ভাষা আমাদের পরিচয়, আমাদের অস্তিত্ব l বাংলাভাষার যে সময়কাল, যে সময় জুড়ে আমরা বাংলা ভাষাকে পাচ্ছি, সংক্ষেপে তার রূপরেখাটা এরকম l প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এশিয়া ও ইউরোপের অধিকাংশ ভূখন্ডে যে জাতি বাস করত, তারা মূলত যে ভাষায় কথা বলতো তার পোশাকি নাম ছিল ইন্দো- ইউরোপীয় ভাষা। এই মূলভাষাটির দুটি ভাগ - কেন্তম ও শতম। শতম শাখাভুক্ত যে গোষ্ঠী দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দিকে চলে আসে, তাদের বলা হলো আর্য। আর্য ভাষার আবার তিনটি স্তর - ইরানীয়, দরদীয় এবং ভারতীয়। যে গোষ্ঠী খাইবার গিরিপথ দিয়ে ভারতে চলে আসে, তাদের ভাষার নাম ভারতীয় আর্যভাষা। এই ভাষায় লেখা হয় বেদ।
সপ্তম শতকে প্রসিদ্ধ বৈয়াকরনিক পাণিনি এই বৈদিক ভাষার কিছু সংস্কার করেন এবং একে শিক্ষিত জনের ভাষা করে গড়ে তোলেন l যেহেতু সংস্কারের মাধ্যমে এই ভাষার সৃষ্টি তাই তার নাম হয় সংস্কৃত ভাষা। এই ভাষায় রচিত হয় রামায়ণ, মহাভারত। কিন্তু গুরুগম্ভীর, ব্যাকরণে আবদ্ধ, জনসাধারণের উচ্চারণে অসুবিধা - তাই সংস্কৃত ভাষায় কিছু পরিবর্তন এনে, বাঁধা নিয়মে কিছু শিথিলতা এনে, তাকে কিছুটা সহজ করে সৃষ্টি হলো পালি ভাষা। পালিভাষায় রচিত হয় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ 'ত্রিপিটক'।
ভাষার বিবর্তনের ধারা চলতে থাকে l পালি ভাষা আরও পরিবর্তিত হয়ে ক্রমশ: জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী হতে থাকে। এর সাথে অনার্যদের ভাষা মিশ্রনের ফলে সৃষ্টি হয় প্রাকৃত ভাষা। এই যে প্রাকৃত ভাষা, এটা আসলে ছিল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথ্যভাষা l ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ছিল বিভিন্ন প্রাকৃত ভাষা। এমনই একটি ছিল মাগধী প্রাকৃত যা মূলত: ছিল বিহার অঞ্চলের ভাষা। মাগধী প্রাকৃতের পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নিল বাংলা ভাষা।
আজ বিশ্বে প্রচলিত প্রায় ৭০০০ ভাষার মধ্যে বাংলা পঞ্চম! বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলছেন। বাংলা ভাষার জন্যে লড়াই এর সূত্র ধরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে l বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, মাতৃভাষা বাংলা l পশ্চিমবাংলায় প্রায় ১০ কোটি মানুষের ভাষা বাংলা l তিনটি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা একজন বাঙালি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর l তিনি এনে দিয়েছেন সাহিত্যে নোবেল l
তাহলে দেখা যায় সকল ভাষার মতো বাংলা ভাষাও বিভিন্ন বাঁক বদলের মাধ্যমে সৃষ্ট l তবে বাংলা ভাষার লিখিতরূপ খুব বেশি দিনের নয়; মাত্র হাজার বছরের কিছু বেশি সময়।
বাংলা ভাষার প্রাথমিক পর্যায়ের লিখিত রূপ পাই চর্যাপদে। যা লিখিত হয়েছে দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। চর্যাপদের শ্লোক বা কবিতাগুলো পাঠ করে এর অর্থ অনুধাবন করতে কষ্ট হয়। আলো-আঁধারে রহস্যময় যেন l তাই হয়তো অনেকে এই ভাষাকে 'সন্ধ্যাভাষা' বলে থাকেন। আধুনিক বাংলা ভাষার সঙ্গে এই ভাষার বাহ্যিক রূপে মিলও কম l
জন্মের পর থেকে বাংলা ভাষা পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে চলেছে মানুষের কণ্ঠে, কবির কবিতায় l মধ্যযুগের রচনা বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গলকাব্য l এই রচনাগুলো বাংলা বলে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না l সপ্তদশ শতকের পর থেকে শুরু হয় গদ্য লেখার প্রচলন। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের হাতে এসে ধীরে ধীরে পরিশীলিত হয়ে উন্নত হতে হতে ভাষা পূর্ণতা পেল l বলা যেতে পারে রবীন্দ্রযুগে এসে বাংলা ভাষা পূর্ণতা পেল l পূর্ণতা পেল এই অর্থে যেহেতু রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহুমুখী প্রতিভার দ্বারা বাংলা ভাষাকে সকল ধরনের কাজের, সকল ধরনের সাহিত্য রচনার উপযোগী করে গড়ে তুলেছিলেন l বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে বৃহৎ সাহিত্য পরিসর গড়ে উঠলো l ভাষার হাত ধরে সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত হলো l তারপরে এলো ইংরেজ শাসনকাল l এর ফলে বাংলাভাষার ওপর একটা আক্রমণ এলো l যখন একটি জাতি পরাধীন হয় তখন সেই জাতিকে যে নানামুখী আক্রমণ ও আগ্রাসনের শিকার হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ l মানুষকে তার শিকড় থেকে উপড়ে ফেলে নিজের ছাঁচে ঢেলে গড়ে তোলার প্রয়াস চলে l বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির ওপর এই আক্রমণ এলো ইংরাজি ভাষা থেকে l ইংরেজী ভাষা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য, জীবিকা অর্জনের জন্য, সাফল্যের জন্য এতো জরুরী মনে হলো যে বাংলা ভাষা ক্রমেই যেন পিছিয়ে পড়তে লাগলো l এর একশত নব্বই বছর পর দেশ স্বাধীন হলো l সংবিধান প্রণীত হলো l ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠিত, পুনর্গঠিত হলো l ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবহৃত বহু ভাষা সংবিধানের ষষ্ঠ তপশীলে স্থান পেল l তার মধ্যে বাংলাভাষাও স্থান পেলো l সকল আঞ্চলিক ভাষার চর্চা চলতে লাগলো l কিন্তু এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেল, ভারতের অন্য রাজ্যগুলি যোগাযোগকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার যেমন চর্চা জারি রাখলেন, তেমনি তাদের যে স্থানীয় ভাষা সেই ভাষাও সমান গুরুত্ব দিয়ে তারা চর্চা করতে লাগলেন l কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা গেল ইংরেজি ভাষা যে গুরুত্বের সঙ্গে চর্চা হতে লাগলো, ক্রমেই সরকারি কাজে, প্রশাসনিক কাজে, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে আসতে লাগলো l বিগত এক দশকের অধিক সময় ধরে এই প্রবণতা খুব বেশি করে লক্ষ্য করা যাচ্ছে l ইংরাজি ভাষা, সঙ্গে হিন্দি ভাষা বাংলাভাষার ওপর আক্রমণ শানাচ্ছে l সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে বহু বহু ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয় শহরে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং দেখা যাচ্ছে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলি যেন পিছিয়ে পড়ছে l অভিজাত উচ্চবিত্ত শ্রেণীই শুধু নয়, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিভাবকেরাও ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছেন l দেখা যাচ্ছে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় থেকে ছেলেমেয়েকে সরিয়ে নিয়ে তাঁরা ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন l ভাষাচর্চার বিষয়টি এই সব কিছু নিয়েই ভাবতে হবে l যদি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে ছাত্র কমে আসে তাহলে বাংলা ভাষার চর্চাও কমে যাবে l চাকরির ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় বাংলা ভাষা শিখে কোনো লাভ হচ্ছে না, ইংরাজি ভাষা না জানলে চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষা না শিখে বাঙালি ছেলেমেয়েরা যদি ইংরাজি ভাষার দিকে ঝুঁকে যায়, তাহলে কিন্তু আখেরে বাংলা ভাষা দুর্বল হবে l তাহলে এটা বোঝা যাচ্ছে যে ভাষাকে তার বিভিন্ন প্রয়োজনের জায়গায় উপযোগী করে রাখতে হবে l বাংলা ভাষা যারা শিখছে তারা ইংরাজি ভাষা যারা শিখছে তাদের থেকে সামাজিকভাবে বা অর্থনৈতিকভাবে কোনো অসুবিধাজনক জায়গায় থাকবে না এই বিষয়টিকে সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে l এই নিশ্চয়তা যদি থাকে তাহলে নতুন প্রজন্ম সেই ভাষা শিখবে, সেই ভাষায় পড়াশোনা করবে, সেই ভাষায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলি চলছে সেগুলির প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে l এই বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব আছে, সমাজের দায়িত্ব আছে, স্থানীয় ভিত্তিতে যে প্রশাসনগুলি রয়েছে তাদের দায়িত্ব আছে l এবং সর্বোপরি একবারে যে সাধারণ মানুষ তাঁদেরও দায়িত্ব আছে l আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, এই ভাষায় নানাবিধ চর্চা করি, কিন্তু এই ভাষা ব্যবহার করতে আমরা কতোটা গর্ববোধ করি সে বিষয়ে আমাদের একটা সংশয় আছে, একটা স্ববিরোধিতা আছে l অনেক বাবা মা আছেন তাঁদের ছেলেমেয়ে ইংরাজি ভাষায় গড়গড় করে কথা বলতে পারলে গর্ববোধ করেন l তুলনায় বাংলা ভাষার ব্যবহারে তারা যদি একটু দুর্বলও থাকে তার জন্য তাঁরা লজ্জিত নন, বরং বিষয়টিতে তাঁরা অহংকার উপভোগ করেন l পশ্চিমবাংলার বুকে দোকানপাট যেগুলি আছে, তার অনেকগুলোতেই ইংরাজি ভাষায় দোকানের নাম ইত্যাদি লেখা থাকে l অন্যান্য প্রদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে প্রদেশের দোকান, সেই প্রাদেশিক ভাষায় বিষয়টি লেখা হয় l এর থেকেই প্রমাণ হয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের যথাযথ আবেগ, ভালোবাসার ঘাটতি আছে l
যে কোনো ভাষা যতো উন্নতই হোক তা প্রতিনিয়ত চর্চার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় l দৈনন্দিন জীবনে যেমন সেই ভাষার ব্যবহার চলে তেমনই কাব্যে সাহিত্যে সংস্কৃতিতে নিত্য নতুন সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সেই ভাষা এগিয়ে যায় l কবি, ছড়াকার, লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী এই ধারা এগিয়ে নিয়ে চলেন l তাঁদের সৃষ্টি নানা পুস্তক ও শিল্পকর্মে ধরা থাকে l এই পুস্তক, এই শিল্পকর্ম ঐ ভাষার যাঁরা সব ধরণের ব্যবহারকারী তাঁদের কাছে কতোটা গৃহীত, সমাদৃত হয় তার ওপর নির্ভর করে সেই ভাষায় যাঁরা সৃজনশীল চর্চা করছেন তাঁদের উৎসাহ প্রেরণা l
অনেক অনুষ্ঠানে অনেক রকমের উপহার ইত্যাদি আমরা প্রদান করে থাকি l ভোগবাদী সমাজে এমন বহুবিচিত্র জিনিসের অভাব নেই l সেই উপহার তালিকায় যদি আমরা আমাদের প্রিয় পুস্তকগুলিকে সংযোজিত করি তাহলে একসঙ্গে অনেকগুলি কাজ হবে l প্রকাশনা শিল্প উৎসাহিত হবে l প্রকাশনা শিল্প উৎসাহিত হলে কবি লেখকেরা অনুপ্রাণিত হবেন l তাঁরা নতুন উদ্যমে লিখবেন l ভাষার চর্চা বৃদ্ধি পাবে l ভাষা সমৃদ্ধ হবে l মানুষ বই উপহার পেলে সেগুলি পাঠ করবেন l মনন সমৃদ্ধ হবে l ভাষা সংস্কৃতিকে পথ করে দিবে l সামগ্রিকভাবে বাঙালি জাতি উন্নত হবে l
মানুষ যখন ভাষাকে ভালোবাসবেন, তখন সেই ভাষার চর্চা যাঁরা করেন তাঁরাও উৎসাহিত হবেন, নতুন নতুন সৃষ্টি বেরিয়ে আসবে তাঁদের হাত ধরে l ভাষা নিয়ত সমৃদ্ধ হবে l ভাষা সংস্কৃতির চর্চা যাঁরা করেন তাঁরা অর্থনৈতিক দিক থেকে যে খুব একটা লাভের মুখ দেখেন তা নয়, নেহাত ভালোবাসার টানেই তাঁরা এটা করেন l তাঁরা কিন্তু এভাবেই ভাষা সংস্কৃতিকে ধরে আছেন, তাকে সম্মুখপানে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন l এভাবেই ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন l
