ভালোবাসবি?
ভালোবাসবো!
অবাক পুলক নির্বাক চেয়ে রয়,
বুঝলি না তো!
বলেই জুঁইয়ের হাসি মধুময়।
মাঝে মাঝে তোকে নিয়ে যাবো গঙ্গার পাড়,
গল্প করবো, বাদাম খাবো লাগবে চমৎকার।
নদীর পাড়ে হিমেল হাওয়ার লাগবে হলুস্থুল,
তোর হাতে হাত রেখে আমি করবো না হয় ভুল।

ধেৎ! এসব করার সময় কোথায় বল--?
বাবার আছে চায়ের দোকান তোদের গলির মোড়ে,
ইশকুল থেকে এলেই বাবা ডাকেন জোরে-সোরে।
নাকে-মুখে দু-মুঠ খেয়ে বসি গিয়ে তাতে,
চা বানিয়ে বিক্রি করি আমি নিজের হাতে।
যেতে একটু দেরি হলেই বাবার বকা খাই।
তোর সাথে ওই গঙ্গায় যাওয়ার সময় কোথা পাই?
দোকান থেকে বাড়ি ফিরেই পড়তে বসি বই।
ক্লান্তি এলেই ঘুমিয়ে পড়ি ঘোরার সময় কই?

তুই না আমার বন্ধু, পুলক? আমার কথা ভেবে,
দোকান থেকে মাঝে মাঝে না হয় ছুটি নেবে।
বলবে আছে কাজ,
একটু মিথ্যে বললে কি আর পড়বে মাথায় বাজ!

আমার বাবা ভীষণ রাগী লোক--  
ধরতে পারলে ফাঁকি,
মারবে মাথায় জোরসে গাট্টা আস্তো থাকবে পা কী!
তাছাড়া তোর বাপের অনেক টাকা,
গরিব মানুষ দেখলে তাকায় বাঁকা!
আমায় যদি তোর সাথে সে দেখে গঙ্গার পাড়,
আস্তো রাখবে হাড়?

হাত ধ'রে জুঁই বললো চোখে চেয়ে --
বল তো পুলক, দেখতে আমি মন্দ?
আমার সাথে ঘুরতে যেতে কেন এতো দ্বন্দ্ব?
কোমল সজল চোখের মায়াডোর,
তরুণ চোখে লাগলো কী যে ঘোর!!
নরম হাতের প্রথম ছোঁয়ায় মন,
উঠলো জেগে, মাতলো যেন দখিনা পবন।
বলল, "তবে চল--"
খুশিতে জুঁইর আঁখি দুটি অশ্রুতে ছল ছল!

তারপরে কী হলো তাদের হিসেব রাখা দায়,
পাগলা হাওয়ার মাতাল নেশায় উড়ছে যেন বায়।
কখনো যায় গঙ্গার ঘাটে, কখনো ঝাউবন,
কখনো যায় আম বাগানে উছল খুশির মন।
ভুলে গেছে পড়ালেখা, ভুলেছে সব কাজ,
নবীন প্রাণের ভালোবাসার বান ভাসানো রাজ!
তুমুল বৃষ্টি, চৈতালি রোদ কী যে ভালো লাগে!
তরুণ মনে এ অনুভব জাগেনি এর আগে।
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁটে,
নিদাঘ রোদে হাঁটে যেন সূর্য গেছে পাটে।
একটা কুলফি দুজনে খায় অধরে অধর,
ছোঁয়ায় মনে জেগে ওঠে কাল বৈশাখি ঝড়।
সবুজ ফসল যেমন দোলে উড়নচণ্ডী বায়,
তেমনি দোলে অশান্ত মন পুলক জাগে গায়।
চলছিল বেশ--
হঠাৎ এলো ঝড়
ক্রীড়ারত হরিণ শাবক ধ'রলে মৃগরাজ,
যে দশা হয়
তেমনি ওদের মাথায় যেন পড়লো এসে বাজ।

কী হলো তা মুখে বলা দায়,
পড়লো পুলক হুমড়ি খেয়ে ভীষণ লাথির ঘায়!
হেসে হেসে গঙ্গার পাড়ে হাতে রেখে হাত,
চলছিল দুই- তখন চন্দ্রপ্রভার সন্ধ্যা রাত।
চলার পথে জুঁইয়ের বাবার নজরে যেই পড়ে,
আর কোথা যায়? শান্ত আকাশ ঘিরল বজ্র ঝড়ে।
লাঠি দিয়ে জুঁইয়ের বাবা মারলো কী যে মার!
তরুণ পুলক প'ড়ে ভুঁয়ে ভাঙলো পায়ের হাড়।
বললো রেগে- "ভিখারির ছাও!
আমার মেয়ের সাথে করিস প্রেম"?
এতো সাহস!
নাকি রে তোর বাজি জেতার গেম?
জুঁহি গিয়ে ধরলো বাবার পায়ে,
আর মেরো না, মরে যাবে, কে মাখে তা গায়ে!
জুঁইয়ের হস্ত ধ'রে,
চললো বাড়ি জুঁইয়ের বাবা, পুলক রইলো প'ড়ে।

শূন্য নদীর পাড়--!
এই জুটিকে নদীর তীরে কেউ দেখেনি আর।
প্রেমের মাশুল গুনলো তরুণ জুটি--
থামলো প্রেমের উতাল হাওয়া
রইলো যে গান হয়নি গাওয়া
বিত্তের এতো ঝাঁজ!!
থেমে গেল নবীন প্রেমের বান ভাসানো রাজ।
হারিয়ে গেল চিরতরে তরুণ দুটি প্রাণ,
থেমে গেল হাসি খেলার বেহিসেবি গান।

০৩/০৮/২০২৪ ইং

প্রেম শাশ্বত। প্রেম ঐশ্বরিক দান। প্রেম ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু, জাত-পাত এবং ধর্মের ভেদাভেদ মানে না। তবে অসামঞ্জস্য প্রেমের পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মন্দ ফল বয়ে আনে। তরুণ বয়সের প্রেম এক সীমাহীন উন্মাদনা! তাদের মনে থাকে বাধনহারা উল্লাস! ভুলে যায় আপন সত্তা, স্বীয় কাজ। তেমনি দুটি তরুণ- তরুণীর প্রেম-ভালোবাসা, উন্মাদনা এবং পরিণতি নিয়ে এই কবিতা। যদি কারো ভালো লাগে কৃতজ্ঞ থাকবো--