শুভ জন্মদিন কবি !
একুশ সংখ্যাটি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে বিশেষ তাত্পর্যবাহী l আন্তর্জাতিক স্তরে এই সংখ্যা বাংলাভাষাকে তথা বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে এক অনন্য স্থান দান করেছে l একুশ এক আন্দোলনের নাম l এ আন্দোলন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান আদায়ের আন্দোলন নয় l এ আন্দোলন আত্মপরিচয়ের, আত্মপ্রতিষ্ঠার l একটি ভাষার আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ভাষা ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের উত্তাল আন্দোলন l পৃথিবীতে এমন দৃষ্টান্ত বিরল যেখানে একটি ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে l
ভারতভাগের মধ্যে দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের শুরু থেকেই উর্দুকে সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা নেয়া হয় l কিন্তু পূর্ব পাকিস্তনের মানুষ এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে সরব হন l কারণ, পূর্ব পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেই উর্দুভাষীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন না l সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন বাংলাভাষীরা l প্রতিবাদ আন্দোলনের রূপ নেয় l বাংলাভাষার মর্যাদা আদায়ের আন্দোলন l পাকিস্তান সরকার এই আন্দোলন দমনের জন্য পীড়নের পথ নেয় l নির্বিচারে লাঠি, গুলি চলে l ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানী পুলিশের গুলিতে নিহত হন ভাষা আন্দোলনকারী রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও সফিক - পাঁচ যুবক l ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা পূর্ব পাকিস্তান l ভাষার আন্দোলন রাজনৈতিক বিদ্রোহের রূপ নেয় l ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হতে থাকে l ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে গড়ে ওঠা এই রাজনৈতিক বিদ্রোহের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের l মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের মানুষের এই আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৯৯ সালে নভেম্বর মাসে ইউনেস্কো ঘোষণা করে ২০০০ সাল থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে পালিত হবে l ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি বাঙালির আশা ও উদ্দীপনার প্রদীপ হয়ে ছিল l ইউনেস্কোর এই ঘোষণার মাধ্যমে সেই প্রদীপ পিলসুজের মাথায় স্থাপিত হল l সঙ্গে সঙ্গে এই ঘোষণার মাধ্যমে পৃথিবীর সকল অবহেলিত ভাষা, জনজাতির ভাষা পাদপ্রদীপের আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ লাভ করল l
"একুশ মানে" কবিতায় কবি নিরীহ খোকা একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে বাংলাদেশের জনগণের এই ভাবাবেগকেই মেলে ধরেছেন l একুশ মানে নিজের জন্মদাতাকে নিজ ভাষায় সম্বোধন করা, স্নেহের পরশ পেতে মায়ের আঁচলে মাথা ঢাকা। একুশ মানে মাতৃভাষার বর্ণগুলি শেখা l একুশ মানে সবুজ বাংলা নিয়ে স্বপ্ন দেখা। একুশ মানে মিষ্টি কন্ঠে বাংলার গাছে গাছে পাখির গান, একুশ মানে বাংলার মাঠে মাঠে স্বাধীন কৃষকের হেমন্তের সোনালী ধান। একুশ মানে বাংলার শিশুর মুখে নির্মল হাসি, একুশ মানে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরে প্রোথিত স্বদেশপ্রেম l একুশ মানে বুকভরে স্বাধীনতার নির্মল নিঃশ্বাস গ্রহণ করা এবং একুশ মানে বিশ্বাস বেঁচে থাকা l একুশ মানে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে আত্মমর্যাদায় মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা l একুশ মানে আত্মসমর্পণ না করে যুদ্ধ করা l একুশ মানে নিজেকে চেনা। একুশ মানে প্রাণের বিনিময়ে অধিকার l একুশ বাংলাদেশের মানুষের কাছে অহংকার এর আর একটি নাম l
কবিকে জানাই শুভকামনা !!