কবি সুমিত্র দত্ত রায়ের "তবু দ্বীপ জ্বলে না" কবিতাটির বড্ড ঋণাত্মক আলোচনা করেছেন আলোচক কবি নিখিল বিশ্বাস l কবিতাটি মোটেই দুর্বোধ্য নয়, এবং শব্দ ব্যবহারও সুপ্রযুক্ত l কবিতাটির যে অর্থ ও পাঠোদ্ধার শ্রদ্ধেয় কবি খলিলুর রহমান তাঁর মন্তব্যে করেছেন, বন্ধুকবি সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, কিছুটা বিশদে করেছেন কবি আলোচক সমীর প্রামাণিক তাঁর আলোচনায় - মূল অর্থটা সকলের ক্ষেত্রে প্রায় একই এসেছে এবং কবিতাটি পাঠ করার পর সেরকমটাই মনে হচ্ছে l সমীর প্রামাণিকের আলোচনায় মন্তব্য প্রসঙ্গে শ্রদ্ধেয় কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল কবিতাটির মধ্যে যে একটি আলো আঁধারি বিষয় আছে সেটিও সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন l
কেন কবিতাটি এমন নেতিবাচক আলোচনা পেল তা বোধগম্য হলো না l
কবিতা পাঠককে বুঝে উঠতেই হবে, পাঠক যদি কবিতা বুঝতে না পারেন তার দায় সম্পূর্ণতই কবির, বিষয়টি আদৌ তা নয় l ছড়া, পদ্য যেমন সহজবোধ্য, কবিতা তা নয় l কবিতায় ব্যঞ্জনা, রূপক, অলংকার, ইঙ্গিত, বিমূর্ততা বিষয়গুলি থাকে, যার জন্য কবিতা কিছু পরিমাণে দুর্বোধ্য হতে বাধ্য l এটা কবিতার দুর্বলতা নয়, কবিতার গৌরব l পাঠক তার মনন ব্যবহার করে কবিতার মধ্যে যে ইঙ্গিতটুকু আছে তার সহায়তায় সমাধানসূত্র খুঁজে পান l আবার অনেক সময় পানও না l এর জন্য কবি বা কবিতাকে দায়ী করা যায় না l পাঠকের মননগত সামর্থ্যও এখানে একটি বিষয় l
কিন্তু আলোচ্য কবিতাটির ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলিও আসছে না l কবিতাটির মোটামুটি অর্থ অনেক কবিই করেছেন l সংবেদী পাঠক কবিতাটি পাঠ করলেই তার যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতে পারবেন l মূলত নারীরা পরিবারে ঠিক কিরকম জায়গা পেতে চান তার কাব্যিক উপস্থাপন আছে রচনাটিতে l তাঁরা অত্যাচারিত হতে যেমন চান না তেমনই দেবী হিসাবে পূজিত হতেও চান না l একজন রক্তমাংসের মানুষের মতো চাহিদা নিয়েই তাঁরা পরিবারে, সমাজে স্থান পেতে চান l প্রেম, ভালবাসা ও মর্যাদা পেতে চান ও দিতে চান l পরিবারের একজন অপরিহার্য সদস্য হিসাবে থাকতে চান তারা, আপদ বা দেবী হিসাবে নয় l নানা রূপক ও অলংকারের প্রয়োগে কবি তাঁর বিষয়টিকে উপস্থাপন করেছেন l কবিতাটির শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে "প্রেমের কবিতা" ও "রূপক কবিতা" হিসাবে l কবিতার পাঠোদ্ধারে এটিও সহায়ক হতে পারত l কবিতায় বর্ণিত মেয়েটি পরিবার থেকে প্রেম দাবি করেছে এবং কবি নানা রূপক ও উপমার সাহায্যে বিষয়টিকে কবিতায় মেলে ধরেছেন l সংবেদী পাঠকের বুঝতে না পারার কথা নয় এবং কবিতাটিতে অপ্রাসঙ্গিকতাও নেই l
আলোচনা সমালোচনা মননকে সমৃদ্ধ করে l কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি l শুধু প্রশস্তি নয়, গঠনমূলক সমালোচনা যেমন কাঙ্খিত, তেমনই শুধু নেতিবাচকতা নয়, বস্তুনিষ্ঠ গঠনশীল মানসিকতাও চাই l
একটি বিষয়ে বিস্মিত হয়েছি l একাধিক কবি কবিতাটি আলোচনা করেছেন l কিন্তু কেউই আলোচনার সঙ্গে কবিতাটিকে লিঙ্ক করেন নি l ফলে আলোচনার নিরিখে কবিতাটি পড়তে বারবার আলোচনাটি থেকে বেরিয়ে যেতে হচ্ছে l
আসরের সকল কবিবন্ধুকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা l