আমি রাগারাগি করলে চুপটি করে শুনো,কোন প্রতিউত্তর করো না। বার বার আচলে চোখ মুছে মুছে চোখ লাল করো। গাল ফুলিয়ে ঠিকি রান্না থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ সুন্দর করো,কিন্তু খাবার বেলা আর খাও না ।
এই সময় রাগ ঠান্ডা হবার পর তোমাকে সরি বলে যে সাথে নিয়ে খেতে বসবো বা খেতে বলবো-তা কখনোই বলা বা করা হয় নি। অথচ আমার এমন করা উচিৎ ছিল।
কোথায় বেড়াতে যাওয়ার আগে যখন একা একাই আয়নার সামনে সাজো- তখন কি পরবে, কোন রঙের পরলে আজ বেশি ভালো লাগবে বা বলবো যে এই রং এ তোমাকে মানাচ্ছে না,টিপ না পরে চোখে কাজল পরো তা বলা হয় নি।
কিন্তু মাঝে মাঝে আমার এমনটা বলা উচিত ছিল।
আমার জ্বর-মাথা ব্যাথায় তোমাকে কত আশঙ্কা গ্রস্থ দেখি। কত কিছুভাবে সেবা-যত্ন করার ব্যস্ততা দেখি।
রাত জেগে জল -পট্টি দেবার জন্য শিথানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।চোখে মুখে ভীতি দেখি আমার জন্য অন্যরকম।
অথচ তোমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথার সময় কিংবা প্রচণ্ড জ্বরের সময় মাথায় পানি অথবা তোমার পাশে থেকে তেল বা মালিশ জাতীয় কিছু করবো - কখনোই এমনটা করা হয় নি। অথচ এসময় তোমার জন্য সামন্য কিছু সেবা যত্ন হলেও করা উচিৎ ছিল আমার।
আমার জন্মদিনে কিংবা আমারদের বিবাহ বার্ষিকীতে তোমার সেই কি আয়োজন! কত রকম পরিবেশন ! কত রকম সাজগোজ ! বেলি নয়তো শিউলিফুলের মালা মাথায় দেয়ার মুহূর্ত সব কিছুই যে অপরূপ সুন্দর পরিপাটি থাকে।
তোমাকে দেখার পর -বলবো যে, খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে আজ কিংবা এতো কিছু করার জন্য একটা সৌহার্দ্য পূর্ণ ধন্যবাদ জনাব -তা জানানো বা কখনোই দেয়া হয় নি। একগুচ্ছ গোলাপ -রজনীগন্ধার তোরা হাতে ধরিয়ে বলবো যে ভালোবাসি ভালোবাসি
তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তাও জানানো কখনোই হয় নি। অথচ এই বিশেষ দিনটি গুলিতে অবশ্যই আমার এসব বলা-করা উচিৎ ছিল।
এরপর তুমি একেবারেই চলে যাবার পর একদিন তোমার ডাইরি খুলে দেখলাম- আমার বাবা হবার আনন্দ দেখে তুমি তোমার সমস্ত প্রসব বেদনা ভুলে গিয়েছো সেদিন 'ই।
আমার সন্তানের মা হতে পারে মমতাময়ী মাতৃত্বের স্বাদ পেয়ে তুমি নাকি ধন্য ।
কিন্তু তোমার এই মাতৃকালীন সময়ে তোমার পাশে তো ঠিক কোনোদিন থাকিনি আমি। নিয়মিত চেকআপ কিংবা ভালোমন্দ কিছুই কখনো জানতে চাই নি।
পরে বুঝতে পেরেছি আমাকে ভালোবেসেছো খুব। যত্ন নিয়েছ অনেক। তুমি আমার সন্তান কে পেটে ধারণ করেছ। অথচ তোমাকে আমি আমার হৃদয় সিংহাসনে বসাতে পারি নি তখন। কিন্তু ঐ সময় তোমার প্রতি খুব কেয়ার, যত্নশীল এবং হৃদয় সিংহাসনে বসা হওয়া উচিৎ ছিল আমার।