কবি তো তিনি, যিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত থেকে জন্ম নেওয়া ক্রিয়া-প্রক্রিয়াকে মানুষের মুখের ভাষায় লিখে যেতে পারেন l জীবনের অনেক গভীর রহস্য আছে l কবি জীবন-সংগ্রাম থেকে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেন, কবিতায় যখন তা প্রকাশ করেন তখন সেটা আর তাঁর একার অভিজ্ঞতা থাকে না, মানুষের ভাবনার প্রকাশ হয়ে যায় l
কবিতা তো সেটাই যা কোনো একজন সৃষ্টি করলেও, তার ভাব সর্বজনীন l কবিতা মানুষকে আনন্দ দেয়, ভাবায়, মননকে এগিয়ে নিয়ে যায় l মানুষের সুখ-দুঃখে বেঁচে থাকার সহযোগ হয় l
কবিতার মধ্যে আমরা এক অদ্ভুত জগতের সন্ধান পাই l আমাদের অতিবাহিত জীবনের যন্ত্রণা-কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের এক স্বস্তির সন্ধান দেয় l
কবির জীবনের বেদনা তাঁর ব্যক্তিগত l কিন্তু সেই যন্ত্রণার কথা কবি যখন প্রকাশ করেন, তখন তা দেশের, দশের, মানুষের অনুভবের রূপ নেয় l মানুষকে বাদ দিয়ে কবিতা হয় না l
কোন্ মানুষ ? যে মানুষ কবিতা লেখেন না l হয়তো কবিতা পড়েন-ও না l কিন্তু তাঁর-ও কবিমন আছে l কবিতা পড়লে বা শুনলে তাঁর কবিমন জেগে ওঠে l যখন এটা সম্ভব হয় তখন বুঝতে হবে সেটা কবিতা l
এই ধারণা ঠিক নয় যে কবিতাকে বুঝতে হয় l কবিতা মানুষের বেঁচে থাকার সহায়ক l তাঁর সংকটে, আনন্দে, শক্তি যোগায়, সাহস দেয়, সঙ্গ দিয়ে একাকীত্ব ঘোচায় l
জীবন নিত্য রহস্যময় l পদে পদে বিস্ময়, অনিশ্চয়তা l জীবন-মৃত্যু এক বিচিত্র প্রহেলিকা l ব্যক্তির মৃত্যু হয় l কিন্তু তাতে জীবনের প্রবাহ থেমে যায় না l প্রবহমান এই জীবনের মধ্যে সমগ্রের যে ধারণা - তার অনুভব ও প্রকাশ- ই কবিতা l
কবিতাকে শেষ পর্যন্ত সর্বজনীন হতে হয় l