একটি পতাকা জন্ম আমার মায়ের ব্লাউজ থেকে,
সেই পতাকার ঘ্রাণ নিয়ে আজো খুঁজে পাই জননীকে।
পতাকার দিকে তাকাই যখনি অজান্তে চোখ ভিজে,
এ কেমন ব্যথা-বেদনায় ভাসি! বুঝতে পারি না নিজে।
একি দেশপ্রেম? নাকি, ভালোবাসা জন্মধাত্রী প্রতি?
প্রতিদিন আমি ভেবে ভেবে সারা, কেঁদে যাই দিবারাতি।

সেই মার্চের উত্তাল দিনে কবিতা পাঠের শেষে,
স্বপ্নের কথা বিকশিত হলো সমূহ বাংলাদেশে।
পতাকা বানাতে পেয়েছি সবুজ-লাল রঙের কাপড়,
কিন্তু সোনালী কাপড় পাইনি; ভাবছি নিরন্তর।
চিন্তিত দেখে প্রশ্ন করেন জননী আমার, 'খোকা!
বিষন্ন মনে কি এমন তুই ভাবছিস, ওরে বোকা'?
বললাম তারে, 'বাংলাদেশের পতাকা বানাতে হবে,
সোনালী কাপড় কোথাও পাইনি; কিভাবে বানাবো তবে'?
- 'ভাবিসনে তুই'; এই বলে মাতা দিলেন ব্লাউজখানি-
সোনালী রঙের বিয়ের পিরান! এই ছিল তাঁর জানি।
স্মৃতির যতনে পরিপাটি করে রেখেছিলো স্যুটকেসে,
তুলে দিলো সেটা আমার এ হাতে বিমুগ্ধতায় হেসে।

জাদুকরী নেতা রোপন করেন মুক্তির বীজ মনে,
আশার বৃক্ষ তরতর বাড়ে হৃদয়ে সংগোপনে।
চাই স্বাধীনতা, মুক্তির স্বাদ, চাই নিজ অধিকার;
হটাতে হবেই যে কোন প্রকারে দানবীয় দুরাচার।
সংকল্পের দৃঢ় চেতনায় করেছি উচ্চারণ-
মাতা আর দেশ ভিন্ন নয়তো, বুঝেছে আমার মন।
মিটিং-মিছিল অনেক করেছি, পাইনিকো অধিকার;
যত চেয়ে গেছি, তত বেড়ে গেছে তাদের স্বেচ্ছাচার।
বুলেট ছুড়েছে, হত্যা করেছে, নিয়েছে চাষের জমি;
দিনে দিনে বাড়ে তাদের হৃদয়ে পাশব গোয়ার্তুমি।

এবার যুদ্ধ- চোখে চোখ রেখে বলবো প্রাণের কথা,
দুঃশাসনের যাঁতাকলে আর নোয়াবো না নিজ মাথা।
আমাদের আছে শেখ মুজিবর, বাঙালি-রাখাল রাজ,
তার নির্দেশে মুছে দেবো আজ অত্যাচারীর সাজ।
একজোট হলো কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সব;
প্রতিরোধ করো, যে যেভাবে পারো; চারিদিকে উঠে রব।
সাহসিয়া বুকে দীপ্ত চেতনে অস্ত্র তুললো হাতে,
প্রাণ দেয়া-নেয়া উৎসব চলে জীবনের সংঘাতে।
তিরিশ লক্ষ জীবনের দামে কিনে আনি এই দেশ,
সন্তানহারা পিতা-মাতা বলে, 'তবুও, হয়েছে বেশ'!
আড়াই লক্ষ মায়াবী বোনের-মায়ের দীর্ঘশ্বাস,
তার সাথে আছে শত লাঞ্ছনা! এই হলো ইতিহাস।

মায়ের বিয়ের সোনালী ব্লাউজ বাংলাদেশের ছবি,
মুক্তিসেনার রক্তের রঙ- উদিত প্রভাত রবি;
চিরশান্তির সবুজের ধারা বিছিয়েছি পতাকায়,
এখানে লুকিয়ে চির জাগরক আমার দরদী মায়।
এই পতাকাকে লাঞ্ছিত করে যদি কোন দুর্জন,
দৃপ্ত কসম, লড়বো আবার জীবন-মরণ পণ।

হে শিশু, যুবক! যে পতাকা দেখো, ছিলো না একাত্তরে,
বাংলাদেশের মানচিত্রের ছবি ছিল বুক জুড়ে।
রঙ ছিল তার সোনালী বরণ- আনন্দ উল্লাসের,
প্রেরণা যোগানো বিজয়ের কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের।

২৩/০৩/২০২৪
ঢাকা।