কবিরাণী
এখান থেকেই শুরু হলো তবে, যেখানে পৃথিবী ঘুমে সেখানে একমাত্র আমি জাগি ভাবনার রাত পোহাতে। অবেলায় মুছে যাক স্মৃতিময় পাতায় লিখে রাখা কিছু নগ্ন কাব্য-
এখন জীবনে কবিতা হোক তাই
তোমাকে গ্রহণ করেছি মেঘলাল আকাশের এক টুকরো অস্তিত্বে, শর্তে বাঁধা বিকেলের সমধুর অহংকার মাড়িয়ে তুমি সুর হয়েছো বাতাসের চৈতন্যে। প্রবল তৃষ্ণাতুর রাতের বিবর্ণতা গুছাতে মেঘমালা তোমাকে দিলাম পতন ফেরানোর অশেষ কাব্য! যাঁর মর্মে গাঁথা শব্দের উচ্ছাস ; কালের ভরাডুবি সময়ে কবিতা তুমি পাঠ করো আমাকে, তুলির আঁচরে শব্দের ক্ষয়ে যাওয়া অংশ পূর্ণ করার অপেক্ষায়
কবিরাণী- তুমিও লিখে দিও জীবনের শিরোনাম!
তবুও মনে রেখো,
ভোররাতে এখনো কবিদের মতো জেগে উঠে কাক
ওযুতে পবিত্র হয়ে খোলে দিও আসমানি কিতাবের জানালা, নামাজে জীবনকে মুখস্ত করে যেও তোমার পাঠের সুবর্ণ হরফের সূরায়!
দিনের সমস্ত আরাধনা মিশে থাকুক তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মনে মনে বেজে যাক সুখ সুরের অবিনাশী গান,
তুমি প্রবাহমান শব্দের নদী,
যাঁর ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে পাঠ হয় সুমিষ্ট প্রেমের আয়াত;
অদৃশ্য বাতাসের অভিযোগ কাঁধে
তুমি, মুক্তি দিও বিকেলের হিমেশ্রী ফুলের ঘ্রাণ!
তোমার প্রকৃতির নন্দিত শরীরে গেঁথে যাবো একদিন অনুভূতির নূতন মনের প্রেম। না ছোঁয়া স্বপ্নের অপূর্ব অপলক চিত্র রেখে দিও তোমার আজন্ম উপহার একটি জীবন জয়ের উল্লাসে।
তোমার জন্য কেমন করে বেঁচে আছি সংক্রমণ আঁকড়ে ধরে , বুঝি তখন সময় যখন তোমার ভাবনায় হাসিয়ে যায় এক ঠোঁট!,ভাবতে ভাবতে স্বপ্ন, তারপর ফেরা!
তোমার চোখ; কি দারুণ!
না দেখলে বলা যায়না বুঝি?
আমি কেনো বলতে পারি তুমি সুন্দর?
আমি প্রেমিক? যদি তাই মনে হয়; তবে দেখে নিও শরতের যোগাসনরত বৃষ্টির ঝরে যাওয়া!
তুমি চাপা কান্না কাঁদো, আমি হাসির আড়ালে চোখ বুঝাই - এটা এক নয় কবিরাণী?
কবিতার চোখে কাজল পরিয়ে তোমাকে উজ্জ্বল করি।
ভাবনার তীব্র সময় গুলো অবলীলায় হারিয়ে গেলো এবেলা! সঞ্চিত প্রাণটি উড়ে গেলো হঠাৎ; তবুও বুকের ওম কমেনা! সামনের নির্জন রাস্তার শেষ মাথায় সূর্য নেমে গেলে,রাত গভীর হয়ে যায়, ভেসে উঠে শিরোনামের আধো মুখখানি।
ঝিঁঝিঁ পোকার কান্নাও থামাতে পারেনি আঁধার, ইতিময় জীবন সেখানে আমি আবার দণ্ডিত হবো ইচ্ছের দণ্ডে। জীবনের যতো তপস্যা ততোই অন্ধকার,জীবনের যজ্ঞ মহাযজ্ঞ তো শুধু রহস্য!
ইচ্ছে ধারী আমি তবুও ডুবে যেতে চাই কঠিন অনুধ্যান খণ্ডে।
তাই তোমাকে দিলাম, মেঘডাকা পাখির কলতানে ঐশ্বর্যময় সকাল ; পারবে কবিরাণী নীলকণ্ঠক পাখির গান থামিয়ে দিতে? শ্বাসের প্রতিকূলে শ্বাস ফেলতে?
তুমিই জাগিয়ে রাখতে পারো অনুরূপ আচরণ,
সমুদ্রের দুই তরঙ্গের মতো যখন দেখা হবে বাতাস ঢেউয়ে তখন তুমিই বলবে, অপূর্ণ অনুরাগ মাতিয়ে গেলো যৌবন!
তুমি তো মেঘন্তরে মেলেছো আকাশের নীল আঁচল, দেখিয়েছো রঙধনু। তবুও তোমার অগোছালো টেবিলে আনমনে ভরে উঠা আবদ্ধ ডাইরী খোলে দিও মুহূর্তের নিদ্রিত হাতের ছোঁয়ায়, যেখানে লিখে দিতে পারি পরাজিত বুকের নিত্য ছড়া আর একমাত্র আগলে রাখা অহংকার!
তোমাকে দিলাম কথায় বাঁধা নীল খামের পদ্য ; ঝরে যাওয়া পাতার মতো যদি তুমিও যাও ঝরে;
এ হারিয়ে যাওয়া দিন তবুও অাশ্রয় খুঁজে ফাগুনের শাখায় শাখায়,
সবুজে হলুদ ব্যধির সর্বগ্রাসী ক্ষুধা যৌবনের টগবগে সুধাসিন্ধু গ্রাস করে । এতো ছলনা জেনেও অামরা প্রাণে মরি প্রাণের দাবিতে! তবুও কি নিয়তি - আমাদের প্রেমেই বাঁচতে হয় সুখ দুঃখের মিলনে।
নিমজ্জিতা রাত এ যদি না যেতো চলে!
তবে কেনো এ চলে যাওয়া?
উষার আলো ঐ যে ডাকে অদূর গগনের তপ্ত খরার খোরাকী,
কোন বুঝে বলো বেঁধে রাখি মনের পাখি,
ভাবনার সুখপদ্য চোখের স্বপ্ন মিলে একাকার বসন্তের রাধাচূড়া কবিতা আমার। মুক্তি তোমার উজ্জ্বল এক তারের তারায়,
আমার মুক্তির এক স্বাধীন পরম মৃত্যুর মতো, তবুও এসো ভাবনার বিকেলে মিলিত হই, প্রজাপতি রঙ মেখে উড়ে যাই মন থেকে মনে। এভাবে থাকতে নেই চলমান সময়ের অস্থিরতায়; হাতের তালুয় অংকিত বিন্দুর সীমান্ত ছুঁয়ে নাড়িয়ে দিও কবিরাণী, তোমার ইচ্ছাময় দিনের পড়ন্ত অভিলাষ!
স্বপ্ন গুলো হৃদয়ে চাপা দিয়ে তবুও বলি যতো গোপন হাসি কান্নার সুনির্মল গল্পগুচ্ছ।
হিসেবের যতো অভিলাষী মুহূর্ত হৃদয় খুরে খুরে হয়েছে ক্ষত,
যে যায় চলে থাকার কালে তারই কিবা দোষ থাকতে পারে সুখ দুখের প্রতিযোগিতার নির্মম সময়ে, ভুলের মৃত অস্তিত্বে ফেলে রাখা দ্বিখণ্ডিত মন খুন হবার অপরাধী তবুও তাঁর ক্ষমা আছে,
আমি তো দণ্ডিত আজন্ম পাপে ইচ্ছের মণিকোঠা! ইচ্ছে এখন বন্দি করে তোমার ঝাউবনের ছায়ায় আর নারিকেল ডানায়।
হয়তো কখনো তারও বাঁধ ভেঙে উড়ে যাবো তোমার নিরব আকাশের সহচরী।
তুমি শুধু পাঠই করো অভিলাষের আহত চিৎকারে মুছে যাওয়া কবির গ্লানি।
একটা কবিতা যখন জীবনের গল্প তৈরী করে আমি চাইতেই পারি একটা মুহূর্ত, অনুরাগী কবি তো কবিতার বৈরাগী! আনমনে কখন কলমের নিপুণ চুম্বন দাগ এঁকে যায় ছুঁয়ে যাওয়া চাঁদরে এলোকেশীর একলা পরে থাকা চুলের গল্পে, ডায়রীর সাজানো বিছানায় ভরিয়ে তোলে ফুলের পরাগ মাখা শব্দে, নিঃশব্দ বসন্তের রঙ উড়ে যায় আকাশী জানালায় পুরনো হলুদ খামের প্রেম, জানার মতো যা সেটা কবিতার অঘ্রাণে মাতোয়ারা সময়ের অপেক্ষা! এ রাত এখন কাঁদাতে জানে ফাগুণের জ্যোৎস্নার ফুল, তবুও যেনো আলো ;কালো না হয় নিঃশব্দের বেড়াজালে! "আমার লেখার অতল খোঁজনা তুমি, কেবল পাঠ করে যেও খুশি করার ছলে। আমার শত কষ্টে হাততালি দিও", কৃপা করোনা শুধু কবি বলে! সুতিব্রো সময়ের অভিযোগ কাঁধে ; তবুও নিংড়ে দিতে এসো গুছানো অহংকারে কবিতার মাঠে!
