সুখ সকলেরই কাঙ্খিত l কিন্তু সুখ এমনি মেলে না l অনেক কিছু করতে হয় তার জন্য l সবচেয়ে বেশি যা করতে হয় তা হলো আপোষ l নিজের সত্ত্বা, মর্যাদা, বিশ্বাস, সততা বিসর্জন দিয়ে আপোষ করতে হয় l কবি জামাল উদ্দিন জীবন "সুখের ঠিকানা" ক্রমে কবিতা রচনা শুরু করলেন l ১ম কবিতাটি সবে আসরে প্রকাশিত হয়েছে l
কবি সুখের সন্ধানী l সুখ কোথায় মেলে তার সুলুক সন্ধান করে চলেছেন l এই সন্ধান চলতে থাকবে l প্রথম রচনায় কিছু ঠিকানা তিনি পেয়েছেন l কিন্তু তাঁর সমস্যা অন্য জায়গায় l সংসারের আর পাঁচটা লোক সুখ পাবার জন্য যেমন নানা বিষয়ে সহজেই আপোষ করে ফেলেন, নিজের ব্যক্তিসত্বা, মর্যাদা, সততা, স্বাধীনতা খুশিতে বিসর্জন দেন, কবি সেটা পারেন না l সুখ তাঁর কাঙ্খিত l কিন্তু তার জন্য তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে প্রস্তুত নন l
সুখের এই অভিযানে কবি প্রথম যে ঠিকানার সন্ধান পান তা হলো বাড়ি এবং নারী l কিন্তু এই ঠিকানা নিরঙ্কুশ সুখ দেয় না l কারণ কবি মনে করেন সংসারজীবনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে l সংসারে সৎ থেকে সুখী হওয়া কঠিন l অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় l কিন্তু কোনো মূল্যেই কবি সততাকে তাঁর জীবন থেকে বিদায় দিতে পারেন না l অসৎ - এই অপবাদ তিনি নিতে পারেন না l তাই অসততা যে সংসারজীবনের ভিত্তি এমন অট্টালিকা জীবন তাঁর কাম্য নয় l
সংসারজীবনের অংশ হিসেবে সুখের আর এক ঠিকানা হলো নারী l কিন্তু একজন নারীর সঙ্গে সুখী থাকা যে কতো কঠিন তা কবি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন l নারীর কাছ থেকে সুখ পেতে হলে প্রথমে তাকে খুশি করতে হয় l নারীকে খুশি করার এই চক্রে পুরুষকে তার সর্বস্ব বিসর্জন দিতে হয় l নিজের বলে আর কিছু থাকে না l একেবারে যেন গোলাম বনে যেতে হয় l আত্মকে হারিয়ে নারীর ইগোর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দিয়ে অনেক পুরুষ সংসারজীবনে সুখী আছেন l কিন্তু আলোচ্য কবিতার কবি এমন সুখের পিয়াসী নন l নিজেকে হারিয়ে কোনো নারীকে তিনি মেনে নিতে পারেন না l তিনি এমন সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী যেখানে সত্যকে তার নিজ মহিমায় ধরে রেখে স্বমহিমায় তিনি ভাস্বর থাকবেন l যেখানে মিথ্যার সঙ্গে কোনো আপোষ করতে হবে না l কারণ মিথ্যার ভিত্তি দুর্বল l তার গর্ব স্বল্পস্থায়ী l
সংসারজীবনে সৎ চরিত্রবান লোকের মর্যাদা নেই l যেন সে একজন অপরাধী l অসততার পথ ধরে অন্য ব্যক্তিরা যখন সংসারে অনেক সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারে, একজন সৎ লোকের সংসারে তখন নিত্য অভাব বিরাজ করে l কবি তা জানেন l সব জেনেশুনেই কবি বলছেন সংসারে সুখের জন্য তিনি তাঁর সততাকে ও চরিত্রকে বিসর্জন দিতে পারবেন না l মাটির ঘরে যাঁরা সুখ পায় না, সুখের জন্য অট্টালিকা খোঁজে, কবি তাদের সঙ্গে ঘর বাধঁতে যাবেন না l কারণ কবি বিশ্বাস করেন সুখ অট্টালিকায় থাকে না l অট্টালিকা ও সমৃদ্ধিতে সুখের সন্ধান মরীচিকার মতো l সুখ থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের সম্পর্কে l মনের বন্ধন যেখানে ক্ষীণ, প্রাসাদের বন্ধন সেখানে সুখ দিতে পারে না l পারস্পরিক সম্পর্কে যদি তিক্ততা আসে, নিশ্বাস প্রশ্বাসে, রক্ত মাংসে যদি শুধু বিষ উদ্গিরণ হয়, তাহলে তার মধ্যে সুখ কোথায় ? এ তো এক নিরাপত্তাহীন অস্তিত্ব l যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই সেখানে স্থায়িত্বও নেই l সুখ তো অনেক দূরের বিষয় l
কবির সুখের সন্ধান জারি থাকুক l শুভেচ্ছা রইলো l