এক উদ্বিগ্ন মহাজনের অবিরাম নিস্পেশনে ঘড়
ছাড়া হয়েছিল জগদিশ।জগদিশ আমার বন্ধু,ছন্নছাড়া,
বাউন্ডেলে।আমি যতবারই ওর বাড়ীতে গিয়েছি,প্রাচুর্য
নয়, দেখেছি নিত্য টানাটানি আর অভাবের সংসার।
যদিও দরজা দিয়ে অভাবের দৈত্য দেখিয়েছিল দাঁত,
নিপাট ভালোবাসা তখন ঠায় বসে ছিল ঘরে।ও ঘরে
জানালা ছিল দুটো উত্তরে আর পশ্চিমে,খোলা পেয়েও
পালায়নি,যদিও প্রবাদ প্রতিম সেই ভালোবাসা।
কি নাম দেব সেই ভালবাসার?
অনুচ্চারিত থাক এই লগ্নে,এখন জগদিশ ঘড় ছাড়া,
আপাতত সেই ইতিহাস বর্ণীত হোক তবে।
আগেই বলেছি জগদিশ আমার বন্ধু।তার একটা নিজস্ব
জীবনাদর্শ ছিল।যদিও কোন কালেই সে সেটা আমাকে
বলেনি,অনুমিত সত্যের মতোই সেটা একেকজনের কাছে
একেকরকম।
জীবনাদর্শ থাক।
এক সন্ধে বেলায় জগদিশ ঘড় ছেড়েছিল।একাই ছেড়েছিল সে,
পেছনে পড়েছিল তার স্ত্রী, দু সন্তান।আমি খবর পেয়েছিলাম পরে,
ততক্ষনে সে চলে গিয়েছিলো বেশ খানিক টা পথ।আমি উদ্ভ্রান্তের
মতো ছুটতে লাগলাম, সারা পথ জুড়ে অসংখ্য মানুষ হরি বল ধ্বনিতে
আকাশ কাপিয়ে ছুটে চলেছে।সেই স্রোত পাড়ি দিয়ে আমি জগদিশের
কাছে পৌছাতে পারিনি।ফিরে এসেছিলাম সেখানে যেখানে জগদিশের
নিত্য বসবাস ছিল।ওখানে আসন গেরে বসে ছিল ক্ষুধা,দেখেছিলাম
জগদিশের স্ত্রী সন্তানের ভীত চোখে আসন্ন দিনের ভয়াবহ চেহারা।
মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত জীবনে আমি এখন ঘোরতর বাস্তব বাদি।
আমার বাসায় দু দুটো কাজের মানুষ,ভালো মাইনে,খাওয়া দাওয়া
ফ্রি।বয়স অল্প, আন্দাজ বার থেকে চোদ্দ,কাজেও ভালো।ওদের মা
হারিয়ে গেছে কোথাও।মাঝে মাঝে আমার ছেলেদের বই পত্র লুকিয়ে
পড়ে।সারাদিন বাইরের কাজের চাপে স্ত্রী আমার সংসারে সময় দিতে
পারেন না। কাজের লোক দুটো না থাকলে বেশ অসুবিধেই হতো।
আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে আমাকে খুব বাহবা দেন,এই বাজারে দুজন
কাজের লোক জোগার করতে পেরেছি বলে,জগদিশ কি বলছে কে জানে।