এই করোনা কালে কোনো এম্বুলেন্স না পেয়ে একজন নারী তার করোনা আক্রান্ত শশুরকে নিজের পিঠে তুলে নিয়ে পায়ে হেঁটে হাসপাতালে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার এই লেখার অবতারণা--
কী হে! চমকাও কেন?
আমি নারী! দশভূজা--
দশ হাতে করি কাজ,
যখন তোমরা হাতটা গুটাও আমরাই করি রাজ।
দুষ্টুরে করি দমন আমরা শিষ্টেরে করি পালন,
এক হাতে নিয়ে দোতারা আমরা কখনো বা হই লালন।
এই আমরা--
ঘরের লক্ষ্মী, নিজালয়ে থেকে মিটাই সবার ক্ষুধা,
শিশুদের মুখে তুলে দেই সুখে শান্তি পিয়াসি সুধা।
সবার মুখেতে অন্ন জুগিয়ে আমরা আহার করি,
নিজের স্বপ্ন বিকিয়ে দিয়েই সুখের আবাস গড়ি।
আমি অগ্নি--
এই আমি পারি আমার অনলে পোড়াতে সুখের ঘর
আবার--
আপন আলয়ে সৃজিতে স্বর্গ হতে পারি সুধাকর।
দুঃখের মেঘ ওড়াতে পারি হে! হয়ে বৈশাখী ঝড়,
আপনারে ভুলে আমরাই পারি কাছে টেনে নিতে পর।
হেসো না বন্ধু--!
অবলা বলেই ভেবো না কখনো আমরা সবার বোঝা,
কঠিনে-কোমলে গঠিত হৃদয় নয় জানা খুব সোজা।
আর্ত সেবিতে রাত জেগে ফেলি আমরা চোখের পানি,
আপনজনের ভালোবাসা পেতে টানি সংসারে ঘানি।
সেই আমরাই--
কাঁধে তুলে নেই, করোনা পীড়িত আপনজনের দেহ,
তোমরা ভয়েতে পালিয়ে বেড়াও
খোঁজো নিরাপদ গেহ।
অভাবের ঘরে কাস্তে-শাবল হাতে নিয়ে করি কাজ,
অবলা বলেই আমরা নীরবে মানি তোমাদের রাজ।
তোমরা পুরুষ! ভোগবাদী হয়ে ভাবো আমাদের পণ্য,
অথচ আমরা--
কর্ম, শিক্ষা, নিপুণতা দিয়ে সমাজে অগ্রগণ্য।
আমরা চালাই কলের জাহাজ, দেশের সেবায় ন্যস্ত,
তোমরা তখন ক্ষমতা দখলে, কূট-কাচালিতে ব্যস্ত।
জগতে কখনো হয়নি কো কাজ পুরুষের হাতে একা,
ইতিহাস ঘাটো জানতে পারবে সব আছে তাতে লেখা।
বিশ্বাস করে এই হাতে যদি রাখো তোমাদের হাত,
আমরাই পারি ভালোবাসা দিয়ে করতে জীবনপাত।
লোভ-লালসায় মোহের টানেই হয়তো বা কিছু নারী,
বিলিয়ে দিয়েছে আপনার মান, সব দোষ নয় তারি।
তোমরাও দায়ী, ভুলাও তাদের মোহের অগ্নিপাশে,
ভ্রষ্টাচারের তকমা বিলিয়ে দুঃশাসনেরা হাসে।
আমরা দারিকা, আমরা ভগ্নি, আমরা জন্মদাত্রী,
সৃষ্টি করতে শান্তির সুধা আমরা অগ্রযাত্রী।
তাই আমাদের করো না কো হেলা,
ঝরিয়ো না আঁখি জল,
আমরাই পারি ফোটাতে ধরায় সুখের লাল কমল।
০৯/০৬/২০২১ ইং