আজ বেশ ক’দিন ধরেই মনটা খুব খারাপ যাচ্ছিলো, যদিও দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো স্বাভাবিক ভাবেই করে যাচ্ছিলাম। কিছুদিন আগে সিএমএইচে গিয়ে কিছু প্রিয় মুখকে শয্যাশায়ী দেখে ব্যথিত হৃদয়ে ফিরে এসেছিলাম। যাকে সবসময় উচ্ছ্বল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর দেখে এসেছি চিরকাল, সে আজ অক্সিজেন নির্ভর। প্রকৃ্তির অফুরন্ত দান বাতাসের অক্সিজেন তার ফুসফুস আপন শক্তিতে টেনে নিতে পারেনা। এটা কোন মরণ ব্যাধি নয়, তবে রোগীকে শয্যায় আটকে রাখে, মুক্ত পাখির পায়ে পিঞ্জর পড়ালে যেমন হয়। সে সব জানে, সব বুঝে, সবকিছুতে আগের মত উচ্ছ্বাস এখনো আছে, কিন্তু আগের মত আর চঞ্চলতা নেই। নাকে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক, কয়েক মিনিটের বেশী সেটাকে আলাদা করা যায় না। আরেকজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত চার বছর ধরে বাকশক্তিহীন, চলৎশক্তিহীন অবস্থায় হাসপাতাল শয্যায় থিতু হয়ে আছে, তার কাছে আজ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ অর্থহীন। সেও সব জানে, সব বুঝে, কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা। তার জীবনটা আজ পুরোপুরি অন্যের সাহায্য নির্ভর। মুখে খেতে পারেনা, নল দিয়ে খেতে হয়।

এমতাবস্থায় গতকাল খবর পেলাম, মেজর আক্তার (অবঃ), বীর প্রতীক, ইন্তেকাল করেছেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতোভয় সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন, অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এবং সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। আজ সকালে খবর পেলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ আমীরুল করীম (অবঃ) ইন্তেকাল করেছেন। তিনিও একজন অত্যন্ত ভদ্র, অমায়িক এবং উচ্চ নৈতিকতার মানুষ ছিলেন। এসব বিয়োগাত্মক অনুভূতিতে মনটা ভালো করার জন্য সকালে কিছু কবিতার ঝাঁপি খুলে বসলাম। অন লাইনে আমার একজন প্রিয় কবি Lora Colon এর কবিতার পেইজ খুলতেই কাকতালীয়ভাবে প্রথম যে কবিতাটাতে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো, সেটাও মৃত্যু চিন্তা সম্পর্কিত। মনে মনে ভাবলাম, কবি আমার মনের অবস্থাটা টের পেলেন কী করে? কবিতার সাথে চমৎকার সাযুজ্যপূর্ণ শিরোনামে লেখা এ কবিতাটা পাঠকদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে হলো। কবির সম্মতিক্রমে এর আগে তার কিছু কবিতার অনুবাদ আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তাঁর যেকোন কবিতা অনুবাদের অনুমতি দিয়ে রেখেছেন। সেই সূত্র ধরে তার এ সুন্দর কবিতাটিও অনুবাদের চেষ্টা করলাম। ধৃষ্টতা মার্জনীয়।

ঢাকা
২৩ মার্চ ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

দ্রষ্টব্যঃ কবিতাটির অনুবাদ আজকের (২৭-৩-১৬) কবিতার আসরে প্রকাশিত হলো।