একটি ভাষা যতো উন্নত হোক, তার শব্দভান্ডার যতো সমৃদ্ধ হোক, তার সাহিত্যসম্ভার যতো ক্লাসিক হোক, সেই ভাষায় নতুন করে সৃজনশীল চর্চা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ধীরে ধীরে সেই ভাষা মৃত ভাষায় পরিণত হয় l ভাষাকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয় তাহলে সবসময় তাকে চর্চার মধ্যে রাখতে হবে এবং এই ভাষার সৃজনশীল চর্চা যাঁরা করছেন তাঁদের পাশে সমাজকে, রাষ্ট্রকে থাকতে হবে l এই ভাষায় যাঁরা কথা বলেন, এই ভাষার ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের মধ্যে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদেরও কিন্তু এই ভাষার প্রতি দায় আছে l এই দায়িত্ব তাঁদের পালন করতে হবে l আজ ভাষা যদি মরে যায়, তাহলে সংস্কৃতি বাঁচবে না, সংস্কৃতি না বাঁচলে জাতি বাঁচবে না l আত্মবিস্মৃত হয়ে অন্য একটি জাতির পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে আমাদের l আজ আমরা বলছি বাঙালি জাতি l বাংলা ভাষা মরে গেলে বাঙালি জাতির অস্তিত্ত্ব কি করে থাকে ? তাই এই ভাষাকে বাঁচানোর দায়িত্ব যাঁরা এই ভাষায় কবিতা লেখেন, ছড়া লেখেন, গল্প উপন্যাস লেখেন, সংস্কৃতিচর্চা করেন শুধু তাঁদের নয়, যাঁরা এই ভাষায় কথা বলেন, এই ভাষার পরিমণ্ডলের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন, বেড়ে উঠছেন, সকলের l এই ভাষার জন্য লড়েই কিন্তু একটি দেশের জন্ম হয়েছিলো, বাংলাদেশের, আমরা জানি l ভাষা আছে বলেই আমরা আছি l
একটি ভাষা বিপন্ন হয় দুদিক থেকে l এক, অন্য একটি ভাষা দ্বারা l দুই, নিজভাষীদের অবহেলা ও উপেক্ষা l ভাষার যে সম্পদ ও শক্তি দিয়ে অন্য একটি ভাষা আগ্রাসন করছে নিজের ভাষার মধ্যে সেই শক্তি সঞ্চার করতে হবে l শুধু ভালোবাসা ও আবেগ দিয়ে একটি ভাষাকে বাঁচানো যায় না l তাকে শক্তিশালী করতে হয় l
কখন একটি ভাষা বিপন্ন হয়ে ওঠে ?
১. সেই ভাষায় কথা বলার লোক যখন কমে আসে l
২. অর্থনৈতিক, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রলোভনে সেই ভাষাভাষীরা অন্য ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেন l
৩. পরবর্তী প্রজন্ম প্রথম ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষা হিসেবে সেই ভাষা শেখে না।
৪. সরকারি কাজে, পঠন-পাঠনে সেই ভাষার ব্যবহার থাকে না বা কমতে থাকে l
৫. সেই ভাষায় সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কমে আসে।
কি করতে পারি আমরা ?
ক) পরবর্তী প্রজন্মকে মাতৃভাষায় পাঠ দেয়া l
খ) মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগী হওয়া l
গ) সরকারি কাজে মাতৃভাষার ব্যবহার সুনিশ্চিত করা l
ঘ) মাতৃভাষায় সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চাকে উৎসাহিত করা l বই কিনে প্রকাশনা শিল্পকে উৎসাহ দেয়া l
ঙ) প্রযুক্তির ব্যবহারে মাতৃভাষাকে সংযুক্ত করে তাকে সদা সর্বদা প্রাসঙ্গিক করে তোলা l
চ) দৈনন্দিন নানা কাজে, অনুষ্ঠানে, দোকানের নামকরণে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা l
ছ) সংকীর্ণতা নয়, বিভিন্ন সমৃদ্ধ ভাষার সঙ্গে সংযোগ ও আদান প্রদানের মাধ্যমে নিজ ভাষাকে সমৃদ্ধতর করে তুলতে হবে l
প্রতিনিয়ত ভাষাচর্চার ব্যাপারটা অব্যাহত রাখতে হবে। ভাষা হলো বহতা নদীর মতো। তার মুখে পলিমাটি জমতে দেয়া যাবে না l