালে। আনন্দ আর পরস্পরের সাথে ভাবনার বিনিময় চললো হাসি-হুল্লোড়ের মধ্যে। টেবিলের উপরের খাবার শেষ হতে চায় না। একজন আরেকজনকে পছন্দের খাবারটি খাওয়ানোর জন্য জোর করছেন। অতঃপর, চা পানের পর শেষ হলো জলখাবারের পর্ব।
আজকের আড্ডায় উপস্থিত কবিগণ হলেন- সর্বকবি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামন, রবিউল হাসান, মনিরুল ইসলাম (মনির), রিয়াদ মোর্শেদ, নাজমা আক্তার, অনিরুদ্ধ বুলবুল, মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, শেখ ফরিদ, মোঃ লিমন আহমেদ, মোঃ ফাহদে আলী, মেঃ জসিম উদ্দিন, জাহিদ হোসেন রনজু, রুনা লায়লা (কাদম্বরী), ফরিদ হাসান, জালাল উদ্দিন মুহম্মদ, আফরিনা নাজনীন মিলি ও সিমন চন্দন বৈরাগী।
আবার শুরু হলো, আবৃত্তি, আলোচনা এবং আড্ডা। কবি আফরিনা নাজনীন লাজুক হাসিতে নিচুস্বরে বললো, 'আমি একটি সুখবর দিতে চাই'। অনুমতি নিয়ে কবি আমাদেরকে জানালো- এবার ফেব্রুয়ারীর বইমেলায় তার কাব্যগ্রন্থ 'ডুবসাঁতার' প্রকাশিত হচ্ছে। উপস্থিত সকলেই তাকে অভিনন্দন জানালেন। কবির আনা 'চমচম' খেলাম এবং ফটোসেশন চললো কিছুক্ষণ।
শীতের সন্ধ্যা বেড়ে ক্রমে রাত্রির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, ওদিকে কারোরই খেয়াল নেই। বিমুগ্ধতায় সবাই আপ্লুত। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের মতো সবকিছুই শুরু মতোই একসময় শেষ করতে হয়। আমাদের আড্ডাও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হলো না। আনন্দময় আড্ডার হাট ভেঙ্গে যে যার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু, কথার যেন শেষ হয় না। সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু'তিন করে জোঁট বেঁধে না-ফুরানো কথার ফুলঝুরি চলছে...
সকলের মঙ্গল ও শুভকামনা করছি।