সমুদ্রচিলের সাথে আজ এই রৌদ্রের প্রভাতে
    কথা ব’লে দেখিয়াছি আমি;
    একবার পাহাড়ের কাছে আসে,
    চকিতে সিন্ধুর দিকে যেতেছে সে নামি;
    হামাগুড়ি দিয়ে ভাসে ফেনার উপরে,
    মুছে যায় তরঙ্গের ঝড়ে।
    দাঁড়ায়েছি শতাব্দীর ধুলো কাঁচ হাতে।।


তরঙ্গের তারা খেয়ে চ'লে যায় আরো দূর তরঙ্গের পানে-
    ফেনার কান্তারে
    বৃষ্টির প্রথম রোদ যেইখানে
    তাহার সোনালি ডানা ঝাড়ে;
    যেখানে আকাশ নীল কোলাহলময়,
    সমুদ্রের করিছে দূর সমুদ্র সঞ্চয়,
    দিগন্ত হারায়ে যায় দিগন্তের প্রাণে।।

চঞ্চল ধবল বুকে নাচিতেছে ফেনার আঙুল;
    ধানের শিষের মত দু'পায়ের শিরা
    নাচিছে স্পানিশ টাঙ্গো নীল ঢেউয়ে;
    হৃদয় করিছে পাম মালাবার হাওয়ার মদিরা;
    ট্রম্‌ ট্রম্‌- ট্রাম্‌ ট্রাম্‌- ড্রামের মতন
    শৈলে শৈলে সমুদ্রের রুক্ষ আন্দোলন;
    রৌদ্রে রৌদ্রে ঝলসায় ঝিনুকের  ফুল।।

বিজ্ঞান কি মস্তিষ্কের বাক্সের মতন একাকী?
    তোমার শরীরে জল- দ্রাক্ষার আঘ্রাণ;
    তোমার হৃদয়ে পেকে ঝরিতেছে রৌদ্রের ক্ষেত
    জাগিতেছে নব নব শস্যের সন্তান;
    আমরা বন্দরে ফিরি- জনতায়- ঘূর্ণিস্রোতে কুকুরের মুণ্ডে
                                        লোল আঁখি
    পাবে নাকি লেজ তার? হো-হো- পাবে নাকি!
    পাবে নাকি লেজ খুঁজে কুকুরের মত লোল আঁখি।।

    ছেড়ে দিয়ে উত্তরের বাতাসের প্রাণে
    জন্মেছে তোমার্ডানা- জেগেছে হৃদয়;
সহস্র শতাব্দী গিঁট কাটায়েছি পথ আর ঘরের আঘ্রাণে-
    আনন্দের পাইনিক' তবু পরিচয়;
    জন্মেনি ধবল ডানা বিজ্ঞানের অগ্রসর চিরি
    ভেঙ্গে গেছে আকাশের- নক্ষত্রের সিঁড়ি,
    উৎসব খুঁজেছি রাতবিরেতের গানে।।

পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়ায়েছি মনোবীজ, আহা,
    আকাঙ্ক্ষার নিঃসঙ্গ সন্তান;
আথবা ঘাসের দেহে শুয়ে শুয়ে কুয়াশায়
    শুনেছি ঝরিতে আছে ধান;
    অথবা সন্ধ্যার নীল জনালায়
    অদৃশ্য কোকিল এসে গায়
এইসব বেদনার কর্কশ-রেডিয়ামে সারেনাক' তাহা।।

মাঝে মাঝে একবার ধরা দেই নক্ষত্রের হাতে
    চ'লে আসি সমুদ্রের পাশে;
যে ক্ষেত ফুরাতে আছে- ফুরাইয়ে গেছে
    তার তৃষ্ণা মিটিছে আকাশে;
চেয়ে দেখি সেই নীল আকাশের ছবি;
সমুদ্রের অজান্তব জানালার গল্পের সুরভি;
রৌদ্রের ডানার ভেসে সেইখানে পৃথিবী হারাতে
চাই আমি; সমুদ্রচিলের খেলা তুলে নিয়ে হাতে।।


                    ।।২।।
রঙিন বিস্তৃত রৌদ্রে প্রাণ তার করিছে বিলাস;
কোনদিন ধানক্ষেতে পৃথিবীর কৃষকের প্রাণ
এই রৌদ্র পায় নাই,- জলপাই পল্লবের ফল,
জ্যৈষ্ঠের দুপুরে মাছি যে উল্লাসে গেয়ে গেছে গান,
কুমারী কোমল ঘাড় নুয়ে চুপে যেই পক্ক রৌদ্রে বেণী করিছে বিন্যাস,
নীল হয়ে বিছায়েছে পৃথিবীর মধুকূপী ঘাস,
তরমুজ ক্ষেতে শুয়ে স্বপন দেখেছে চৈত্রমাস,
তার চেয়ে আরো দামী গাঢ় মদে প্রাণ তার করিছে বিলাস।।

পৃথিবীতে যেই রূপ কোনদিন দেখে নাই কেউঃ
সিংহলের হীরা রত্ন নারী লুটে নাবিকের দল
    ভারত সমুদ্রে নেমে নক্ষত্রের রজনীতে
তারপর ভোরবেলা দেখেছিল স্ফটিকের মত যেই জল;
    তরঙ্গের পর ঘন তরঙ্গের মধু আর দুধ,
    মেঘের গোলাপী মুখ- রৌদ্রের বুদ্বুদ;
তবু তারা দেখে নাই পুরুভুজ-বিছানায় নূপুর বাজায়ে নীচে ঢেউ
বারুণির জানালায়ঃ সিন্ধুচিল- মক্ষিকারা ছাড়া তাহা কেউ জানে নাক কেউ।।

ধ্বনিত ঢেউয়ের অগ্নি বয়ঃসন্ধি-দিবসের স্তন হয়ে রক্তে নেমে আসে!
    তরঙ্গের উষ্ণ নীল তরমুজ ক্ষেতে
    আমারে খুঁজিয়া পায় মৃত্যু যেনঃ
        বিস্তৃতির পথে যেতে-যেতে
    সমস্ত পৃথিবী যেন মিশে যায় রৌদ্রের সাগরে;
    সিন্ধুচিল আর তার বনিতা যেখানে খেলা করেঃ
মরণ আমারে যেন পায় সেই দারুচিনি হাওয়ার আশ্বাসে।।