আজ কবিতার আসরে কবি আসোয়াদ লোদি রচিত 'কবি' কবিতাটা পড়ে ব্রিটিশ কবি বেঞ্জামিন জেফানিয়া সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মালো। ইন্টারনেট ঘেঁটে তার সম্বন্ধে কিছু চমকপ্রদ তথ্য জানতে পারলাম, যা পাঠকদের সাথে এখানে শেয়ার করছি।
বেঞ্জামিন ওবাদিয়া ইকবাল যেফানিয়া ১৫ এপ্রিল ১৯৫৮ তারিখে জ্যামাইকার বার্মিংহাম এর হ্যান্ড্সওয়ার্থ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বারবাডস এর অধিবাসী তার পিতা একজন ডাকপিয়ন এবং জ্যামাইকার অধিবাসী তার মাতা পেশায় একজন নার্স ছিলেন। শৈশবে তিনি dyslexia (শব্দান্ধতা; পড়তে বা লিখতে অক্ষমতা বা বিশেষ অসুবিধা, কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিমত্তা অক্ষত থাকা) রোগে ভুগেছিলেন। তিনি একটি বিশেষ অনুমোদিত স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু ১৩ বছর বয়সে কোনকিছু লিখা বা পড়ার অক্ষমতা নিয়েই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এরপর তিনি মুখে মুখে কবিতা রচনা শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার কবিতা সমূহ হ্যান্ড্সওয়ার্থ এর আফ্রো-এশীয়-ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের মাঝে পরিচিতি লাভ করে। এ সময় তিনি ডানপিটে বলে চিহ্নিত হন এবং ছিঁচকে চুরির অপরাধে কিছুদিন কারাদন্ড ভোগ করেন। কালো কবির কবিতা শুধু কালোরাই পড়ছে, এ সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করে তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন এবং ২২ বছর বয়সে বৃহত্তর ও বিদগ্ধ পাঠক-শ্রোতা অর্জনের আশায় লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এ সময় তিনি স্ট্রাটফোর্ড, লন্ডন এর সমবায় শ্রমিকদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮০ সালে Page One Books কর্তৃক প্রকাশিত তার প্রথম বই Pen Rhythm আত্মপ্রকাশ করে, যার তিনটি সংস্করণ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে তার দ্বিতীয় বই Dread Affair: Collected Poems প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি ব্রিটিশ আইন ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন। প্যালেস্টাইনের ইসরায়েল কর্তৃক অধিকৃত এলাকাসমূহ সফর শেষে তিনি ১৯৯০ সালে তার তৃ্তীয় কাব্যগ্রন্থ Rasta Time in Palestine প্রকাশ করেন।
নেলসন ম্যান্ডেলার উপর রচিত তার একটি গান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ কারণে তাকে কারাবাসী ম্যান্ডেলার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। পরে প্রেসিডেন্ট হবার পর ম্যান্ডেলা ১৯৯৬ সালে রয়াল এ্যালবার্ট হলে তাকে তার Two Nations Concert উপস্থাপনার দায়িত্ব দেন।
শিশুদের জন্য কবিতার বই Talking Turkeys লিখে তিনি খুব দ্রুত শিশু সাহিত্যে তার নাম লিখতে সফল হন। মাত্র ছয় সপ্তাহে বইটি নিঃশেষিত হয়ে গেলে জরুরী ভিত্তিতে পুনর্মুদ্রণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে তার লেখা কিশোরদের জন্য উপন্যাস Face অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। এর পরে তিনি আরও তিনটি উপন্যাস রচনা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব লন্ডনে বসবাস করলেও ২০০৮ সালের পর থেকে তিনি সময় ভাগ করে বেইজিং এবং Lincolnshire এ অবস্থিত Spalding শহরে বসবাস করেন। এর মাঝে তিনি ৫ বছর ইন্দোনেশিয়াতেও ছিলেন। তার স্ত্রী আমিনা একজন নাট্য প্রশাসক ছিলেন। ১২ বছর তার সাথে ঘর করার পর ২০০১ সালে তিনি তাকে ছেড়ে চলে যান। ২০০৩ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকায় তিনি লিখেন যে তিনি ব্রিটিশ রাণী এলিযাবেথ এর দেয়া OBE খেতাবটি প্রত্যাখ্যান করেছেন কারণ তা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল কিভাবে তার পিতৃ্পুরুষেরা ব্রিটিশদের নৃ্শংসতার শিকার হয়েছিলো। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে রুপান্তরের একজন প্রথম সারির প্রবক্তা।
বেঞ্জামিন যেফানিয়া BBC Young Playwright's Award অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি নিম্নলিখিত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ থেকে অনারারী ডক্টরেট দিগ্রী লাভ করেনঃ
১৯৯৮ সালে University of North London থেকে।
১৯৯৯ সালে University of Central England থেকে।
২০০২ সালে Staffordshire University থেকে।
২০০৩ সালে London South Bank University থেকে।
২০০৬ সালে University of Exeter and the University of Westminster থেকে।
২০০৮ সালে University of Birmingham থেকে।
এ ছাড়া The Times' list of 50 greatest postwar writers এর তালিকায় তার নাম ৪৮ নম্বরে স্থান পায়। Original Music এর উপর তার বেশ কয়েকটি এলবাম রয়েছে। ২০০৮ সালে তিনি Best Original Song in the Hancocks পুরস্কার লাভ করেন, যা তিনি ০২ আগস্ট ২০০৮ তারিখে সরাসরি সম্প্রচারিত The Cambridge Folk Festival এ সশরীরে উপস্থিত হয়ে গ্রহণ করেন।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট