সত্যদা, কেমন আছো তুমি?তুমি কেমন আছো- সে কথা আমার জানা হয়ে যায়।
তোমার সঙ্গে যোগাযোগ আছে মনিষার, আমারও ওর সঙ্গে আছে যোগাযোগ। বৌদি বিনি আর মান্তুকে নিয়ে তোমার সুখদ ব্যস্ততা ১০ টা ৫ টা অফিস পৌষ পার্বণ উৎসব মুখর সন্ধ্যাচার সম্বৎসর হাওয়া বদল আর যা কিছু প্রথানুগ- কেটে যাচ্ছে যাপিত জীবন। এর মাঝখানেও কোথাও একটা অদ্ভুত শূন্যতা তোমার বুকের মধ্যে জেগে থাকে গুপ্ত ঘাতকের মতো সহস্র নীরবতা নিয়ে।এসব কিছু আমার জানা হয়ে যায় মনিষার কাছেই।জানি- তোমার এই শূন্যতার জন্য যে মেয়েটি দায়ী সে আর কেউ নয়, সে হলো আমি।কী করবো বলো- তোমার আর বৌদির মাঝখানে কোথাও একটা কিন্তু’র
সাময়িক নড়বড়ে ভূমিকায় তৈরি হলো যে-স্পেস, সেখানে আমি আগন্তুকের মতো গেঁথে গেলাম- নিয়তিবিদ্ধ হয়ে – এরকম হওয়াই হয়তো স্বাভাবিক। তারপর যা হবার হলো তাই।তোমাদের ঝামেলা চুকেবুকে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো।তখন আমি নিশ্চয়ই ভীষণ বেমানান আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের মতন খুব অপাংক্তেয় কেউ।বরং নিজেকেই আমার খুব দায়ী মনে হলো।অথচ তুমি আমাকে কখনোই দায়ী করো নি।সমস্ত দায় তুমি নিজের কাঁধেই নিয়েছিলে আর সমস্ত অপরাধবোধ।সত্যদা, আমি হয়তো অতোটা বুদ্ধিমতি নই কিন্তু এটুকু বুঝতে পারি – উদ্ভুত পরিস্থিতির কাছে তুমি ছিলে অসম্ভব অসহায় ঠিক যেনো পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরের মতো।জানি- এসব ভেবে এখনো তুমি প্রায়শ নিদ্রাহীন রাত্রি কাটিয়ে দাও ঘুমন্ত বৌদির পাশে নিঃসঙ্গ জানালার মতো।থাক না ওসব।এরচে’ বরং সেই সরল বাক্যটি মেনে নাও- ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।
তবে আজ মনিষার কাছে একটি কথা শুনে আমার ভালোই লাগছে। মনিষা বলছিলো- তুমি আমার আর তোমাদের জামাইবাবুর সাম্প্রতিক একটি ফটোগ্রাফ দেখে বলেছো- আমি আমার বরকে নিয়ে খুব সুখে আছি।ফটোগ্রাফে নাকি স্পষ্ট ভেসে উঠেছে আমার উপচে পড়া সুখ।নিজেকে তুমি নাকি ক্ষমা করতে পেরেছো কিছুটা হলেও, কিছুটা হলেও তোমার কেটে গেছে অপরাধবোধ।
আমি সুখী হই বা না হই, তুমি যে হালকা বোধ করছো- এটা আমার অনেক বেশি পাওয়া, যা পেলে মনে হয়- পাওয়ার খুব কিছু তো বাকী নেই আর।
ছবির হাসি আর মুখের হাসি কখনো এক নয় – এ কথা, সত্যদা, আমি তোমার কাছে পোঁছে যেতে দেবো না কোনোদিন কেননা পৌঁছে গেলে ঘুমন্ত বৌদির পাশে তোমার রাত্রিগুলো থেকে যাবে নির্ঘুম আর দুঃস্বপ্নময়।তারচে’ বরং এই ভালো – ছবির অই কৃত্রিম হাসিটুকু অকৃত্রিম ভেবে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো খুব কল্পিত সান্ত্বনা নিয়ে।আমি না হয় তোমার কাছে থেকে গেলাম সত্যদাহীন সুখের এক মিথ্যে ছবি হয়ে!