কবিতাটি পড়লাম। পড়লাম আলোচক কবি রণজিৎ মাইতির সুন্দর আলোচনাটিও। পরিবারিক বিষয়ের কিছু রহস্য পরিহাসছলে নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে কবিতাটিতে। আলোচক কবি বিশদে বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন।
বস্তুত তাঁর আলোচনায় অনুপ্রাণিত হয়েই কবিতাটি পড়েছি।
কবিতাটির মধ্যে একটি বিষয় আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে। তার উল্লেখ করছি l
কবিতায় যে স্বামীর উল্লেখ আছে, একই সঙ্গে তিনি নারীজাতির তিন প্রজন্মকে সঙ্গে পাচ্ছেন l মা, স্ত্রী ও কন্যা l
মা গুরুজন, তাঁর সব কথা শিরোধার্য l
স্ত্রী সমকক্ষ l প্রেম ভালবাসা দায়িত্ব কর্তব্যের অতিরিক্ত একটু ঈগো, একটু সংঘাত, একটু মন কষাকষি, কোনো বিষয়ে কার মতামত গুরুত্ব পাবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব এই সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ l পরস্পরের দোষ ধরাটাও বাদ যায় না l সম্পর্কটা যেন একেবারে কড়ায় গন্ডায় নিজের পাওনা বুঝে নেবার মতো l
আর কন্যা স্নেহভাজন l বাবার চোখের মণি l তাকে তিলে তিলে ভালবাসা, স্নেহ উজাড় করে দিয়ে গড়ে তোলা l
নারীজাতির প্রকৃত মর্যাদা, তার অস্তিত্বের আসল উপলব্ধি পুরুষজাতি কন্যা প্রতিপালনের মধ্যে দিয়েই অর্জন করে l বিষয়টা এরকম - মা বা স্ত্রী একজন পুরুষের কাছে রেডিমেড l তৈরি অবস্থায় প্রাপ্ত l তৈরি অবস্থায় প্রাপ্ত যে কোনো জিনিসের প্রতি যেমন আমাদের অন্তরের টান থাকে না, তাই মা বা স্ত্রী-র সঙ্গে যেন আমাদের একটু দূর সম্পর্ক l এটা মায়ের দিক থেকে নয়, পুরুষ সন্তানের দিক থেকে বলা হচ্ছে l কিন্তু কন্যা, একরত্তি তার জন্ম থেকে প্রতি পলে আকর্ষণ বেড়ে বেড়ে প্রতিটি পিতাই কন্যা সন্তানের প্রতি দূর্বল l তাই কবিতায় মা যখন কন্যার উদাহরণ দিয়ে তাঁর পুত্রকে কিছু বোঝান, কবিতায় উল্লিখিত স্বামীটির যেন জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় l স্ত্রীর প্রতি তার মধ্যে এক নতুন সম্ভ্রমের বোধ জন্ম নেয় l স্ত্রীর কোনো দোষত্রুটি ধরবার মতো অবস্থায় তিনি আর থাকেন না l রেষারেষি ভুলে গিয়ে দুজন দুজনকে গভীরভাবে ভালোবাসতে শুরু করেন।
দাম্পত্য এক নতুন মাত্রা নেয় l অনাবিল প্রেম ভালবাসায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এক নতুন সমীকরণ নিয়ে আসে l
কবিকে শুভেচ্ছা মানবমনের অলিগলির এই বিচিত্র রসায়ন খুব সহজ সরল কথকতার মধ্যে দিয়ে কবিতাটির মধ্যে পরিবেশনের জন্য।