ঘুম ঘুম চোখে সকালের যানজট,
পেরিয়ে হাতড়ে হাতড়ে উঠছি উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে।
অনেক বড়ো হতে হবে, পায়ের তলায় রাখতে হবে দারিদ্র্য,
সমাজ যদি না ঠোকে সেলাম তোমায়,
তবে এই জীবনের অর্থ কি বেঁচে থেকে!
মধ্যবিত্ত ভাবনাগুলোকে আর দু চক্ষে দেখতে পারি না,
অথচ উপায়ও নেই, পকেট সায় দেয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে,
বেশিরভাগ সময় পালক কেটে কাকের দলে নাম লেখাই;
সুখ আর অর্থের সমীকরণ বড়োই জটিল আসলে।
আমার ছেলেকে নামি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে হবে,
মেয়েতো বলেছে বিদেশী কাজল না পড়লে
তার চোখ নাকি জ্বলে।
বৌয়ের নখ ক্ষয়ে যাচ্ছে বাসন ধুয়ে,
আমরা দ্রূত এগোচ্ছি আলোর দিকে।
আমার মাকেও দেখতাম বাসন মাজতে কলতলাতে,
মায়ের আঙ্গুলগুলোকে কখনো যত্ন পেতে দেখিনি।
আমাদের রান্নাঘরে ছিলোনা বিড়ম্বনা,
এগোনো ছাড়া আর কিছু নিয়ে যে ভাবতে শিখিনি।
জেনে রাখতে হয় স্টক এক্সচেন্জের হাল,
গল্ফ বল কোন কোম্পানির ভালো।
গাড়ির দাম আলু পেঁয়াজের থেকেও ভালো জানতে হবে,
নাহলে কি করে তুমি হবে সমাজের কাছে গৌণ!
ধ্রুপদী সংগীত বোঝা চাই,
ফিদা হুসেনের ছবি আমায় দেখে হাসে,
আমি বুঝিনা চাঁদে জমির হিসেব কিভাবে চলছে,
পাত্তা পেতে গেলে কয়েক বিঘা আমাকেও
যে কিনতে হবে।
দৌড়, শুধু দৌড়, সামনে দ্যাখা যায় অভীষ্ট লক্ষ্য,
পায়ের তলায় পিষে যায় আমার শৈশব,
ভিখারির ডাক, ফুটপাথের ঘুগনি রুটি,
ছুড়ে ফেলে দিতে হবে যাবতীয় মধ্যবিত্ত কষ্ট।
একতলা পোড়ো ভিটে ছেড়ে বহুতলের হাতছানি,
স্বপ্নেও আমার চোখে লাগায় ধন্দ।
মধ্যবিত্ত, উদ্বাস্তু এই সব কথা তাড়া করে আমায়,
আমার কান আজ এসবের জন্যে বন্ধ।
আমি ছুটছি আলোর থেকেও জোরে,
একটাই আক্ষেপ আমার ছায়াটাও যে আমার মতো,
কি করে আমি রেহাই পাবো সেটার হাত থেকে-
কোনো মধ্যবিত্ত আমায় বলে কি দিতে পারো?