হস্ ধাতুর হায়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল গমগম
আর তুলোর মতন খন্ড খন্ড উড়তে থাকল আকাশে
যেন সাদা সাদা শরৎকাল উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর
তারপর কখন যে তার একটুখানি টুক করে নেমে পড়ল
অংশুদের বাড়িতে, সেই বীরভূমে, কেউ জানতেই পারলো না

একদিন টানটান করে আমি মেলে ধরলুম আমার চোখের পাতা
তখন তো ভোর, তাই পুবদিকে, মানে তোমার মুখে তখন
                                         কী যে জটিলতাহীন অরুণাভা
কী যে অরুণা কী অরুণ!...আমি তো তোমার নাম জানতুম না
তাই 'অরুণ' বলে ডেকে উঠলুম আর সঙ্গে সঙ্গে তোমার সাদা, অসম্ভব সাদা
শাড়ী খুলে গিয়ে আমার চোখের পাতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আর
ঝাঁক ঝাঁক উড়ে গেলো চোখের ভেতর_আকাশে।..ইঁদুরের
পেটের মধ্যেকার অন্ধকার আর উল্টোনো ডেকচির অন্ধকার থেকে শুরু করে
সাইকেলের বাতাস ভর্তি টিউবের অন্ধকার পর্যন্ত ঝাঁপ দিয়ে পড়ল
তোমার অসম্ভব সাদা শাড়ি, যেমন একদিন 'হস্' ধাতুর মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে
একটা কাঠবেড়ালি একটুখানি কামড়ে দিয়েছিল তোমার ঠোঁটে আর তুমি
'আঃ লাগছে' বলতে গিয়ে হেসে ফেললে, সঙ্গে সঙ্গে মোরগের লাল ঝুঁটির উপর
নেমে এল খুব ভারী কুয়াশা, তোমার বাড়ি ঘিরে ফেললো
                                            কুয়াশারা, এসে দাঁড়াল
তোমার জানালার সামনে, তারপর একসময় হাত বাড়িয়ে টেনে আনল
তোমার মুখের কুচি কুচি তুষার, আর তুমি ঝাঁক ঝাঁক উড়তে থাকলে আকাশে
কোথা থেকে ভেসে এল তোমার খুলে যাওয়া শাড়ি যেন টুকরো টুকরো
শরৎকাল উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে সাদা সাদা, তারপর
কখন যে তার একটুখানি টুক করে নেমে পড়ল
অংশুদের বাড়ি, সেই কোন বীরভূমে, কেউ জানতেই পারল না
আসলে, তোমাকে আমি মনে মনে মোমবাতি বলে ডাকতুম।
সাদা মোমবাতি, তুমি জানতে না।
আসলে একদিন আমি তোমার পিঠের
একটা উঁচু হয়ে থাকা খুব শান্ত হাড়ের উপরে
দেখেছিলুম আরো শান্ত, সাদা একটি স্ট্র্যাপ।
সেইদিনই 'হস' ধাতুর মধ্য থেকে জেগে উঠেছিলে
আর
তোমার পিঠের ওই সাদা হাড় থেকে
উড়ে এসেছিল আরো সাদা সাপ, প্রিয়তম সাপ
খিল খিল, খল খল, খন্ড খন্ড অসম্ভব শাড়ি।

বলো হাসি, কী রকম চাপ চাপ হেসে উঠেছিল ঐ হাসিগুলি, হাহাকারগুলি
আমাদের সারসার হাসিদের দেখে!

না গো, আর কোনোদিন ভালোবাসব না


(কাব্যগ্রন্থঃ প্রত্নজীব, ১৯৭৮)