বন্ধুরা, গত পর্বে ছন্দের কিছু পরিভাষা সম্পর্কের আলোকপাত করেছি। আজ স্বরবৃত্ত ছন্দের একটি ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এ ছন্দ ধারাটা খুবই সহজ। এর সাথে আমাদের গর্ব করার মতো একটি বিষয় লুকিয়ে আছে। কারন, স্বরবৃত্ত ছন্দটা একেবারেই আমাদের নিজস্ব। এ ছন্দ আমাদের লোকজজীবন থেকে উত্থিত। এর সাথে আমাদের লৌকিক চঞ্চলতা মিশে আছে।

স্বরবৃত্ত ছন্দে প্রতিটি অক্ষরকে এক মাত্রা হিসেবে গুণতে হয়। সাধারণত ছড়া লিখতে এ ছন্দ ব্যবহৃত হয়। তাই একে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।

উদাহরণ,

আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা—
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হল ব্যথা ।

আজ+গু+বি+নয়, / আজ+গু+বি+নয়,/ সত+তি+কা+রের /ক+থা
১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১+১
ছা+য়ার+সা+থে / কুস+তি+ক+রে / গাত্+রে+হ+লো / বে+থা ।
১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১+১

আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছের মৌ,
মধ্য রাতে জেগে দেখি ঘরে নেইকো বৌ।

আ+তা+গা+ছে / তো+তা+পা+খি, / ডা+লিম+গা+ছের / মৌ,
১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১
মধ্+ধ+রা+তে / জে+গে+দে+খি / ঘ+রে+নেই+কো / বৌ।
১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১+১+১+১ / ১

এখানে, মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর উভয়ই একমাত্রা বিশিষ্ট। স্বরবৃত্তের পূর্ণ পর্ব চার মাত্রার হয়ে থাকে। প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরটি শ্বাসাঘাত প্রধান অর্থাৎ প্রস্বরিত হয়ে থাকে।

স্বরবৃত্ত ছন্দে একটি শব্দ চার মাত্রা হতে পারে।
যেমন, 'ভালোবাসা' (ভা+লো+বা+সা)।
                          ১+১+১+১  
আবার, দুটি শব্দ দুই মাত্রার করে হতে পারে।
যেমন, 'আছে বলে' (আ+ছে   ব+লে)
                          ১+১     ১+১
এমন কি, একটি শব্দ তিন মাত্রার এবং অন্যটি এক মাত্রার হতে পারে।
যেমন, 'বাঁচিতে  যে' (বাঁ+চি+তে  যে)
                           ১+১+১    ১

ভালোবাসা আছে বলে বাঁচিতে যে চাই,
স্বরবৃত্ত ছন্দ খেলা শিখি আমরা তাই।

ভা+লো+বা+সা / আ+ছে ব+লে / বাঁ+চি+তে যে / চাই,  
          ৪        /      ২   +   ২    /    ৩   +    ১ /  ১
স্ব+র+বৃত্+ত / ছন্+দ  খে+লা / শি+খি আম্+রা / তাই।
      ৪        /      ২   +   ২    /    ২   +    ২ /  ১


স্বরবৃত্ত ছন্দের কিছু উদাহরণ-

১.
মামার বাড়ি/ আর যাবো না/ আর খাবো না/ মামীর গাল,
৪/৪/৪/৩
কথায় কথায়/ আমার পিঠে/ পড়বে না আর/ অমন তাল।
৪/৪/৪/৩

২.
যখন ওরা / অপিশে যায়/ কিংবা চালায়
৪/৪/৪
তুমুল দোকান/দারি
৪/২
তখন আমি/ ঢেউ সাজানো /নদীর বুকে
৪/৪/৪
দিব্যি জমাই/ পাড়ি।
৪/২

(যখন ওরা/শামসুর রাহমান)

মেঘনা নদীর/ শান্ত মেয়ে/ তিতাসে
৪/৪/৩
মেঘের মতো / পাল উড়িয়ে /কী ভাসে!
৪/৪/৩

(ভর দুপুরে/আল মাহমুদ)

বাবুদের/ তাল পুকুরে
৩ (অতিপর্ব) /৪
হাবুদের /ডাল কুকুরে
৩ (অতিপর্ব) /৪
সে কি বাস/ করলে তাড়া
৩ (অতিপর্ব) /৪
বলি থাম/ একটু দাঁড়া।
৩ (অতিপর্ব) /৪

(লিচু চোর/ কাজী নজরুল ইসলাম)
এক পূর্ণ পর্বের ছড়া।


বিঃদ্রঃ  যারা ছন্দ বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্য এ লেখা। যারা আগ্রহী নন, তারা পাশ কেটে যেতে পারেন। আবার, কেউ ইচ্ছে করে, তার নিজের মেধা দিয়ে পোষ্টটিকে সম্মৃদ্ধ করলে আন্তরিক কৃতজ্ঞ থাকবো।