মাকে এবার আর মাটি নয়  
                  
শর্ট : মুখ্য স্থান -  নিষিদ্ধ পল্লী I  মুখ্য চরিত্রে - চারজন ( বুলাদি , মালতি,  মদনদা , স্থানীয়  নেত্রী )
( সাত সকালে বুলাদির ঘরে বিমলা , পলি , মালতি , সোমা , ময়না এক দঙ্গল মেয়েদের ভিড় )
বুলাদি : কি রে ? কি হয়েছে ?
মালতি : বুলাদি , কালকে ওদের ভাগিয়ে দিয়েছিলে ; এবার সাতসকালে একেবারে ঢাকি নিয়ে হাজির । ওই দেখো না বাজনা বাজছে সঙ্গে পটুয়া পাড়ার মদন দাও এসেছে । কাল ওই যে টেনিয়াটাকে পাঠিয়েছিল দুগ্গা ঠাকুরের মাটি নিতে  …
বুলাদি : ওদের বলে দে এবারে আর মায়ের মাটি দেওয়া যাবে না I অনেক হয়েছে… ফুলের মত মেয়েটাকে মেরে এই চৌকাঠ পেরিয়ে ঢুকলি ; আহা ! - তোরা দাঁড়া আমি ওদের মজা দেখাচ্ছি - এই বলে বুলাদি ঘর থেকে লাফ দিয়ে দরজার বাইরের দিকে এগোতেই …
মদনদা : কিরে বুলু , আছিস নাকি ?
বুলাদি : হ্যাঁ ? কি গো মদনদা ?
মদনদা : আরে মায়ের জন্য দুর্গাপুজোর মাটি নিতে এসেছি রে I কাল টেনিয়াটাকে পাঠিয়েছিলাম I কি নাকি সমস্যা হয়েছে তাই নিজেই এলাম । বছরে তো এই একবারই আসি I তোদের  দালানের মাটি না পেলে দুর্গা পূজোই বল আর দুর্গা প্রতিমাই বল সবই বৃথা I
বুলাদি : না গো মদনদা ; ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) এবারে আর মাটি দেওয়া যাবে না I
মদনদা : বলছিস কিরে ?
বুলাদি : হ্যাঁ , ঠিকই বলছি I বাবুরা সব পুণ্য ফেলে এই নিষিদ্ধ পল্লীর ঘরে আসে পাপ কাজ করতে । যত পুণ্য  এই চৌকাঠে ফেলে ঘরে ঢোকে পাপ কাজ করতে I আর সেই পুণ্যের মাটি দিয়ে দুগ্গা ঠাকুর গড়া I তো বাবুদের পুণ্য কোথায় গো ? ফুলের মত ডাক্তার মেয়েটাকে ধর্ষণ করে মেরে এখানে আবার পাপ কাজ করতে ওই সঞ্জয় এই ঠেকে ঢুকেছিল I একবার যদি জানতাম শালা ; ওর বিচার এখানেই হয়ে যেত …
ওই পাপের মাটি থড়ি মায়ের পোতিমা গড়ার জন্য দেব ! - সে আর হবে না ; ওতে আরো পাপ বাড়বে I
মদনদা :  ওরে ছাড় ছাড় ওসব কথা - বুঝেছি , কত টাকা লাগবে বল  ৫০০ – ১০০০ …
বুলাদি : মদনদা ভুল করছ - ইজ্জত বেঁচে পেট চালাই I টাকার গরম দেখিও না …  
( কথা বলতে বলতে এলাকায় ভিড় জমে যায় । তখন চারদিকে হট্টগোল – শোরগোল পড়ে গেছে । নিষিদ্ধ পল্লীর সব মেয়েরা এককাট্টা  হয়ে চিৎকার করছে  )
বুলাদি : মদনদা দেখো দেখো অশিক্ষিত মেয়েগুলো সারাদিন টিভি দেখে দেখে -  কি সব ইংরেজি বলছে দেখো “ WE WANT JUSTICE “, “ তিলোত্তমার বিচার চাই ! বিচার চাই ! বিচার চাই … গতর দিয়ে রোজগার করি , মাগনা  নয় ।
( এলাকায় বিদ্যুৎফুলিঙ্গের মতো চারিদিকে এই চেঁচামেচির খবর রটে যায় i কিছুক্ষণ পরে স্থানীয় একজন নেত্রী ভিড় সরিয়ে বুলাদির মুখোমুখি হয় … )
স্থানীয় নেত্রী : কি রে বুলা , কি হয়েছে ? এত হল্লা চিল্লা কিসের ? শুনছি নাকি তোরা কেলাবের দুগ্গাপুজোর জন্য মাটি দিবি না ? বুলা তোর সাহস দিনকে দিন কিন্তু বেড়েই চলেছে ।  
বুলাদি : শুনেছি দিদি , সঞ্জয় বলে যে ছেলেটা ধরা পড়েছে - হারামজাদাটা নাকি মার্ডার করার পরে এখানে এসেছিল । আগে যদি জানতাম ; তাহলে এখানেই সবাই মিলে মালটাকে খাল্লাস করে দিতাম I অত বিচার টিচারের দরকার হতো না I ও এখানে চৌকাঠ মাড়িয়ে মাটিটাকেই নষ্ট করেছে । এখন মাকে ওই পাপের মাটি দিতে পারব না ।
