সময় বহমান । তাকে ধরে রাখা যায় না । নিত্য সত্য এটাই । সময় একা নয় । তার সহচর থাকে । সমকালে বর্তমান আচার, বিচার, সংস্কার, আবিষ্কার, মানুষের যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম সময়ের সঙ্গে জুড়ে যায় । এভাবেই একেকটা সময়ের মানচিত্র তৈরি হয় । সেই মানচিত্র ঐ যুগের মানুষজনের একটা মানসিক কাঠামো গড়ে দেয় । মানুষ সেই সময়ের সঙ্গে একাত্মবোধ করে । তার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতায় শূন্যতাবোধ করে । সময়ের সূক্ষাতিসূক্ষ অংশ মানুষের স্মরনে মননে থেকে যায় । সময়ের সঙ্গে যাপনের এই অভিজ্ঞতা, এই স্মৃতি ভবিষ্যৎ জীবনে তাকে তাড়া করে বেড়ায় যখন সময় যায় পাল্টে, তার সঙ্গে পাল্টে যায় তার সমস্ত ইতিহাস আর ভূগোল ।
মানুষ মননশীল, ভাবচালিত । সময়ের এই পরিবর্তন, তার পারিপার্শ্বিক তাকে পীড়া দেয় । ঐতিহ্যের প্রতি প্রেম তাকে অতীতচারণায় প্রনোদিত করে । কবি শুভ চক্রবর্তী ( অগ্নিদ ) এর "সময়ের হত্যা" রচনায় তারই অনুরণন শুনি ।
বাঙলার ঘরে ঘরে একটা তুলসীর বেদী, সন্ধ্যাবেলায় সেই বেদিতে আলোর প্রদীপ - এক সাধারণ দৃশ্য । একটা সময়কে ধরে থাকে এই প্রদীপের শিখা । সন্ধ্যাবেলার আধো আলো আধো অন্ধকারে ঘরের খড়খড়িতে মৃদু হাওয়ায় দুলতে থাকে সেই শিখা। এই দৃশ্য, এই সংস্কার বাঙালি জীবনের অন্যতম অঙ্গ। শান্ত স্নিগ্ধ জীবনের অংশ। এখনও গ্রাম বাংলায় বর্তমান । কিন্তু শহর সভ্যতার বিকাশের ফলে ধীরে ধীরে এই সংস্কৃতি লোপ পেতে বসেছে । কংক্রিট সভ্যতায় স্থান করে নিয়েছে বিদ্যুতের আলো । সুন্দর স্নিগ্ধ এই রীতি ক্রমে হারিয়ে যাওয়ায় কবি তাঁর মনোকষ্ট প্রকাশ করেছেন । সেই সময়টাই আর নেই । বলা যেতে পারে যেন তাকে হত্যা করা হয়েছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই বিয়োগব্যথাজনিত আর্তনাদের হাত ধরে পড়ে থাকে বর্তমান । অতীতকে হারিয়ে বর্তমান একা হয় । একাকিত্বের যন্ত্রণা নিয়ে বর্তমানের ঘেরাটোপের মধ্যে বন্ধ পড়ে থাকে অতীত হারানো বর্তমানের মানুষজন ।
সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ! !