২রা জানুয়ারি ২০১৭ রায়গঞ্জ পূর্বাশাপাড়া ও ইন্দিরা কলোনীতে আমাদের ঘুম ভেঙ্গেছে বাঘের ডাকে এবং মানুষের শোরগোলে l রায়গঞ্জ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত একটি ছোট জেলা শহর এবং এখান থেকে ২০০-২৫০ কি.মি. র মধ্যে কোনো অভয়ারণ্য নেই l আর মাঝখানের অঞ্চলটা পুরো লোকালয় l ফলে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ রায়গঞ্জ শহরের রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়াবে - ব্যাপারটা যেমন আজব তেমনই কথাটা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে ! কিন্তু যা সত্যি, তা তো সত্যিই ! সারাদিন চলে বাঘে মানুষে বাঁচার লড়াই l বেশ কিছু মানুষ বাঘের আক্রমণে আহত হন l ভাগ্যক্রমে কোনো জীবনহানির ঘটনা ঘটে নি l শেষ পর্যন্ত বিকাল নাগাদ বাঘটি একটি ঘরে ঢুকে পড়ে l বাইরে থেকে দরজায় শিকল আটকে দেওয়া হয় l জলপাইগুড়ি থেকে বন দপ্তরের অফিসারেরা এসে বিশেষ ব্যবস্থায় বাঘটিকে নিয়ে যান l বাঘটি ছিল জাগুয়ার শ্রেণীর একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ l
রায়গঞ্জ শহরের ইতিহাসে কোনোদিন যা ঘটে নি, তা ঘটলো আমাদের জীবনকালে l সাক্ষী থাকলাম এক বিরল ঘটনার l
আমাদের চোখের সামনে এরকম একটি আজব ঘটনা ঘটবে, এবং তা নিয়ে কোনো ছড়া, কবিতা, গান, গল্প রচিত হবে না, তা তো হতে পারে না !
এই অভিনব ঘটনাটিকে সকল কবিতাপ্রেমী মানুষের কাছে, বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার সংকল্প নিয়ে তাই এই উপলক্ষ্যে আপাতত একটি ছড়া l
ঘরে আটকে পড়া বাঘের সঙ্গে স্থানীয় কচিকাঁচাদের একটি কাল্পনিক সংলাপ l
রায়গঞ্জে বাঘ মামা
বাঘ মামা বাঘ মামা এলে কোথা থেকে ?
জনা কুড়ি খেল খোঁচা দোষ ব্যতিরেকে l
সতের সালের শুরুটা বিরল অভিজ্ঞতা দিল,
ঘুম ভাঙ্গতেই সাতসকালে এ কি হুলস্থূল !
জলদাপাড়া নাকি বিহার কোথায় তোমার বাস ?
আমাদের এলাকায় ঢুকে কেন করলে সর্বনাশ ?
বলেন শেষে বাঘ মামা "আরে শোন্ ভাগ্নে শোন্
কাল রাতে নববর্ষে পিকনিক হল এমন,
বাজল ডি. জে. কান ফাটানো পালাই কোথায় বল,
যেখানেই যাই হট্টগোল, ছেলে ছোকরার দল l
তাই তো আমি ছুটতে ছুটতে এসে পড়েছি হেথায়,
তোরা কেন শোরগোল করে আকাশ করলি মাথায় ?
তোদের আমার দৌড়-ঝাঁপেতে আহত কিছু মানুষ
তোরা আমায় ধরতে চাস, আমি কি সেই ফানুস ?
এই তো দিব্যি ঘরের মধ্যে রয়েছি আয়েশে বেশ
আমায় বনে পাঠিয়ে দিলে তোদের বিপদ শেষ l"
"বনে আমি যাবই চলে তোরা থাক ঘরে
বন-টা কিন্তু আমার ঘর, রাখিস মনে ধরে l"
** ছোটদের কচিপাতা ১৪২৫ পুজাবার্ষিকী তে প্রকাশিত
** সমর পাল সম্পাদিত খুশির অভিনন্দন সংকলনে প্রকাশিত, নববর্ষ, ১৪২৬, এপ্রিল, ২০১৯