আর এতে সাহসের কি হলো ? এবার আমরা পোতিবাদ করছি । আমরা তো আর মিছিল- টিছিল করতে পারব না I ওসব ভদ্দোরলোকেরা করে । সমাজে লোকে আমাদের ঘেন্না করে । ওসব করলে লোকে হাসবে । আমরা যেটা করতে পারব সেটা করেছি I এটা আমাদের অধিকার I মায়ের জন্য আমরা মাটি দেব না I
স্থানীয় নেত্রী : বুলা , ভুলে যাস না মাসে মাসে তোদের যে ৫০০ – ১০০০রের ব্যবস্থা করে দিয়েছি … বেইমান কোথাকার …
বুলাদি :  মাসে ৫০০ – ১০০০ ! দিনে ক’টাকা হয় দিদি ? বলতে পারবে ? এক কেজি চালও তো হয় না I নিজেরা কোটি কোটি টাকা কামিয়ে ; আমাদের তো ভিক্ষা দিচ্ছ ! মাসে ৫০০ – ১০০০ দিয়ে কি হবে ? আমাদের এই নিষিদ্ধ পল্লীর ছেলে মেয়েরা দালাল বা বেশ্যা ছাড়া কিছু হবে না I ওদের কোন হিল্লে হবে ? কোন চাকরি করতে পারবে ? কল কারখানা আছে ? বেশ্যার ছেলে-মেয়ে বেশ্যাই হবে ।
স্থানীয় নেত্রী : মদনদা বুলা কি বলে দেখো ( কিছুটা মুচকি হেসে ) নিষিদ্ধ পল্লী ছেলে-মেয়ে !! ; - সে কিনা আবার চাকরি -বাকরি !!  উফ !! (  কিছুটা ব্যঙ্গ হাসি )
বুলাদি : দিদি ভুলে যেওনা আমরাও মানুষ I বিপদে পড়ে এই ধান্দায় নেমেছি , শরীর বেচে পেট চালাই । আমাদেরও বিবেক আছে , মন আছে , লাজ লজ্জাও আছে । টাকা দিচ্ছে বলে কি সব বিকিয়ে দিতে হবে নাকি ? ভোটের সময় তো দেখি হাতজোড় করে বুলা বুলা করো I এখন বেইমান বলছো ? আমরা ইমানের সঙ্গে ইজ্জত বেঁচে রোজগার করি I কারো সাথে বেইমানি করি না I
যে ডাক্তার মানুষের জীবন দেয় তার জীবনেরই কোন দাম নেই ! হই হই করে তোমাদের সরকারি জায়গায় রেপ করছে ! খুন করছে ! কোন নিরাপত্তা নেই ? কোন পোতিকার নাই ? তাহলে আমাদের আর জীবনের কি দাম আছে গো ? তোমরা তো ৫০০ – ১০০০ দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছো ; না হলে পুলিশ দিয়ে রেড করে … আজকের দিনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলো রেপ কাকে বলে জানলোই না অথচ রাস্তায় রাস্তায় বিচার চাই বলে পোতিবাদ করছে । ছি ! সমাজটা কোথায় নিয়ে গেলে ! -
স্থানীয় নেত্রী : আহা তোরা এত রাগ করছিস কেন ? আমরাও তো দোষীদের শাস্তি চেয়েছি …
বুলাদি :  দিদি , আমরা মুখ্যু-সুখ্যু মানুষ I অত প্যাঁচ -ঘোঁচ জানি না I কেসটা যদি তোমার-আমার ঘরে হত বা রাস্তাঘাটে হতো ; সেটা অন্যরকম I এটা কিন্তু তোমাদের সরকারি জায়গাতেই হয়েছে । এর বেশি কিছু বলতে চাই না ।
স্থানীয় নেত্রী : তোরা তাহলে মাটি দিবি না ?
বুলাদি :  ( বুলাদির চোখে জল , কাঁদো কাঁদো গলায় , আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ) হ্যাঁ দেবো , দেবো , মায়ের পুজো হবে , আর মাটি দেবো না ? যেদিন ওই ডাক্তার দিদিমনির রেপ-খুনের বিচারে আসামির শাস্তি হবে I সেদিন দুগ্গাপূজা না থাকলেও ; আমরা এই মাটি দিয়ে দুগ্গাঠাকুর বানিয়ে এই দালানেই মায়ের পুজো করবো । তোমারও নিমন্তন্ন রইল । আর তুমিও এখান থেকে যত ইচ্ছা পারো ; মায়ের পুজোর জন্য মাটি নিয়ে যেও I তোমাকে কেউ আটকাবে না I আমি কথা দিচ্ছি  I
( তখন আশেপাশে চতুর্দিকে বুলাদি জিন্দাবাদ ! বুলাদি জিন্দাবাদ ! আর সেই বিখ্যাত স্লোগান – নিষিদ্ধ পল্লীর ছেলে মেয়ে বুড়ো বাচ্চা একযোগে চিৎকার করে চলেছে - JUSTICE FOR R G KAR ! ,  WE WANT JUSTICE !