জুয়েল সাদত


আমাদের আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যত । পিতা মাতা সব সময় বলে থাকেন আমার ছেলে বা মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে বা ইন্জিনিয়ার হবে ।  এটা  একটা সনাতনি ধারনা । তাকে জোর করে ছোট বেলা থেকেই একটা মানষিক চাপে রাখেন । সবাই চাইলেই ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হতে পারে না । তার আরও নানা ইচছা থাকতে পারে । আর সবাই যদি ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হয়ে যা্য় তাহলে না্র্স, ব্যাবসায়ী ,শিল্পী, সাহিত্যিক,সাংবাদিক, প্রফেসর, শিক্ষক,গবেষক, সাইনটিষ্ট, ইলেকট্রশিয়ান, ফার্মাসিষ্ট, ডিসি, এস পি, ওসি, সচিব, কেরানী, আমলা, ইমাম, মোয়াজ্জিন, আলেম, ওলামা, প্রকাশক, প্রজোযক, নায়ক, নায়িকা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, প্রশাসক সহ শত রকম নানান প্রফেশনের লোক আসবে কোথা থেকে । আমাদের সব কিছু হবার আগে হতে হবে একজন আদর্শ মানব ।  এখানে সব কিছু হওয়ার যোগ্যাতা সবার সবার কিছু না কিছু আছে কিন্তু ভাল মানুষ হতে হবে সবার আগে ।
ভাল মানুষ কি ? ভাল মানুষ হল আদর্শ মানুষ ।  এর নানান রুপ আছে । মিথ্যা না  বলা । পিতা মাতার কথা শুনা , আদব কায়দা মেনে চলা । নিয়মিত নামাজ পড়া । বড়দের সম্মান করা । সন্ধার পর বাড়ির বাহিরে না থাকা । কাউকে কষ্ট না দেয়া । পরের উপকার করা । ছোটদের সম্মান করা , স্নেহ করা । আত্বীয় স্বজনদের সাথে মিলে মিশে থাকা  । কোন অপরাধে না জড়ানো । রাস্তায় কারও সাথে খারাপ আচরন না করা । ইভ টিজিং না করা । নিয়মিত পড়া শুনা করা ।  নিজের ধর্মিয় কাজে মনোনিবেশ করা ।
অনেক কিছু্র সমষ্টিত গত গুনাবলী্ই হল আদর্শ মানুষ হিসাবে পরিনত হবার ধাপ । আমি আমার কথা বলি , আমি যখন  এম সি কলেজে পড়ি ৯২ সালে আমি  এইচ এস সি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে পারিনি, মানে প্রথম বিভাগ পেলাম না । আমার বন্ধুরা শাহজালাল ভার্সিটি , মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে , বুয়েটে চলে গেল । আমি মন খারাপ করে এম সি কলেজে পড়ে থাকলাম । একটা জিদ চেপে বসল ।
• কিছু একটা হয়ে দেখাব । ছোট বেলা থেকে পত্রিকা পড়[র একটা অভ্যাস   ছিল ,যখন ক্লাস থ্রিতে পড়তাম তখন সংবাদ প্রত্রিকা পড়তাম । কাগজটার সব কিছু পড়তাম । যারা লিখতেন ,তাদের মনে হত তারা কত জানেন । কত পন্ডিত । কত বড় মানুষ , কত দেশ বিদেশের খবর তাদের মাথায় । আমি ৯২ সালে মনস্থির করলাম সাংবাদিক হব । সাংবাদিক কিভাবে হওয়া যায় , জানা ছিল না । জানলাাম সাংবাদিক হওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে , আবার নিজে নিজে পড়ে অথবা কোন কাগজে কাজ করেও হওয়া যায় । আমি পড়া শুনা করলাম , নানান ব্ই , ম্যাগাজিন যা সামনে পাই পড়তে শুরু করলাম । দিন রাত শুধু আউট বই পড়া , লাইব্রেরীতে গিয়ে মাসের পর মাস বই পড়ি । বাজারে যে যে কাগজ পাওযা যায় পড়ি । নানান লাইব্রেরীর সামনে দাড়িয়ে পত্রিকা ম্যাগাজিন পড়ি । সব তো কেনা যায় না , অনেক টাকার ব্যাপর । লাইব্রেরীর লোকজনের সাথে বেশ ঘনিষ্টতার সুযোগে পত্রিকা পড়ি আর কিনে নিয়ে আসি । পড়তে পড়তে লেখা শুরু করি । টুকটাক লেখা শূরু করি । দেখা গেল আমি লিখতে পারছি । যত পড়ি তত নিজেকে অন্যরকম আবিষ্কার করি ।জানার পরিধি বাড়তে থাকে , সবার সাথে সব বিষয়ে কথা বলতে পারি । রাজনীতি সমাজ নীতি, পারিপার্ষিক অব্স্থা , সামাজিক অবক্ষয় , আমাদের দৈনন্দিন জাীবনের সব কিছুই আমার নজর  এড়াতে পারে না । দু বছর লেগে থাকলাম . সিলেট পৌর লাইব্রেরী, মুসলিম সাহিত্য সংসদে অনেক পত্রিকা , ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ নেই । বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মতের পত্রিকা পড়তে থাকলাম । সাথে রোমেনা আফাজ, হুমাযুন আহমদ,ইমদাদুল হক মিলন, বুদ্বদেব বসু, সুনিল বন্ধোপাধ্যায়, শংকর, আবেদ খান, আনিসুল হক, আব্দুল্লা আবু সায়িদ সহ দেশ বিদেশের নানান বই জার্নাল অনুবাদ আমাকে অন্য  এক জুয়েলে রুপান্তরিত করল । তারপর ৯৩ সালের ম্ধ্য ভাগ থেকে দৈনিক আজকের সিলেটে লেখা শুরু করি সেই থেকে আজ ২০১৯ সাল পর্যন্ত লিখছি । ভোরের কাগজ, প্রথম আলো তে ছিলাম । আজও প্রথম আলোয় লিখছি । কয়েক হাজার কলাম লিখেছি । ৬ টি বই লিখলাম, তিনটি  বই আসছে আগামী বছর । ইংরেজী বই লিখলাম । থেমে নেই । নিজে একটা পত্রিকা চালাই । ৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের আনসার ভিডিপতিতে সাংবাদিক হিসাবে সরকারী চাকরী করি , ২০০১ সালে  আমেরিকা আসার আগে চাকরী ছাড়ি ।  অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি বলব না । ইচছা ও একাগ্রতা ছিল । আজ আমার ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বন্দুরা বলে আমি সাংবাদিক লেখক জুয়েলের বনধু । আমেরিকার রবোটিক সার্জন ( মেশিনের সাহায্য অপারেশন করার নাম রবোটিক সার্জন ) আমার বন্ধু ডাক্তার আমান সব সময় বলে “আই এ্যম প্রাউড অব ইউ“  ।


