চারতলার চারশ’ চৌদ্দ-
এ সংখ্যাটি শোনার পর থেকেই মনে রেখেছিলাম।
ঠিক মুখস্থ করে নয়,
এমন একটা কাব্যিক সংখ্যাকে মুখস্থ করতে হয়না!
বদ্ধ দরজায় মৃদু করাঘাত, কোন সাড়া নেই।
তাই অস্বচ্ছ কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা,
দেখলাম তুমি বিশাল বপু নিয়ে চেয়ারে বসে
প্রার্থনায় রত, একান্তে।
একটু ঘুরে ফিরে আবার এলাম,
ইচ্ছে হলো না, দেখা না করে চলে যেতে।
আজকাল প্রায়ই মনে হয়, যে কোন দেখাই
শেষ দেখা হয়ে যেতে পারে। এমনই হচ্ছে।
তাই তোমার নামায শেষ হলে কক্ষে ঢুকে গেলাম।
জানতাম, তোমার দৃষ্টিশক্তি আজ কপোতাক্ষ নদ,
তুমি মানুষ চেনো কন্ঠস্বরে। আমার কন্ঠস্বর
তোমার অপরিচিত, তাই নাম বলে ফেললাম।
“তোমার লেখালেখি এখন কেমন চলছে?”-
সরাসরি এ প্রশ্ন খানিকটা চমকে দিলো, কারণ
আমার লেখার খবর তোমার জানার কথা নয়।
আরো অবাক হলাম যখন বললে-
“শুধু কবিতাই নয়, তুমি গদ্যও ভালো লেখো”।
পৃথিবীর কত অকিঞ্চিৎকর খবরও তুমি রাখো!
তুমি নিজের মুখেই জানালে-
জীবনের শেষ প্রান্তে এখন তুমি দাঁড়িয়ে।
শুধু মস্তিষ্কটুকুই ঠিকমত এখনো কাজ করে চলেছে
দেহযন্ত্রের বাদবাকি অংশ ধীরে ধীরে ছেড়ে দিচ্ছে-
চারশ’ চৌদ্দ’র এ প্রকোষ্ঠই তোমার জগত সংসার,
শয্যাপাশে গুছিয়ে রাখা বইগুলো তোমার নিত্যসঙ্গী।
তুমি জানালে, জীবনের কোন কিছুতেই আজ তোমার
কোন আগ্রহ নেই, শুধু একটি বিষয় ছাড়া-
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এই একটি প্রসঙ্গেই তোমার
নীলাভ দৃষ্টি দপ করে জ্বলে ওঠে হয় স্বর্ণালী দীপশিখা।
এ ছাড়া তোমার আর কোন আগ্রহ নেই, নেই দেশের
ছন্নছাড়া রাজনীতিতে কিংবা সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে।
মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে গিয়েছিলে মুক্তিযুদ্ধে,
আজ মধ্য ষাটে এসেও সেসব ঘটনা তুমি অবলীলায়
শৈশবে মুখস্থ করা নামতার মত বলে যেতে পারো।
অথচ সকালে কী খেয়েছো, তা তোমার মনে থাকেনা।
তোমার সকল চিন্তা চেতনায় ঘুরে ফিরে একটাই প্রসঙ্গ-
বিশুদ্ধ সে প্রসঙ্গের অসফল স্বপ্ন তোমাকে কেবলই কাঁদায়!
উৎসর্গঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া (অবঃ)কে, যিনি এখন অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে শয্যাশায়ী আছেন। আমি তাঁর জন্য সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।
ঢাকা
১৮ এপ্রিল ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।