চৈত্রের হলুদ মাঠ পেরিয়ে নীল মন আশ্রয় খোঁজে প্রিয়ংবদা তোমার আগমনী কথার পাটিতে, সুপ্ত দোদুল্যমান চোখের পাতায় অধীত আমার অনুক্ত অভিলাষ!
বীতস্পৃহ আমি উপ্ত হয়ে আছি অদম্য মাটির মমতায়, যেখানে আমি তোমাকেই জানি মর্মস্পর্শী অকথ্য ভালোবাসায়!বাহারি উপমায় ভরপুর, যাঁর ছবি দিনমান প্রকৃতির অবয়বে, ব্যথার উপর পাথর চাপা বুকে তুমি এক স্বপ্নচারিতা, ভাবনায় তুমি অলকমুখী
এক সম্ভাবনার নিভৃত অলীক।
আপন সাগরে ডুব দিয়ে যাঁর কথা ভাবি আকাশী পাতার আল্পনায়, একমাত্র তোমারই সোনালী আভায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে আমার প্রকৃতির জাহান।অপূর্ণ ভ্রূণ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া সুখ;যেখানে সমস্ত স্বপ্নেরা বাসা বাঁধে।
সমস্ত পৃথিবীর আয়োজনে যতো প্রার্থনা, কেবলই তোমার মাঝে!
অপূর্ণ তোমাকেই মনে করি
যেখানে আমরা সবাই অজানা অতিথি,
তবুও পরম পাওয়া সুখ নামে তোমাকে।
অতিথিশালায় তুমি অজানা বলেই পূর্ণতা নেই তোমায় ভুলে বেঁচে থাকার!
কবিরাণী - তুমি ভালো তাই সকল ভালোয় সুখ।
তুমি জানো এ কোন গল্প শুরু হলো!
ভোরবেলায় আনন্দময়ী জানালায় উড়ে আসা কথার প্রজাপতি; কলসমুখী চাঁদের মুকুট পরিয়ে যায় আমার জীমৃত কর্ণান্তরের মাথায়।
দিনের সারা বেলার পাতায় ঘোর ধ্যানে বসে থাকি সীমন্তনী তোমার আদিত্য আকাশের নীল হতে।
বসন্তদূতী হয়ে মন ভরালে গানে, অভীক শ্লোগানে ফুল ফুটালে হিরণ্য নিশীথিনী ভালোবাসার লহরে!..
একদানি বিচ্ছেদের ধূসর রঙ আড়াল করে রাখবে মন খারাপ গাছের পাতার মতো একা ঝুলে থাকার আহত চিৎকার।
ক্লান্তির অবশেষে মেঘের বেলা ফুরোবে নিমজ্জিত একটি গল্পের দাগে, যেখানে মোহময় পৃথিবী নয়;একটা মোহময় স্বপ্নের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে অবগাহন করছি দীর্ঘল রাতের শিশির জলে; একটি ফুল আর না ছোঁয়া আঁচলের ভাঁজে। আমার সুখের পায়রা গুলো উড়ে যাক তোমার চোখের এক পৃথিবীর কোণে, তোমার সাজানো পৃথিবীর অজানা ক্ষতয় চেয়ে নিও একটু আলোক রাশি।
গুছানো অন্ধকার কখনো এ ধারা পাল্টাবার নয়, এ জীবন, পথ ; আমরা কখনো মোমবাতির উজ্জ্বল শিখায় জ্বলে উঠি আবার গলে গলে দাগ হয়ে ছুঁয়ে থাকি পাথরের সীমানা। অপ্রকাশিত হৃদয়ের যতো গোপন হাসি সেটার শেষ কোথায় এ বেলার রহস্যঘন পথে হেঁটে যাবার তীব্র ইচ্ছায়, এ জীবনের জল একরাশ স্বপ্ন ভাঙার স্রোত, যেখানে কোনো কারো পতন ফেরানো দায়, তবুও এ পৃথিবী আমার নয়, আমি পৃথিবীর কেউ নয়; আমরা আমাদের জন্য কেনো বাঁচি? এ চাঁদ তোমার ইচ্ছাময় পৃথিবীর ; সবটুকু আঁধার অধরি হৃৎপিণ্ডে সাজানো সমস্ত গোপন অভিলাষে।
যোশেফ হাবিবের -" কবিরাণী"