   তাই যারা লেখক কবি  সাংবাদিক হতে চান , তাদের প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে । আর নিজের যা ভাল লাগে তাই হতে হবে । জোর করে বাপ মায়ের চাপিয়ে দেয়া প্রফেশন বেচে নেয়ার কোন মানে নেই । যে কাজ করবে তা অবশ্যই ভাল লাগতে হবে । আর নিজের দেশকে প্রথমে ভাল বাসতে হবে । ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হলাম আর মান মানুষিকতা ব্যবসায়ীর মত , তাহলেতো ব্যাবসায়ী হলেই হয় । মানবিক মানুষ হতে হবে । আমরা যে প্রফেশনে যাই না কেন সব কিছু হতে হবে আদর্শিক । র্ব্যবসায়ী হলে ভাল ব্যাবসায়ী হতে হবে । শিক্ষক হলে ভাল শিক্ষক হতে হবে । প্রকৌশলী হলে ভাল প্রকৌশলী হতে হবে । আলেম হলে ভাল আলেম হতে হবে । সব কিছুতেই ভাল মন্দ আছে । তাই আদর্শ মানব হওয়া অতি জরুরী ।
আমাদের ভাল মানুষ হতে হবে সর্ব প্রথম । শিশুদের মানুষিক বিকাশে পারিবারের ভুমিকা ও জরুরী ।


জুয়েল সাদত : সাংবাদিক কলামিষ্ট ( আমেরিকা )
এপ্রিল ২৬, ২০২০