Painting : Napoleon in the Wilderness, 1941
Artist : Max Ernst
Oil on canvas
46.3 cm x 38 cm
The Museum of Modern Art, New York
© 2013, ProLitteris, Zurich
Photo: © 2013, Digital image, The Museum of Modern Art, New York / Scala, Florence
আলোচনা :
ম্যাক্স আর্নস্ট (১৮৯১-১৯৭৬) হলেন একজন প্রখ্যাত জার্মান পরাবাস্তববাদী চিত্রশিল্পী, স্থপতি ও কবি l রোমান্টিসিজমের বিরূদ্ধে "দাদাবাদ" আন্দোলন প্রত্যাখ্যাত হলো l "দাদাবাদ" এর বিকল্প হিসাবে পরাবাস্তববাদ এলো l তার উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই ম্যাক্স আর্নস্ট l
ম্যাক্স আর্নস্টকে surrealist painter দের মধ্যে purest বলা হয় l অন্য যে কোনো surrealist painter দের থেকে অনেক সূক্ষ্ণভাবে তিনি দেখিয়েছেন art of the unconscious কেমন হতে পারে l তাঁকে বলা হয় "priest of the imagination" l তাঁর সৃষ্টিকর্মে তিনি rationalism অর্থাৎ যুক্তিবোধকে defy করে গেছেন অর্থাৎ এড়িয়ে গেছেন l বস্তুতপক্ষে আর্নস্ট এর painting গুলি ফ্রয়েড এর স্বপ্ন তত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত যার জন্য আর্নস্ট এর একটি ছবির মধ্যে যে অনেকগুলি ছবি collage এর মতো থাকে যেগুলিকে পরস্পর সম্পর্কহীন বলে মনে হয় l আর্নস্ট যেন সংশয় সৃষ্টি করেন, কোনটি real world, রাতে দেখা স্বপ্নের জগত, নাকি দিনের জগত, যখন আমরা জেগে থাকি l
আর্নস্ট এর সুররিয়ালিজম ভিত্তিক ছবিগুলি সম্বন্ধে বলা হয় এগুলি irrational l অথচ মানুষের irrational attitude এর বিপক্ষেই তাঁর এই painting l প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে ভাবে মানুষকে যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছিলো, সেটা কোনো rational আচরণ ছিল না l যেভাবে অরণ্যপ্রকৃতি ধ্বংস করা হয়, এটা কোনো rational আচরণ নয় l মানুষের এই irrational কাজকর্মের সমালোচনা করতেই তিনি তুলি ধরেছিলেন l আর্নস্টকে তাঁর নিজের জীবনে যে বিভিন্ন বিকট পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল, তাঁকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়ে অনেক মানব হত্যা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছিল, কখনও জার্মানী, কখনও ফ্রান্স, কখনও আমেরিকা গেছেন তিনি l তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে l দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হল আর্নস্ট তখন ফ্রান্সে l তাঁকে ফ্রান্স সরকার গ্রেপ্তার করে "enemy alien" এই অভিযোগে l কিন্তু সপ্তাহখানেক পরে তিনি ছাড়া পেয়ে যান l তারপর জার্মানী ফ্রান্স দখল করে l তখন Getaspo (Nazi Germany Secret Police) আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে l এবার তাঁকে escape করতে হয় l এবার গন্তব্য আমেরিকা l সেখানেও "enemy alien" এই tag তাঁর ছিলো l তাঁর ব্যক্তিসত্তার ওপর তার প্রভাব পড়েছিল l ছবিগুলিতে সেটাও প্রতিফলিত হয়েছে l
Collage এর মতো ভিন্ন ভিন্ন ছবি দিয়ে তাঁর একটি painting হতো, যার মাধ্যমে irrationality দিয়েই তিনি irrationalকে আক্রমণ করেছিলেন l
আর্নস্ট এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "Collage was seen as a kind of crime, meaning one did violence to nature." অবচেতন মনের সাহায্যে তিনি স্বপ্নের মতো দৃশ্য রচনা করতেন আর আক্রমণ করতেন প্রচলিত চিত্ররীতিকে এবং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নেয়া রাষ্ট্রনেতাদের অমানবিক কাজকর্মকে l
"Napoleon in the Wilderness" এই চিত্রটি আঁকা হয়েছিল ১৯৪১ সালে l ম্যাক্স আর্নস্ট এর আঁকা এটি অন্যতম সেরা ছবি l এই ছবিটিও পরাবাস্তবতা শিল্পের একটি নিদর্শন l
