মানবজীবন বড়োই বিচিত্র । বড়োই বিচিত্র তার ভাবনার জগত । মনের জগতে বহুবিচিত্র অলিগলি সন্ধান করা তার নিত্য স্বভাব । সহজ বিষয়ের মধ্যে জটিলতা, অসুন্দরের মধ্যে সুন্দর, বেসুরকে সুরে নিয়ে আসা - এমন বিবিধ চর্চায় মানবমন সদা নিয়োজিত । জানা বিষয়ের মধ্যে অজানার সন্ধান, প্রকাশিত স্পষ্ট বিবরণের মধ্যে খেয়ালিপনা আবিষ্কার - এ সবই মানুষের সৃজনশীলতার প্রকাশ ।
কবি নরেশ বৈদ্য "অজানা কারণ" রচনায় মানবমনের এমন বিচিত্র খেয়ালিপনার সন্ধান করেছেন যেখানে জানা উত্তরগুলি অজানা কারণের হাত ধরে রহস্যাবৃত হয়ে যায় । মানুষ তার সৃজনশীলতায় শব্দের মাধুকরী রচনা করে । রচিত হয় কাব্য, মহাকাব্য, সঙ্গীত। ভাব ও সুরের বাঁধনে বাঁধা পড়ে মানব হৃদয় । সহজ সহজ শব্দাবলী অসাধারণ সব বিষয় উত্থাপন করে যেখানে অনেক জানা বিষয়ও অজানার মোড়কে, রহস্যের পর্দায় আবৃত হয়ে যায় । জানা অজানার এই খেলা মানুষের স্বভাবজাত এবং এই খেলার মাধ্যমেই মানুষ তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে । জানার জগত ছাড়িয়ে অজানার দেশে পাড়ি দেয়ার মধ্যেই সে তার আনন্দ খুঁজে পায় । যদিও পথে থাকে অনেক সংশয়, সন্দেহ ।
মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়টিও খুব সহজ সরল নয় । পরষ্পরের কাছে নিজেকে প্রকাশ করার বিষয়টি গ্রহণের ক্ষেত্রেও কাজ করে যায় কিছু অকারণ খেয়ালিপনা । যখন বার্তা থাকে পরিষ্কার, সেখানে সেটি অনুধাবনের ক্ষেত্রেও মানুষ হয় খেয়ালিপনার শিকার । এই খেয়ালিপনার কারণে, সহজ বিষয়কে সহজভাবে গ্রহণ না করে, তার সঙ্গে অন্য আরোপিত অর্থ যোগ করে মানুষ নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে এক ভ্রান্তির বশবর্তী হয়ে সে হয় অভিমানের শিকার । অকারণেই অভিমানের পাহাড় জমে যায় । সম্পর্কের উষ্ণতা রক্ষার ক্ষেত্রেও যা সাময়িকভাবে অন্তরায় হয়ে ওঠে ।
জীবন এক অনন্ত যাত্রা । তার একটি নিজস্ব রসায়ন আছে । যেমন রসায়ন আছে মানব সম্পর্কের । এই রসায়ন আর কিছু নয়, তার সরলতা । যেমন জীবনে তেমনই প্রতিটি সম্পর্কের ভিত রচিত হয়ে আছে তার সাবলীলতায়, তার সহজতম প্রকাশে । এর মধ্যে অন্য অর্থ খোঁজার প্রয়াস করাটাই মানুষের খেয়ালীপনা, সেখান থেকেই ভ্রান্তির শুরু এবং যাবতীয় মান অভিমানের জন্ম । মানুষের চিন্তাশীলতা, বুদ্ধিবৃত্তি, ভাবসাগরে অবগাহন, সেখান থেকে অমূল্য সব রত্নভান্ডার তুলে আনা - এ যেমন তার সৃজনশীলতার একটা দিক, তেমনই এই অতিভাবনার খামখেয়ালিপনা কোনো একটি জায়গায় তার জীবনকে, তার সম্পর্কের পরিসরকে প্রশ্নের সম্মুখে এনে দাঁড় করায় এবং অকারণ কিছু মান অভিমানের পালা চলে যেটা অতিক্রম করতে অনেকটাই বেগ পেতে হয় । জীবনের সহজ এই রসায়ন বুঝে উঠতে না পারার কারণে অনেক বুদ্ধিমান, সৃজনশীল প্রতিভাধর ব্যক্তিকেও জীবনের পথে হোঁচট খেতে হয়, অভিমানে অভিমানে দূরে সরে যায় একেবারে খুব কাছের মানুষটি ।
জানার জগতে স্বতঃপ্রণোদিত এই অজানা বেড়া যাতে আমাদের জীবন থেকে প্রিয়তম মানুষটিকে দূরে ঠেলে না দেয় এবিষয়ে প্রতিটি সৃজনশীল মানুষকে সতর্ক হতে হবে । সহজ বোঝাপড়ার জীবনে অকারণে জটিলতার আবর্ত সৃষ্টি করা থেকে বিরত হতে হবে ।
সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ! !