কবির প্রোফাইলে পাই কবি পেশায় ছিলেন ব্যাংকার । অবসর নিয়েছেন । সত্তরোর্ধ্ব । পথ্য অর্থাৎ পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন । তথ্য পেয়ে, কথ্য ভাষায়, সত্যনির্ভর কথা লেখেন । অর্থাৎ খালি চোখে যা দেখেন, তাই লেখার চেষ্টা করেন। সেটাই কখনো কবিতার রূপ নিয়ে নেয় ।
চারপাশে যা দেখেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি - তার অসঙ্গতিগুলি উঠে আসে তাঁর রচনায় । নির্মোহ দৃষ্টিতে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী সম্বন্ধে আলোকপাত করেন কবি । কখনও ব্যঙ্গাত্মক । কখনো আক্রমনাত্নক - নানান রস ফুটে ওঠে তাঁর নাতিদীর্ঘ রচনাগুলিতে ।
যেমন অপরকে, তেমনই নিজেকেও উপহাস করতে ছাড়েন না কবি । আবার নিজেকে আক্রমনের সুবাদে রূপকার্থে গোটা সমাজব্যবস্থার আচরণগত অসঙ্গতির দিকটি তুলে ধরেন কবি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।

মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে অর্থনৈতিক কাজ করে । এই কাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছুটা নিজের সিদ্ধান্ত, আবার অনেকটাই পারিপার্শ্বিক বিষয়, কাজের পরিসর, কাজের সুলভতা ও দুর্লভতা, কোনো কাজের প্রেক্ষিতে ব্যক্তির নিজস্ব যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ইত্যাদি নানান বিষয় কাজ করে যায় । যখন অনেকগুলি বিকল্প কাজের সুযোগ থাকে তখন নিতান্ত অভ্যাসবশেই মানুষ সেই কাজটিই পছন্দ করে যেখানে পরিশ্রম কম ও আয় বেশি । আয় বেশির এই চক্রজালে পড়ে মানুষকে নীতির প্রশ্নে অনেকসময় আপোষ করতে হয় । তাকে এমন কাজে যুক্ত হতে হয় যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর । জেনে বুঝে শুধু অর্থের তাড়নাতেই তিনি কাজটি করে যান । মনের মধ্যে এই সন্তোষটুকু তাঁর থাকে যে এর দ্বারা অন্যের ক্ষতি হলেও তিনি নিজে বা তাঁর পরিবার প্রভাবিত হচ্ছে না । তাঁরা সুরক্ষিতই আছেন । কিন্তু এই ভাবনা যে ভুল, কবি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী "পরের ছেলে নেশাগ্রস্ত হবে" শীর্ষক ছোট্ট রচনায় এই সূত্রটিই ধরিয়ে দিয়েছেন ।

বেশি লাভের সম্ভাবনা দেখে কথক কবি ইয়াবার ব্যবসায় নেমে পড়লেন । ইয়াবা হলো মাদকদ্রব্য । এর দ্বারা অপরের সন্তানের ক্ষতি হবে, তারা নেশাগ্রস্ত হবে, তাদের পড়াশোনা, কেরিয়ার, পারিবারিক বাঁধন, সুখ শান্তি বিনষ্ট হবে এত কিছু জেনেও নিজেকে নিবৃত্ত করলেন না । অর্থের আকর্ষণটাই তাঁর কাছে বড়ো হলো ।
জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, দায় দায়িত্ব পালন করার জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে । কিন্তু সেই অর্থের সংস্থানের জন্য নীতিবোধকে, মানবিক মূল্যবোধকে যদি বিসর্জন দেয়া হয়, অর্থ উপার্জিত হলেও মানুষের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এটা জেনে বুঝেও যদি কাজটি করে যাওয়া হয়, তাহলে সেই ক্ষতি শুধু বাইরের সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, এর দ্বারা ব্যক্তির নিজের জীবন, তাঁর পরিবার, তাঁর সন্তান, উত্তরপুরুষ সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় । অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে - এই সার সত্য কথাটি ফুটে উঠেছে রচনাটিতে ।
তাই কবিতায় দেখি, পরের ছেলের ক্ষতি হবে জেনেও বেশি টাকা আয়ের লোভে কবি ইয়াবার ব্যবসায় নামলেন, প্রচুর টাকা আয় করলেন, মনে ভাবলেন অন্যের ছেলের ক্ষতি হয় হোক, এতে তাঁর কি আসে যায় ? তাঁর নিজের পরিবার, নিজের সন্তান সুরক্ষিত আছে এটাই তাঁর সান্ত্বনা । তিনি অর্থ যে পথেই উপার্জন করুন না কেন, তাঁর পরিবার সুখে শান্তিতে থাকলেই হলো । সমাজ জাহান্নামে যায় যাক । তাতে তাঁর কি এসে যায় ?

কিন্তু ঘরে ফিরে তিনি কি দেখলেন ? দেখলেন তাঁর নিজের ছেলে, মেয়ে, বউ সকলেই ইয়াবার নেশায় আসক্ত হয়ে আছে ।

কবিতাটিতে এই বার্তা আছে কোনো ব্যক্তির দ্বারা কোনোভাবে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই ক্ষতির হাত থেকে সেই বিশেষ ব্যক্তি বা তার পরিবারও সুরক্ষিত নয় । কারণ সমাজ সকলকে নিয়ে । কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটি পরিবার সমাজের বাইরে নয় । অন্যের ক্ষতি করার সময় ব্যক্তিকে এটা ভাবতে হবে চক্রাকারে সেই ক্ষতির প্রভাব একসময় তার ওপরেও বর্তাবে ।

ভালো শিক্ষনীয় রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ।

##
ইয়াবা এমন একটি মাদক, যা মানুষকে শুধু মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেয় না, মৃত্যুর আগে ওই ইয়াবাসেবীকে পাগলে পরিণত করে ফেলে। থাই ভাষার ইয়াবা শব্দটির অর্থ পাগলা ঔষধ। বাংলাদেশের টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মাদক হিসেবে ইয়াবা প্রথম প্রবেশ করে ১৯৯৭ সালে। ....

ইয়াবা হলো মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রনে  প্রস্তুত এক ভয়াবহ মাদক যা মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র এবং শরীরের যে কোনো অঙ্গকেই আক্রান্ত করতে পারে। ধীরে ধীরে অকেজো করে দেয় একটি সুন্দর দেহ, মন ও মানসিকতার। ইয়াবা আসক্তির কারণে মস্তিষ্কের বিকৃতি হতে পারে। মাঝে মাঝে ইয়াবার সঙ্গে ক্যাফেইন বা হেরোইন মেশানো হয়, যা আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। .....

নিয়মিত ইয়াবা সেবন করলে মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি,ক্ষুধামন্দা এবং মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে। ইয়াবা গ্রহণের ফলে ফুসফুস, কিডনি সমস্যা ছাড়াও অনিয়মিত এবং দ্রুতগতির হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত হারে ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে। অভ্যস্ততার পর হঠাৎ ইয়াবার অভাবে সৃষ্টি হয় আত্মহত্যা প্রবণতা এবং হতাশা।

এর কুফল বা দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদঘাটিত হতে থাকায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

সূত্র : bdstudy24 - FREE online study for everyone