যে সময় এই ছবিটি আঁকা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় জার্মানি রাশিয়াকে আক্রমণ করল l এই ছবিটির মধ্যে তার প্রভাব পড়েছে l প্রভাব পড়েছে ম্যাক্স আর্নস্ট এর ব্যক্তিসত্তার l তিনি জার্মানী চিত্রশিল্পী l কিন্তু এই সময়টাতে তিনি জার্মানী ত্যাগ করেছেন l আমেরিকায় এসে নতুন বসতি স্থাপন করেছেন l ছবিটি আঁকা হয়েছে আমেরিকাতে l ফলে এই ছবিটিতে আমেরিকান দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে l পরাবাস্তবতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস আছে চিত্রটিতে l ছবিটিতে এক স্বপ্ন কল্পনার জগত নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ও মানব সংস্কৃতির ছোঁয়া আছে l চিত্রটিতে সমুদ্রতীরে অদ্ভুতাকার যেসকল অবয়ব দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে প্রবাসী শিল্পীর জীবনে ও মননে ঘটে যাওয়া নানা অবস্থার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় l
চিত্রটিতে আকর্ষণীয় বিভিন্ন রঙ এর ব্যবহার এর প্রেরণা শিল্পী পেয়েছেন এক বিশেষ শৈল্পিক কলা থেকে যার নাম decalcomania l অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যাণ্ড-এ এই কলার উদ্ভব l এটি এক ধরনের কলা বা পদ্ধতি যেখানে একটি চিত্র বা designকে একটি surface থেকে আর একটি surface এ স্থানান্তর করা হয় l
পরাবাস্তব শিল্পী অস্কার ডোমিনগেজ প্রথম ১৯৩৬ সালে তাঁর চিত্রে decalcomania কলা ব্যবহার করেন এবং পরবর্তীতে ম্যাক্স আর্নস্ট তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন l তিরিশ শতকের শেষের দিক থেকে ম্যাক্স আর্নস্ট তাঁর চিত্রে এই কলা ব্যবহারে সচেষ্ট ছিলেন l
এক্ষেত্রে যেটা করা হত তা হলো প্রথমে বেশ খানিকটা রঙ ক্যানভাস এর ওপর ছড়িয়ে দেয়া হত l তারপরে কাঁচ অথবা কাগজের কিছু টুকরো দিয়ে ক্যানভাসটাকে চাপ দিয়ে রাখা হত l কিছু বাতাসের বাবলস্ তৈরি হতো l তরল রঙ এর কিছু ধারা ক্যানভাসের ওপর ইতস্তত ছড়িয়ে পড়ে অনেক শাখা প্রশাখা মেলত l এরপর যখন সেই কাঁচ অথবা কাগজের টুকরোগুলো ক্যানভাসের ওপর থেকে তুলে নেওয়া হতো, তখন সেই ক্যানভাসের ওপর বিভিন্ন আকৃতির structure তৈরি হত l তার পরবর্তীতে তুলি ব্যবহার করে সেই structure গুলির রূপান্তর ঘটিয়ে সেগুলিকে প্রবাল বা ছত্রাকের রূপ দেয়া হত l
যখন ম্যাক্স আর্নস্ট "Napoleon in the Wilderness" চিত্রটি আঁকায় হাত দিয়েছেন ততদিনে কবি, চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি খ্যাতিলাভ করে ফেলেছেন l এই ছবিটি সম্বন্ধে প্রশংসাসূচক যে মন্তব্যটি বিখ্যাত তা হলো "Alien, yet beautiful" l Alien এই অর্থে যেহেতু এই সময় আর্নস্ট জার্মানী ছেড়ে আমেরিকাতে থাকতে শুরু করেছেন l Alien আর একটি অর্থে যেহেতু আর্নস্ট তাঁর ছবিতে যে বিষয়গুলি রাখতেন সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকত না, উপাদানগুলি পরস্পরের কাছে alien থাকত l
ছবিটিতে স্পষ্টতই দুটি মূর্তিকে দেখা যাচ্ছে l কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, গোটা ছবিটা জুড়ে প্রাণের পরশ আছে এবং বাকি যা কিছু আছে ছবিটিতে সব কিছুই যেন চোখ মেলে তাকিয়ে আছে l ছবির ব্যক্তি দুজনের মাঝে একটি স্তম্ভ দেখা যায়, সেটিকেও চক্ষুধারী মনে হয় l মহিলাটির পেছনে কিছু জলজ প্রাণী মনে হয় যেন চোখ মেলে তাকিয়ে আছে l মহিলাটি তার হাতের মধ্যে কিছু একটা ধরে আছেন, সেটিরও একটি মুখ আছে দেখা যাচ্ছে এবং প্রাণীটিকে জীবন্ত মনে হয় l গোটা ছবি জুড়ে তলদেশে বিস্তৃতভাবে যে প্রবালচিত্রগুলি আঁকা হয়েছে সেই প্রবালগুলিও যেন মনে হচ্ছে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে l
