আমি সেই দিশা--
যাকে একদিন আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে তোমরা
আমার প্রতি ছিল তোমাদের অতল সিন্ধু ভালোবাসা
আমার নরম তুলতুলে গাল টিপে দিয়ে বলতে--
লক্ষ্মীসোনা
কী ভীষণ মিষ্টি মেয়ে
আমার মসৃণ ত্বকে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলতে-
কী সুন্দর
তোমরা আমার পাড়াতুতো
মামা-মামি, কাকা-কাকি আরো কত কী
ছোট্ট ছিলাম
তখন বুঝতে পারিনি এ তোমাদের মিথ্যে ভালোবাসা
লোভাতুর মনের বিকৃত ভালবাসা
আজ বুঝতে পারছি

যখন-তখন ঢুকে পড়তে বাড়িতে
মায়ের উদ্দেশে বলতে শুনতাম--
"ও দিদি, কিসের ঘ্রাণ পাচ্ছি"
বসো না ভাই
দুটো পিঠে বানাচ্ছি মেয়ের জন্য
"খেয়ে যাবে কিন্তু" ব'লে অমায়িক হাসি দিতো মা
অন্য কেউ বা এসে বলতো--
"ও বৌদি, গন্ধে তো ম--ম--
বাড়ি থাকতে পারলাম না
এসে পড়লাম"
ঠিক আছে ভাই, বসো
মেয়েটার জন্য একটু বিরিয়ানী করছি
"খেয়ে যেও" ব'লে এক গাল হাসি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো কাজে
তোমরা ছিলে মায়ের পাড়াতুতো ভাই, দেবর ইত্যাদি
মায়ের সুস্বাদু রান্নার দারুণ ভক্ত

পথ দিয়ে যেতে যেতে
গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলে আসতে ভেতরে
আত্মীয় বান্ধবহীন মায়ের বিষণ্ণ জীবন
তোমাদের আগমনে অপার আনন্দ পেত
খুশিতে ভ'রে যেত তার বুভুক্ষু মন
সজল বাতাসে যেভাবে উদ্বেলিত হয় লতা-পাতা
ঠিক সেভাবে

হঠাৎ করেই বাবা চলে গেলেন ওপারে
আমি আর মা প'ড়ে গেলাম অথই সাগরে
বাহারি রান্নার জৌলুস গেল কমে
তোমাদের আগমনে পড়ে গেল ভাটা
জৌলুস কমলো তোমাদের রকমারি আদরের
কোন প্রয়োজনে মা ডাকলে তোমরা বলতে --
ব্যস্ত আছি বৌদি
"আসবো" ব'লে আসতে না তো আর
কেউ আবার "আসছি দিদি" বলে পগার পার
তখন আমার বয়স এগারো
একটু আধটু বুঝতে শিখেছি তোমাদের নিটোল বাহানা
মা যখন চলে গেলেন নীরবে
আমি তখন পনেরো
পিতৃ-মাতৃহীনা এতিম দিশা
নিঃসীম অভাব আর ক্ষুধার অরণ্যে বাস
কাছে থেকেও তোমরা তখন যোজন যোজন দূরে
আমার উপলব্ধির শিকড়ে তখন সিঞ্চিত হয় চেতনার জল
তোমরা প্রলুব্ধ ছিলে মায়ের রান্নার সুগন্ধে
ভালোবাসা ছিল লোক দেখানো মুখোশ
ওই চরম দুর্দিনে তাই করে দিলে পর
আগের আদর ছিল ফাঁকি যে তুখোড়

আমি নিঃসঙ্গ দেদীপ্যমান কিশোরী এক
চোখের সামনে নিরাশার নিশ্চুপ আঁধার
আমার প্রতি শকুনের লোলুপ দৃষ্টি
হায়েনার নেশাতুর চাহনি
দুমুঠো ভাতের জন্য, আশ্রয়ের জন্য হাহাকার
কত হাতে ধ'রেছি পায়ে ধ'রেছি
দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছো তোমরা

মনে পড়ে? আমি সেই দিশা--
আজ আমার বিত্তের পসরা
কত শেয়াল শকুনের লোভাগ্নি থেকে বেঁচেছি কৌশলে
তাই আবার এলাম পুরনো ডেরায়
নতুন করে তোমাদের দেখার লোভে
আমার উছলে পড়া ঊর্বশী যৌবন
বিলাস ব্যাসনের ঝলকানি দেখে তোমরা প্রলুব্ধ
তোমাদের চোখে আজও লোভাগ্নির বিচ্ছুরণ
ধাতস্থ হয়েই খুলে দিলে বেহিসেবী আদরের ডালি
কেমন আছিস মা--
কতদিন পরে এলি--
ইত্যাদি ইত্যাদি
এ যেন নতুন বোতলে পুরনো মদ
ভবি কি আর ভোলে
অভ্যস্ত আঁখিতে জরিপ করছি তোমাদের মুখোশ ভালোবাসা

২৪/০৫/২০২৪ ইং

বিঃ দ্রঃ সমাজের বাস্তব চিত্র। কবিতাটা একটু বড়ো। যারা পড়বে তাদের জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ এবং শুভকামনা জানাচ্ছি।