অপরাধীর কোনো লিঙ্গভেদ হয় না l পুরুষ নারী যে কেউই অপরাধী হতে পারেন l যথার্থ বিচারব্যবস্থা লিঙ্গ দেখে নয় অপরাধের প্রকৃতি দেখে শাস্তিবিধান করে l
কিন্তু সমস্যা হয় বাইরের বৃহত্তর সমাজে l সমাজ তাৎক্ষনিক মূল্যবোধ নিয়ে চলে l সমাজ কোথাও পিতৃতান্ত্রিক, কোথাও মাতৃতান্ত্রিক l কোথাও যথার্থ গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সাম্যবাদের ভিত্তিতে অপরাধের বিচার হয়, আবার কোথাও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচারের নামে প্রহসন চলে l
বর্তমান সমাজব্যবস্থা তথাকথিত গনতান্ত্রিক এবং পুরুষতান্ত্রিক l নারী লাঞ্ছনার বহু বহু ঘটনা নিত্যদিন চতুর্দিকে ঘটে চলেছে l আইন আদালত তার সামান্য ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং খুব কম ক্ষেত্রেই সুবিচার হয় l যদিও বলা হয় আইনের হাত লম্বা, তবু শোষন অত্যাচার বহু ক্ষেত্রেই খোলা ছুট পেয়ে যায় l
এর বিপরীত দিকে সংখ্যায় কম হলেও পুরুষ নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটে l অভিযোগের আঙুল ওঠে নারীর প্রতি l কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কেন যেন বিষয়টিকে মেনে নিতে চায় না l তার আত্মশ্লাঘায় বাধে l বরং যে পুরুষ নারীর দ্বারা লাঞ্ছিত, সমাজ তাকেই গঞ্জনা করে l তার পুরুষত্বকে অপমানিত হতে হয় l বিষয়টি এমন হয় নারীর দ্বারা লাঞ্ছিত পুরুষটি বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে সংকোচ বোধ করেন l তাঁর সমব্যাথি কম, টিটকিরি দেবার লোক বেশি হয়ে যায় l অপরপক্ষে একজন নারী যখন পুরুষ দ্বারা লাঞ্ছিত হবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন, তিনি সমাজ থেকে সহানুভূতি পান l পুরুষ অত্যচারীকে শাস্তিদানের প্রশ্নে সমাজ সদর্থক ভূমিকা গ্রহন করে l
এরকমই পটভূমিতে এক নির্যাতিত পুরুষের পক্ষ অবলম্বন করে কবি মোঃ নাজমুল হাসান 'আর্জি' কবিতায় কিছু বলতে চেয়েছেন l যখন নারীর দ্বারা নির্যাতিত এক পুরুষ সমাজ থেকে কাউকে পাশে পান না, নিজের দুঃখের কথা কাউকে বলতে পারেন না, তখন আত্মরক্ষার জন্য তিনি প্রত্যাঘাত করেন l এর ফলে যদি কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তিনি নিজেই অভিযুক্ত হন l বিচার হয় l অপরাধী প্রমান হন তিনি l কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি হয় তাঁর l
সমস্যা হলো, সমাজ এটা মানতেই চায় না যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় একজন পুরুষ নারীর দ্বারা নির্যাতিত হতে পারেন l ফলে নারীর যেখানে দোষ থাকে সেখানেও ঘুরেফিরে পুরুষকেই অপরাধীর তকমা নিয়ে শাস্তিভোগ করতে হয় l
এমনই একজন পুরুষ শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে বিচারকের দৃস্টি আকর্ষন করছেন এবং তাঁর অসহায় অবস্থার করুন চিত্র তুলে ধরছেন l নারী যতো অপরাধই করুন, চোখের জল দিয়ে সব কিছু জয় করে নেন l
সমাজ, বিচারব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে চান l সফলও হন অনেকক্ষেত্রে l নিরপরাধ গোবেচারা পুরুষের শাস্তি হয়ে যায় l অথচ পুরুষের কষ্ট ক্ষত রক্তবিন্দুগুলো কেউ অনুভব করেন না l যেন আমোদের খোরাক হয়ে যান তিনি l
নিত্যদিন নারীর হাতে লাঞ্ছিত, নির্যাতিত হতে হতে সেই পুরুষ কস্টের ভারে ক্লান্ত l নীরবে, প্রকাশ্য দিবালোকে নিত্য আহত হয় সে l তবু কেউ সমব্যাথী নেই l আইন ময়নাতদন্ত করে না তার নির্যাতনের l সমাজ নারীকে দেবী ভেবে বসে আছে l যেন সে কোনো অন্যায় করতে পারে না l ফলে নারী যখন অন্যায় করে, শত অনাচার করে, তার কোনো বিচার হয় না l যেন সেই অন্যায় করাটা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে l এবার কোনো পুরুষ যদি তার প্রতিবাদ করে উল্টো সে ই অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে যায় l তার বিচার হয় l তার শাস্তি হয় l সেই শাস্তি মেনে নেয়া ছাড়া তার সামনে আর কোনো উপায় থাকে না l
পুরুষ যখন অত্যাচার করে, সে অত্যাচারী, অপরাধী l নারী অত্যাচার করলে সে সাহসী l পুরুষ সেখানে কাপুরুষ l আর পুরুষ যদি প্রতিবাদ করে, তাহলে সে অমানুষ এবং অপরাধী l সুতরাং তার প্রাপ্য শাস্তি l ফাঁসির দণ্ড l
যেন সমাজ এ সময় নারীদের l তারাই বাঁচুক, তারাই থাকুক।
সমাজে নারীদের দ্বারা সংঘটিত পুরুষনির্যাতনের চিত্র এবং এক্ষেত্রে পুরুষদের যে অসহায় অবস্থা, বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজেও এটি যে এক জ্বলন্ত বাস্তব - সেকথাই বলেছেন কবি l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ! !