এইভাবে চলে যাবে, কখনও পারিনি ভাবতে,
পরাজিত ক্রূর হিংস্র শত্রুর আঘাতে
নির্মম নৃশংসভাবে রাতের আঁধারে পরিজনসহ
ভাবতে পারিনি কখনও, প্রিয় খোকা।
নক্ষত্রপুঞ্জের মতো আজও তুমি জ্বলে ওঠো,
জ্বলজ্বল করে স্বাধীনতাকামী বিদগ্ধ অন্তরে;
চেতনার সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসো বারংবার তুমি,
এই পৃথিবীর মাঠে।
সুনন্দ স্বপ্নের বজ্রকণ্ঠী রাজপুত্র!
আষাঢ়িয়া কালো মেঘে যখন ঢেকেছে
প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলাদেশের আকাশ;
তারা ভেবেছিলো রাত পোহাবে না আর।
ঋতুর সংকেতে তুমি জেগে উঠেছিলে অসীম সাহসে,
জলোচ্ছ্বাসের তরঙ্গে ভেঙ্গে দিতে শৃঙ্খল বন্ধন।
অমিত সুরের গান গেয়েছিলে তুমি
কালো রাত পোহানোর প্রত্যয়-বন্দরে এসে।
সেই শিউলিশৈশবে তোমাকে দেখেছি আমি;
জনারণ্যে, খুব, খু্বই কাছে থেকে।
কোমল দক্ষিণ হাতে ছুঁয়েছিলে বালক-চিবুক,
গোলাপ পাপড়ি যেনো ঝরেছিলো নন্দন কানন হতে।
বিস্ময় জাগানো সেই অনুভূতি নিয়ে,
আজও তোমাকে দেখি দু'নয়ন বুজে।
উপন্যাসের নায়ক নহ তুমি এই পৃথিবীতে,
অস্তিত্বের অভ্যন্তরে তোমার আবাস;
এই কাদা মাটি জলে নিরন্তর হেঁটে গেছো
মুক্তির মশাল জ্বেলে দুহাতে সরাতে অন্ধকার।
কী উদাত্ত স্বরে ডাক দিয়েছিলে!
তিমির বিনাশী গান বজ্রকণ্ঠে গেয়েছিলে তুমি
সোহরাওয়ারদী উদ্যানের জনসমুদ্রের তীরে
(পুরাতন নাম যার রেসকোর্স মাঠ)।
তারপর, ইতিহাস- রক্ত, যুদ্ধ, মৃত্যু, বর্বরতা,
ধর্ষণ, সন্ত্রাস, গুম...
বেদনার্ত আর্তনাদে অবসন্ন হয়ে
ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো তোমার মন্ত্রের জনতা, তোমারই নামে।
অতঃপর, স্বাধীনতা, প্রিয় স্বাধীনতা।
দুর্বৃত্ত, দাঁতালো বুনো শুয়োরের দল আঘাতে আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত করেছিলো তোমার পবিত্র শরীর,
ক্ষতবিক্ষত করেছিলো শ্যামলীমা দেশ,
তোমার প্রাণের বাংলাদেশ;
তারা অশ্লীল চিৎকারে মেতেছিলো সেই কালরাতে।
তুমি আজ পৃথিবীতে এক ঐশী পুরুষের ন্যায়
বিস্মৃতির প্রান্তর পেরিয়ে উঠে এসো প্রতিবার
বিবিধ নামের অভিধায়-
বঙ্গবন্ধু
জাতির জনক
অথবা রাখাল রাজ।
আজ পৃথিবীর যেখানেই চলে দুর্বৃত্তের আগ্রাসন,
সেখানেই জ্বলে উঠে নাম তোমার, অমিততেজী সংগ্রামীর বুকে।
অরূপ স্রষ্টার সৃষ্টি, অনিন্দ্য সুন্দর মুজিব অশ্লেষ!
মাঝে মাঝে মনে হয় তুমিই তো পুরো বাংলাদেশ।
১০/০২/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।