কথায় আছে সাত পাকের বাঁধন । এক জীবনে যাকে পাওয়া যায় জীবনসাথী হিসাবে, পরবর্তী সাত জীবন তাকে জীবনসঙ্গী রূপে পাওয়া যায় এমন বিশ্বাস থাকে ।
প্রেম ভালোবাসা কোনো যুক্তি মানে না । চাওয়া সীমা ছাড়িয়ে যায় । প্রিয় মানুষটিকে ঘিরে রোমান্টিক কল্পনার ফানুস তৈরি করে তাতে আরোহন করে সে ।
দৈনন্দিন জীবনে মানুষের কতো টানাপোড়েন চলে । যে মানুষটি তার একান্ত আপন তার সঙ্গেও নিত্যদিনের ঘাত প্রতিঘাতে কতো মান অভিমান চলে । একসঙ্গে চলতে চলতেই হঠাৎ হঠাৎ একাকীত্বের বোধ হয় । সেই একাকীত্বের বোধের মুহূর্তে প্রেমের চিরন্তন সম্পর্কের মধ্যে সান্ত্বনা খোঁজে মানুষ, তার কল্পনা রঙিন সব চিত্র আঁকে, প্রিয় মানুষটিকে ঘিরে নানা রোমান্টিক চিত্রপট কল্পনা করে মনের মধ্যে এক সুখের আবেশ অনুভব করে সে ।
কবি রুদ্র মানিক রচিত "তুমি আমি আজ একা" কবিতাটিতে এক প্রেমিক মানুষের এমনই সব বিচিত্র খেয়াল চিত্রিত হয়েছে । যার সঙ্গে ইহজীবনে এখনও হয়তো তার সম্পর্ক স্থাপিত হয় নি, অথবা সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বর্তমানে কোনো কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব রচিত হয়েছে, হয়তো কোনো রাগ অভিমানের কারণে সাময়িক এই দূরত্ব রচিত হয়েছে, সেই প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কবিকল্পনা রচনা করেছে জীবনাতীত নানা দৃশ্যপট । কয়েক জীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতিতে আগামী জীবনগুলিতে নানা পরিবেশে তারা মিলিত হবে । পারস্পরিক ভালোবাসার অমোঘ টানে, মায়ার খেলায়, নানা মুহূর্তে তাদের সাক্ষাৎ হবে । কোনো বসন্তের উৎসবে, কিংবা পৌষের মেলায় নিয়তি তাদের পাশাপাশি নিয়ে আসবে । ভবের খেলায় এভাবে নানা জীবনে ভিন্ন ভিন্ন নানা পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন পরিচিতিতে পরস্পরকে তারা কাছে পাবে । কোনো স্নিগ্ধ সকালে, নির্জন দুপুর বেলায় কিংবা শান্ত বিকালে জনমানবশূন্য রাস্তার ধারে তাদের দেখা হবে । সেই সেই জীবনে পারস্পরিক অপরিচিতির মধ্যেও নিয়তির খেলায় তারা পরষ্পরের প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করবে । এই আকর্ষনে প্রতিটি জীবনে তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হবে । কোনো ভবিষ্যৎ জীবনে তাদের দেখা হবে হয়তো কোনো পুকুর পারে । যেন কতোকালের চেনা পুকুর । অবচেতন মনে তার স্মৃতি গচ্ছিত ছিলো । মিলনবেলায় সব চেতনায় ভেসে ওঠে ।
প্রতিটি প্রকৃত প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে আগামী জীবনগুলিতে পুনরায় মিলনের এই আকাঙ্খা থাকে । প্রার্থনা থাকে । সেই প্রার্থনার জোরেই পৃথিবীর ধীর আবর্তনের মতো বারে বারে তারা পরস্পরকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে । নিয়তির ছলে তাদের নানা জীবনে বারবার দেখা হয় । রূপকথাসম প্রতিশ্রুতিতে বদ্ধ থাকে তারা । এই প্রতিশ্রুতির জোরেই অনন্তকালের পথযাত্রী হয়ে ওঠে ।
ফলে তাদের মধ্যে আজকের এই দূরত্ব, সাময়িকভাবে পরষ্পরকে কাছে না পাওয়াটা কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নয় । অনন্তকালের সম্পর্কে তারা জুড়ে আছে - প্রেমের সান্ত্বনা এটাই ।
কবিকে জানাই শুভকামনা ! !