জেগে আছো, নিশাচর?
আমার গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে তোমার?
নাকি জেগেছিলে, তোমার রাত জাগতে হয় বলে?
কত রাত ধরে আমার কান্না দেখো? হিসাব রাখোনি?
যেদিন জন্ম নিলে অশ্বত্থ গাছের ডালে ঐ ছোট্ট নীড়ে,
জানো, তার কতকাল আগে থেকে আমি কাঁদছি?
হয়তো জানো না!

আমার খোলা জানালা দিয়ে অন্ধকার রাতে তোমার জ্বলে থাকা চোখের মাঝে আমি নিজেকে দেখেছি—
ঝড়ের কবলে পড়ে আহত, ডানাভাঙা অসহায় পাখির মতো মনে হয়েছিল সে প্রতিচ্ছবি!

নিশাচর, তুমি কি আজ অশ্বত্থের ডাল ছেড়ে উড়ে এসে আমার শিয়রে একটুখানি বসবে?
ভাবছো, সান্ত্বনা পাবার লোভে তোমাকে ডাকছি?
না, মোটেও না!
নিজের চিৎকার যে অবলীলায় গিলে ফেলতে পারে, নিজেকে যে অনায়াসে বলতে পারে—“কেঁদো না,”
সে আর যাই হোক, সান্ত্বনা পাবার আশা করে না।

সান্ত্বনা নয়; তার থেকে বেশি কিছু দিতে পারো, নিশাচর?
নিশাচর, তুমি আমার গল্প শুনবে?
ভাবছো, তুমি হয়তো আমার ভাষা বুঝবে না?
কিন্তু পৃথিবীর সব বেদনার ভাষা যে এক!
পৃথিবীর সব কান্নার রঙ এক!
শূন্যতার কোনো রঙ হয় না বোধহয়,
তবে তার অনুভব সবার মাঝে কি এক নয়?
কিছু কথা দুজনে নাহয় ভাগাভাগি করে নিবো বেদনার ভাষায়, কান্নার রঙে, শূন্যতার অনুভবে!

জেগে আছো, নিশাচর? আসো, আমার কাছে!
আজ আর নীরবে চেয়ে থেকো না।
মনে মনে বলো না—“কী চাও, দুঃখমানব?”
নিশাচর, আমার জানালা খোলা রেখেছি! তুমি আসবে?