জীবন নিয়ে মানুষের মনে কতো রকমের ভাবনার আনাগোণা চলে। যুগে যুগে দেশে দেশে এই ভাবনার কতো প্রকাশ । সাহিত্য সঙ্গীত শিল্পকলায় এই জীবনকে নানা আঙ্গিকে তুলে ধরেন কবি সাহিত্যিক শিল্পীজনেরা । তার কতো বৈচিত্র্য । কখনও কবি আনন্দে উদ্বেল । কখনও বা দুঃখে কাতর । আশা নিরাশার দোলা ক্ষণে ক্ষণে । প্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু সন্ধানে চলে অনন্ত যাত্রা ।
কবি দেওয়ান লালন আহমেদ "তুমি জীবন রেখা" শীর্ষক রচনায় জীবনের এই চর্চায় নিয়োজিত হয়েছেন । তিনি যা হতে চেয়েছেন, যা হতে পেরেছেন, তার পেছনে যে চালিকাশক্তি তার সন্ধান করেছেন ।
জীবন থেকে কবি পেয়েছেন অনেককিছুই । যতো পেয়েছেন, ততোই ঋন গেছে বেড়ে । জীবনজুড়ে এই ঋন শোধ করবার তাগিদ অনুভব করেছেন ভিতর থেকে । কিছুটা করতে পেরেছেন । অনেকটাই রয়ে গেছে বাকি । তার জন্য অন্তর থেকে এক তাড়না অনুভব করেন সর্বদাই ।
জগতসংসার সম্বন্ধেও তাঁর বিচিত্র সব ভাবনা আসে । এই বিশাল জগতসংসারে কখনও তিনি নিজেকে এক অপরিচিত আগন্তুক মনে করেন । যেন কারুর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগ নেই । একেবারে একা । এক তীব্র দু:খবোধ পেয়ে বসে তাঁকে ।
অনেক প্রাপ্তির মধ্যে থেকেও কখনও তাঁর মনে হয় তাঁর কিছুই নেই । কোনো কিছুকে একেবারে নিজের বলে যেন তিনি ভাবতে পারেন না । নানান ঘটনায় জীবন সম্বন্ধে বিচিত্র অভিঘাত সৃষ্টি হয় তাঁর মনে । কখনও জীবনকে মনে হয় সহজ সরল, কখনও বা বক্র । বক্রতার নানা উপস্থাপনে জীবন থেকে কখনও পান উষ্ণতার স্বাদ । কখনও বা জীবনকে মনে হয় ভীষণ কঠিন।
জীবনের এই বিচিত্র রূপ মানুষকে নানা অভিজ্ঞতার স্বাদ দেয় । কখনও তার বুকে জ্বলে ধিকি ধিকি যন্ত্রণার আগুন । সেই আগুনে তার সব স্বপ্ন পুড়ে ছারখার হয়ে যায় । এর মধ্যেই কিছু ভাগ্যবান থাকেন যাঁদের জোটে প্রেমের পরশ । শত যন্ত্রণার মধ্যেও প্রেমিকার সাহচর্য, তার দীঘল কেশের সুগন্ধ তাঁকে জীবন সম্বন্ধে নতুন বোধ দেয় । বেঁচে থাকাটার একটা অর্থ খুঁজে পান তিনি । যেন তাঁর প্রেয়সী পাখির রূপ ধরে জীবনের সকল বক্ররেখাকে অতিক্রম করে সরল জীবনরেখা হয়ে আবির্ভূত হন তাঁর জীবনে । জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা পান তিনি ।
শত দুঃখ যন্ত্রণার মধ্যে, জীবনের পথে যতো বাধা বিঘ্ন আসে তার মধ্যে প্রেম ভালোবাসার স্পর্শ মানুষকে বাঁচার শক্তি, তার অক্সিজেন প্রদান করে । যার জীবনে প্রেম নেই, ভালোবাসার মানুষ নেই, তার কাছে জীবন অনেকটাই কঠিন হয়ে যায় । প্রেম যেন অক্সিজেন প্রদান করে মানুষের হৃৎপিন্ডকে সতেজ রাখে, কেন্দ্রবিন্দু হয়ে তার জীবনকে আনন্দের পথে চালিত করে ।
সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই অভিনন্দন ! !