এই চিত্রটিতে বহু মিথ ও বহু প্রচলিত ধারণার মিশ্রণ আছে l মহিলাটিকে মনে করা হচ্ছে প্রেম ও ভালোবাসার দেবী ভেনাস l যদিও তাঁর বেশভূষণ অদ্ভুত ধরনের l তিনি হাতে যে instrument টি ধরে আছেন, সেটিও অদ্ভুত l Instrument টাকে বলা হচ্ছে "a whimsical trumpet" l Trumpet অর্থ এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র l বাংলায় বলে ডঙ্কা, ভেরী ইত্যাদি l
Shakespeare এর "Venus and Adonis" দীর্ঘ কবিতা যেখানে Venus Adonisকে একতরফা ভালোবাসছেন, তাকে প্ররোচিত করছেন - তার Allusion এখানে থাকতে পারে l সেক্ষেত্রে পুরুষ চরিত্রটি হবেন Adonis l কিন্তু পুরুষ চরিত্রটি যদি চিত্রটির শিরোনাম অনুযায়ী হন Nepoleon, যিনি শেষ জীবনটা হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত ছিলেন, তাহলে Nepoleon এখানে চিত্রশিল্পী আর্নস্ট এর রূপক যিনি বর্তমানে প্রবাসী আছেন l সেক্ষেত্রে মহিলাটি তাঁর প্রেমিকা যিনি আর্নস্টকে পরিত্যাগ করেছেন l
তবে চিত্রটির বিশ্লেষণে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আসা উচিত, তা হলো, ছবিটি যখন আঁকা হচ্ছে, অর্থাৎ ১৯৪০-৪১ সাল, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৪) শুরু হয়ে গেছে l এই বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি কি হবে, বিশ্ব জনমানবকে কত ক্ষতি স্বীকার করতে হবে, যুদ্ধের অন্তে পৃথিবীর ভৌগোলিক রূপ কি হবে - এরকম বহু প্রশ্ন ও তাকে ঘিরে অনিশ্চয়তা একটা সামগ্রিক হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল l ধ্বংসের এক পূর্বাভাস ছিল l এই শূন্যতা, হতাশা ও ধ্বংসের আভাস চিত্রটির সর্বাঙ্গে ফুটে উঠেছে l দূর দূরান্ত জনমানবশূন্য l ওপরে নীলাকাশ l নীচে অনন্ত জলরাশি l সভ্যতার কোনো চিন্হ নেই l শুধু রাশি রাশি প্রবাল আর প্রবাল l
পরাবাস্তব কবিতায় যেমন থাকে ভাষা ব্যবহারের চাতুর্য যা সকল পাঠককেই কিছু না কিছু পরিমাণ বিভ্রান্ত করে, তেমনই পরাবাস্তব চিত্রে চিত্রকল্পের মধ্যে থাকে কিছু অসংলগ্নতা l
এই অসংলগ্নতার জন্য আর্নস্ট এর ছবি বীভৎস মনে হয় l তারও ব্যাখ্যা আছে l পরাবাস্তব চিত্রে এই অদ্ভুতদর্শন ও বীভৎসতার অনুমোদন আছে l
Max Ernst এর painting গুলির সব মূর্তিগুলিই এরকম অদ্ভুত l Conscious mind এ দেখলে এরকম মনে হয় l কিন্তু এখানে dream, unconscious mind এর allusion আছে l স্বপ্নে যে ঘটনা বা চেহারাগুলি আসে, অবচেতন মন থেকে, সেগুলি সর্বদা স্বাভাবিক রূপে আসে না l এটা একটা fantasy world l তাছাড়া অনেকগুলি idea, দর্শন এর compiling আছে এখানে l Psychology, Romance, language, Philosophy, Politics, War, Frustration in love, Confusion about the post war world, imagination, astronomy, ethnology, ornilothology, mathematics, love of natural science, creative chance - এরকম different types of subjects in different phases আছে এখানে l Max Ernst এর painting সম্বন্ধে তাই বলা হয়, তাঁর ছবি mercuryর মতো অনবরত আকার পরিবর্তন করে l Ernst এর বহু painting আছে যেখানে hybrid figure আছে l woman change হয়ে animal হচ্ছে এবং vice versa l Ernst এর ছবি দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, অদ্ভুত, কদর্য, অর্ধনগ্ন, অস্বাভাবিক - এগুলিই তাঁর চিত্রে স্বাভাবিক l
পরাবাস্তবতা চিত্র - অতএব বহু বিচিত্র অর্থের সম্ভাবনা থাকে l "Napoleon in the Wilderness" তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ l
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : Jeyapaul Caleb