সেই কাক ডাকা ভোরে জাগরণ আমার, এই উষ্ণতার দিনেও দখিণা জানালার খোলা হাওয়ায় শীতল মনপ্রাণ।
কর্ম আমায় বেশিক্ষণ বিছানায় থাকতে দেয়নি। দেয়নি অলসতায় আড়মোড় ভেঙে আর একটু ঘুমের ফুরসৎ।
সামান্যটুকু অন্ন পেটে পুড়েই বেড়িয়েছি জীবিকার দাগিতে।
এপ্রিলের তপ্ত রোদে ঘামে ভিঁজে মাত্রই আপন নীড়ে ফেরা!
এরই মাঝে দরজায় কড়া নড়ানোর শব্দ। খুলেই দেখি হলুদখাম হাতে দাঁড়িয়ে ডাকপিয়ন।
বিষ্ময়ে হতবাক আমি! এই ডিজিটাল যুগে হাতে লেখা চিঠি, তাও আবার হাজার বছর পরে, আমার নামে তোমার পাঠানো চিঠি।
মনের অস্থিরতা, আবেগ, ভালোবাসা আর অতিত স্মৃতিতে মাখামাখি এক স্বপ্নময় জগতে যেনো এক নিঃশ্বাসে পড়লাম তোমার চিঠিখানা।
কতো কথাই না জানতে চেয়েছো তুমি,
কতো প্রশ্ন তোমার মনে!
ওহ্! দুঃখিত প্রিয়-
এত সময়ের পরেও - এখনও জানাই হলো না কেমন আছো তুমি?
আচ্ছা কেমন আছো বলতো !
ভালো আছো তো!
আচ্ছা সোনা - মনে পড়ে তোমার, সেই যে একবার আমরা চিত্রা নদীর পাড়ে বেড়াতে গেলাম, তোমার পরনে ছিলো সবুজ শাড়ী, খোঁপায় লাগানো গাঁদাফুলের মালা, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর আমি তোমার পছন্দের লাল পাঞ্জাবিতে।
স্বচ্ছজলে পা ডুবিয়ে হাতে হাত রেখে কতো কথাই না বলেছিলাম, নদীর জল ছুইয়ে আসা শীতল বাতাসে উড়ছিলো তোমার রেশমি চুল, আর আমি খেলা করছিলাম তা নিয়ে।
ফেরার পথে ঐ যে নার্সারী থেকে কাঠগোলাপের চারা কিনে দিয়ে বলেছিলে, আমি না থাকলে এই গাছটার স্পর্শ নিও, আমার ছোঁয়া পাবে তাতে । সত্যিই যে তুমি হারিয়ে যাবে,, সেদিন যদি বুঝতাম,,,
জানো, দরজার ঠিক সামনে লাগিয়েছি গাছটি, এখন বেশ বড় হয়ে গেছে, সারা বছর হলদে- সাদা ফুলে ভরে থাকে গাছ, গাছের একটা ডালে বাসা বেঁধেছে শালিকপাখী। সেও সময় মতো ছানা দিতে ভুল করে না। সারাদিন কিঁচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখে সারা বাড়ি!
সত্যিই সোনা - এখন তোমার অস্তিত্ব টের পাই আমি এ গাছের ছাঁয়ায়, তোমার হাসি অনুভব করি ফুলের গন্ধে, পাখীর গানে শুনি তোমার কন্ঠধ্বণি।
জানো সোনা -
যখন একাকীত্বতা অনুভব করি,
অনুভব করি শুণ্য জীবন,
বুক ফেটে ভেদ করে যখন আসে
কান্না মিশ্রিত চাঁপা শ্বাস!
না পাওয়ার বেদনায় যখন
গলাকাটা পাখীর মতো ছটফট করে
বুকের ভেতরে নীল কষ্টগুলো,
আমি ছুটে যাই,
ছুটে যাই তোমার দেওয়া সেই
কাঠগোলাপের কাছে।
আমি কথা বলি,
বলি মনের গোপন কথা
ভালোবাসার কথা!
জানো সেও আমায় তার কথা বলে,
বলে ফুলের কথা!
পাখীর কথা!
প্রজাপতির কথা!
রঙ-বেরঙের অনেক কথা!
মনটা ভালো হয়ে যায়,
মনে হয় এই বুঝি তোমার কাঁধে
মাথা এলিয়ে রাজ্যের সমস্ত ক্লান্তি
বিষন্নতা, দুঃখ কষ্ট
এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো!
প্রিয়তমা -
অনেক কথাই মনে পড়ছে আজ,
সেই চাঁদনি রাতের কথা,
বর্ষায় ক্যাম্পাসে বৃষ্টিজলে ভেঁজার কথা!
টং দোকানে বসে মিষ্টি চা'য়ের কথা!
শীত সকালে তোমার জন্য
বকুল ফুলের যে মালা গেঁথেছিলাম, তাও মনে পড়ছে একে একে!
আমার কথা বাদ দাও, আবেগের বসে অনেক কথাই তো বলে ফেললাম!
আমি ভালো আছি-
বেশ ভালো আছি!
ভালো আছি তোমায় ছাড়া -
যতটুকু ভালো থাকা যায়!
ভালো থাকা যায় -
যতটুকু স্বপ্নহীন হলে!
ভালো থাকা যায় -
যতটুকু স্পর্শহীন হলে!
তোমার কথা বলো! প্রিয়!
এখনও কি সবুজ শাড়ী পড়ো
ভাঁজ করা কুচি করে!
এখনও কি কাজল দাও -
তোমার ঐ পদ্মচোখে!
গাঢ় লিপস্টিকে ভাসিয়ে দাও কি
তোমার দুটো ঠোঁট!
এখনও কি ওড়না প্যাঁচিয়ে
নির্জন সবুজ মাঠে,
ডানামেলে দাও লাল ফড়িংয়ের সাথে!
দুরন্ত বালিকার মতো,
এখনও কি বেণী দুলিয়ে চলে যাও
অভিমানে মুখ ফিরিয়ে!
প্রিয়তমা -
জানি না কেমন আছো তুমি!
কেমন কাটছে সময়গুলো তোমার!
তবে যেমনই থাকো -
ভালো থেকো!
যত্ন নিও নিজের!