কনকনে শীতের ভোরে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসা,
আসসালাতুখাইরুম মিনান্নাউম, শুনেই আমি স্রষ্ঠার ডাকে সাড়া দিতে জেগে উঠতাম,
ফজরের সালাতের তৃষ্ণা মিটিয়ে,
প্রথম প্রহরের রোদের আলোয় গৃহকর্মে মন বসাতাম।

আমার ছোট ছোট সন্তানদের আদর শাসনের ছায়াতলে রেখেছি বহু বছর,
আমার দৃষ্টির সীমানায় থেকেই তারা কৈশোর পেরিয়ে,
যৌবনে পদার্পণ করেছে, আর আমার হয়েছে ক্ষয়ে যাওয়ার শুরু।

আমার সন্তানদের মাতার পরিচয় ছাপিয়ে,
দাদু হলো আমার নতুন পরিচয়,
এতোসব পাওয়ার আনন্দের মাঝে আমি অনুভব করতে লাগলাম,
আমার হয়েছে শেষের শুরু।

আমি ৫০ পেরিয়েছি মাত্র কদিন হয়,
আমার ফজর কাযা হচ্ছে প্রায়,
শরীরে নানা অসুখের অস্তিত্ব অনুভব করছি,
আমার বুকের ধনেরাও নতুন ভুবন তৈরী করে ফেলেছে,
আমি তাদের জীবনের প্রথম অগ্রাধিকার থেকে,
সবশেষের একজন হয়ে গেলাম।

এখন আমি ৭০ উর্ধ্ব একজন অতিশয় বৃদ্ধা,
জটিল কঠিন রোগের সাথে বার্ধক্য আমাকে কাবু করে ফেলেছে,
আমার সালাত আদায় করা হয় না এখন,
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আজান শুনে।

আজকাল আমি স্মৃতি ভ্রষ্ট হই,
একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাও আমার মনে থাকে না,
আমি আমার সম্তানদের কাছে ডাকি,
একজনকে পাই তো আরেকজনকে পাই না,
কে আসছে কে যাচ্ছে, ঠিক মনেও থাকে না।

আমি কারো কারো কাছে বোঝা,
তারা আমাকে নিয়ে ভাবলেও আমাকে সময় দিতে পারছে না,
তাদের কাছে সময় আর চিন্তা ব্যয়ের মতো,
হয়তো আমার চেয়েও অধিক মূল্যবান কিছু আছে।

আমি বুঝে গেছি সেই কবেই,
আমার বেঁচে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে,
তবুও বেঁচে আছি, সৃষ্টিকর্তা ডেকে নিচ্ছে না বলে,
ও হ্যা, আমার কাছে যারা থাকে, তারাও আমাকে ভালোবাসে,
তাদের দোয়া আর চাওয়াও হতে পারে, আমার বেঁচে থাকার কারন।

ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ হয়েও মরছি না হয়তো,
তবে আমি বুঝে গেছি,
আমার যাবার সময় হয়ে গেছে,
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আসসালাতুখাইরুম মিনান্নাউম শুনেই যেমন জেগে উঠতাম,
তেমনি মৃত্যুর দূত দুয়ারে দাঁড়িয়ে ডাক দিলে, ঘুমিয়ে যাবো চিরতরে।