পাল্কীর গান কবিতার লিঙ্ক :
http://www.bangla-kobita.com/satyendranath/palkir-gaan/
ঝর্ণা কবিতার লিঙ্ক :
http://www.bangla-kobita.com/satyendranath/jhorna/
ইলসে গুড়ি কবিতার লিঙ্ক :
http://www.bangla-kobita.com/satyendranath/ilshe-guri/
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে ছন্দের জাদুকর বলা হয়, আমাদের সকলের জানা l "দূরের পাল্লা"র সূত্র ধরে
আমরা বোঝার চেষ্টা করব কি কারণে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রে তিনি এই বিরল সম্মানজ্ঞাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন l
প্রথম কথা শব্দের ওপর তাঁর ছিলো অসাধারণ দখল l এই দখল তাঁর জন্মেছিল কারণ তিনি বাংলা ভাষায় বহু নতুন শব্দের সৃষ্টি করেছিলেন l কি ভাবে ? তিনি আরবি, ফারসি প্রভৃতি অনেক বিদেশী ভাষার শব্দের সঙ্গে বাংলা ভাষার শব্দাবলীর মিশ্রণ ঘটিয়ে অনেক নতুন শব্দ সৃষ্টি করেছিলেন l এর সঙ্গে তিনি অনেক নতুন বাংলা বাগধারা সৃষ্টি করেছিলেন l তাঁর পূর্বসূরি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও অক্ষয় কুমার বড়াল ছিলেন তাঁর কাব্য রচনার প্রাথমিক প্রেরণা l পরে তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের দ্বারাও প্রভাবিত হন l কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই সকলের প্রভাব কাটিয়ে তিনি ছড়া ও কবিতা রচনার ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র নিজ ঘরানা গড়ে তোলেন l
বহু বিদেশী ভাষা থেকে শব্দ নিয়ে বাংলা শব্দের সঙ্গে তার মিশ্রণ ঘটিয়ে তিনি অনেক নতুন বাংলা শব্দ সৃষ্টি করেছিলেন, বহু বাংলা বাগধারা সৃষ্টি করেছিলেন - একথা আগেই বলেছি, এর সঙ্গে তিনি যেটা করেছিলেন তা হলো, তিনি আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরাজি, ফরাসি - বিশ্বের সব সমৃদ্ধ ভাষা থেকে কবিতা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন l এর ফলে যেটা হয়েছিল, শব্দ, তার উপযুক্ত ব্যবহার - এর ওপর তাঁর অসাধারণ দখল চলে এসেছিল l তিনি ছড়া, পদ্য ও কবিতায় যে ছন্দ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, অবলীলায় তিনি সেটা করেছেন l বাংলা ভাষার শব্দাবলী ছিলো তাঁর অনুগত, তিনি যে ছিলেন বহু বহু শব্দের জনক ! দেশ বিদেশের বহু ভাষার শব্দাবলী ছিলো তাঁর আঙ্গুলের ডগায় l ফলে শব্দ ব্যবহার করে কোনো ছন্দ নির্মাণ করতে তাঁকে কখনও বেগ পেতে হয় নি l তাই তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি "দূরের পাল্লা", "পালকির গান", "ইলসে গুড়ি", "ঝর্ণা" প্রভৃতি সুন্দর ছন্দময় অসাধারণ সব ছড়া ও কবিতা l
এবার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের একটি কবিতায় ছন্দের প্রয়োগ নিয়ে একটু আলোকপাত করলে ছন্দ ব্যবহারে তাঁর মুন্সিয়ানাটা বোঝা যাবে l
কবির বিখ্যাত ছড়া "দূরের পাল্লা" নিয়েই চর্চা করি l
http://www.bangla-kobita.com/satyendranath/durer-palla/
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত "দূরের পাল্লা" ছড়াটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ও স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা l ছড়া লিখতে স্বরবৃত্ত ছন্দ ব্যবহৃত হয়, এর পাঠ হয় দ্রুত এবং প্রতি মূল পর্ব হয় চার মাত্রার l তবে এখানে ছড়ার শুরুতে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার পর্বগুলিও চার মাত্রার l একটি মাত্রা হলো শব্দের যতটুকু অংশ নিঃশ্বাসের বাতাসের এক চাপে উচ্চারণ করা যায় l স্বর দুরকম - মুক্ত ও বদ্ধ l মুক্ত স্বর এক বর্ণ নিয়ে এবং বদ্ধ স্বর দুই বর্ণ নিয়ে l স্বরবৃত্ত ছন্দের মজা হলো এখানে বদ্ধ বা মুক্ত সব স্বর এক মাত্রা l কিন্তু মাত্রাবৃত্ত ছন্দে মুক্ত স্বর এক মাত্রা এবং বদ্ধ স্বর দুই মাত্রা l
স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে অন্ত্যমিল থাকে এবং পাঠের সময় দ্রুততালে তা পড়তে হয় l মাত্রাবৃত্ত ছন্দের চরণেও অন্তমিল থাকে, তবে তার পাঠ হয় ধীর লয়ে l
মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা এই ছড়াটি বিখ্যাত ছড়াকারদের মুখে আবৃত্তি শুনলে দেখা যাবে তাঁরা কেমন কখনো ধীর লয়ে আবার কখনো দ্রুততালে ছড়াটি আবৃত্তি করছেন এবং তা কি সুন্দর শোনাচ্ছে l
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে ছন্দের জাদুকর কেন বলা হয়, প্রখ্যাত ছড়াকারদের মুখে "দূরের পাল্লা" ছড়াটির আবৃত্তি বার কয়েক শুনলে বোঝা যাবে এবং ছন্দ সম্বন্ধেও মোটামুটি একটা ধারনা হবে l l
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কবিতায় মাত্রাবৃত্ত ছন্দের নানাবিধ সফল প্রয়োগের পাশাপাশি বৈদিক গায়ত্রী ছন্দে বাংলা কবিতা রচনায় সফলতা লাভ করেন। তাঁর রচিত গায়ত্রী ছন্দ বর্তমানে গৌড়ী গায়ত্রী নামে পরিচিত।
ছন্দের চর্চা যারা করেন এমন সকল কবি, ছড়াকারদের কাছে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ছন্দের জাদুকর একটি আদর্শ l