সুস্থ থাকলে অসুস্থ মন, হিংসে জাগে মনে,
ধর্ম-বর্ণের জাত্যভিমান জাগে ক্ষণে ক্ষণে।
মানবতা ভুলে সবাই হিন্দু-মুসলিম হয়।
কেউ ভাবে না যখন-তখন আসবে রে প্রলয়!

বিপদ যখন হামলে পড়ে বাঘের মতো ঘাড়ে,
অমনি হয়ে চৈতন্যোদয়, পুচ্ছ ধ'রে নাড়ে।
ধর্মের প্রাচীর ভেঙে সবার জাগে ভালোবাসা,
হিংসে-বিদ্বেষ ভুলে জাগে নতুন দিনের আশা।

সুখের সময় কেন জাগে ধর্ম-বর্ণের ভেদ?
কেন জাগে প্রতিহিংসার মর্মভেদী জেদ?
তবে তো ওই ধর্ম মন্দ চালায় বেভুল পথে,
আল্লাহ্-হরির নামে যুদ্ধ চলে গজে-রথে।

কে বড়ো কার ধর্ম বড়ো লাগে লাফালাফি,
শক্তিমানে দুর্বল মেরে ভরে পুণ্যের ঝাঁপি।
দুর্বিপাকে সব ভুলে যায় সবাই সবার ভাই,
মানবিক এ ধর্ম বড়ো? নাকি কুলোর ছাই?

৩০/০৭/২০২৪ ইং

বিঃ দ্রঃ সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ওপার বাংলার পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। এই চরম দুর্বিপাকে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, সর্বস্তরের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। কী দারুণ দৃশ্য! চোখ জুড়িয়ে যায়!! ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং সাম্প্রতিক স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। অথচ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, মন্দির ভাঙচুর ইত্যাদি হয়েছে! অনেক সুশিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মানুষ এর বিরোধিতা করেছেন। আবার অনেক কুশিক্ষিত, সনদধারী কুলাঙ্গার এর সমর্থনও করেছে।

বর্ণিত দুটো ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমার কাছে মনে হয়েছে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে, সুস্থ পরিবেশে মানুষ বেশি স্বার্থপর, হিংসাশ্রয়ী হয়ে পড়ে। হয়ে পড়ে ধর্মবিদ্বেষী। কিন্তু ভয়ংকর বিপর্যয়ে, দৈব-দুর্বিপাকে মানুষ ধর্মীয় বিদ্বেষ, ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে গিয়ে এক মানবিক চেতনায় জেগে ওঠে। তাই বলে আমরা ঘন ঘন প্রলয়ঙ্করী বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় আশা করতে পারি না! মানুষ হিসেবে সুস্থ ভাবে, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য তাই সবার আগে দরকার মানবিক চেতনা। সবার প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত "আমরা মানুষ"। তারপর ধর্মীয় পরিচয়, রাষ্ট্রীয় পরিচয় থাকতেই পারে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং পরমাণু বিজ্ঞানী এ. পি. জে. আব্দুল কালামের একটি বাণী প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন,"হিন্দু-মুসলিম না হয়ে প্রতিবেশী হবার চেষ্টা করুন, কারণ হঠাৎ হয়তো রাত্রি দুটোয় বিপদে পড়লেন। তখন শুধু প্রতিবেশীই আসবেন! ধর্ম নয়!" আদর্শ সমাজ, ধর্ম এবং রাষ্ট্র গঠনের জন্য এই বাণী দারুণভাবে প্রণিধানযোগ্য। এ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমার আজকের কবিতা।