হাতে ভিক্ষার থালা
নরবরে দেহ, লাঠিটাই সম্বল
চোখে জল করে ছল ছল
দাঁড়াতে গিয়ে হুমরি খেয়ে পড়ে মাটিতে
বলহীন কণ্ঠে আর্তনাদ "মারে দুইটা ট্যাহা দে... "
ক্ষুধার্ত দেহে ধরেছে অম্বল।
আমি এক অভাগা নারী, এই বুঝি যাই দেহ ছাড়ি
মানবিকতার দোহাই ধরলাম জরিয়ে
প্রেমহীন শুষ্ক কণ্ঠে বাজাই কর্কশ ধ্বনি
"মারে তুই আর ভিক্ষা করিস না
তোর বিশ্রামের প্রয়োজন। যা ঘরে যা..."
মনে মনে ভাবে হয়তো ভিখারিনী,
শুকনো চিড়ে ভেজে কি লালাক্ষরণে ?
জীবনের থেকে বেশি সুখ হয়তো মরণে..
সবায় চিত্র পেল, সেলফি হল লাখে লাখে
খেতাব পেলাম "মানব দরদী মা জননী বলে "
হায়রে কৃত্রিম সুখ, হাইরে পাথুরে মন
এ কেমনে পার সইতে?
ভেতরের মন কাঁদে?
না.. জীবনটাই এমন যত সুখ বাহিরে! চাকচিক্যে
মিথ্যা মেকাপের ছড়াছড়ি। মুখোশেরা খায় গড়াগড়ি।
আমি মাতি সুখে ফেইসবুকে লাইক ষ্টেটাস লুটে,
শত শত বৃদ্ধাঙ্গুলী আসে ছুটে।
আমি আছি মহাসুখে,
কৃত্রিমতার মুখোশ পোশাকে ।
জীবন তো এমনই হয় যত সুখ বাহারি পোশাকে
দামি গাড়ি, বিলাসী মহলে। মদের বারে, নৃত্য আসরে। নয়তো রেষ্টুরেন্টে পিজজার কামুড়ে, রসনার তৃপ্ত ঢেকুরে।
মন সুখে দিই ঘুম " ঘুম ভাঙ্গে নিজের চিত্কারে,
সেই বৃদ্ধা নিজের শীর্ণ আঙ্গুলী ঠেলে দেয় লাইক সেই ছবিতে। তারপর মিশে যায় মাটিতে।
হাহাকারী মন খুঁজে ফিরি তারে রাত দিন ভিতর বাহিরে। হায়রে আমি নিষ্ঠুর অমানবিক, দেইনি তারে দুটো টাকা বিবেক যন্ত্রণায় আজ মন করে খাঁ খাঁ। কাতরায় অলিতে গলিতে যদি মেলে একবার
সেই অর্ধ মৃতা ভিক্ষারীনি।
দেব পোশাক পরিয়ে আমার আছে যত
খাওয়াব তারে প্রাণ ভরে সে আজ চাই তত।
মুখ পোড়া মন আমার খুঁজি তারে হন্যে হয়ে
মেলে না দেখা তার কোন কূলে।
চিত্ত বেদনায় আমি আছি ভূতলে।
অবশেষে লোক ভিড়ে যাই ঠেলে
চমকিত মন দেখি তারে রাস্তার ধারে কাদামাটি মাখা, জীর্ণশীর্ণ দেহ মলিন পোশাকে মরে আছে পরে চোখ দুটো মেলে।
মন বলে আজ আর নয় তাকে যাব ফেলে।
মা মা বলে জড়ায়ে ধরি বাহুতে আমার অকৃত্রিম কান্নায় ভাসে বুক। ধূয়ে মুছে গেল বিবেকের জ্বালা পেলাম মন অমৃত সুখ।
আহাজারি করি নিজ দম্ভ ছাড়ি,
খুঁজি সুখ মানবতা প্রেমে।
যে আমায় দিয়েছে সুখ,
পারিনি ভুলাতে তারি দুখ
তবুও মন থেকে গেল মুছে বিবেকের জ্বালা।