নগরজীবন' রচনাটিতে কবি অভিষেক চক্রবর্তী আধুনিক নগরজীবনের নেশা মানুষকে কিভাবে এক সর্বনাশের দিকে নিয়ে চলেছে তার লেখচিত্র তুলে ধরার প্রয়াস করেছেন l
অগ্রগতির নেশা মানবজাতিকে আদিম গুহামানব থেকে আজ নগরবাসী করেছে l জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে এই অগ্রগমনের ছাপ পড়েছে l জীবনযাপনের ধরন পাল্টেছে l বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অসাধারণ উন্নতি এর সঙ্গ দিয়েছে l বিজ্ঞান, প্রযুক্তি যতো উন্নত হয়েছে, মানুষ প্রকৃতি থেকে ততো দূরে সরে গেছে l এক কৃত্রিম পরিবেশ সে তৈরি করেছে তার আবাসস্থল হিসাবে l প্রকৃতি থেকে মানুষ যতো দূরে সরে গেছে, তার মানবিক কোমল অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে শুরু করেছে l মানুষের সঙ্গে এখন মানুষের সরাসরি যোগাযোগ কম l সব মনোযোগ গেছে ফেসবুক আর টুইটারে l যতো যোগাযোগ তার মাধ্যমে l সেখানেই নিজের পছন্দ জানানো l সেখানেই মতামত প্রকাশ করা l তাই নিয়ে শোরগোল l নেটের দুনিয়ায় আবদ্ধ নগরবাসী l চোখ স্মার্টফোনে, আঙ্গুল ডিজিটাল কি বোর্ড-এ l গ্রামসভ্যতাকে বিসর্জন দিয়ে নগরজীবন গড়ে উঠেছে l খোলা সবুজ মাঠ-ময়দান সব অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে l ক্রীড়াপ্রেম টিভি পর্দায় আবদ্ধ l
শহরের বুকে হু হু করে বহুতল বাড়ছে l সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে l ইট ও কংক্রিটের আস্তরণে মাঠগুলো চাপা পড়ছে। মোবাইল গেম নিয়ে মেতে আছে যুবসমাজ l নিজেই নিজেকে বন্দী করেছে এক মোহজালে l শিশুকাল হারিয়ে গেছে l যান্ত্রিকতার আগ্রাসনে চেতনার মরণ হয়েছে l
নগরজীবন কালের আপন গতিতে এভাবেই এগিয়ে চলেছে l কংক্রিটের জঞ্জাল বেড়েই যায়, আলোকমালার জ্যোতি ছড়ায় চতুর্দিকে l ধুলো, ধোঁয়া বাড়ে l দূষণ চরম আকার নেয় l সুস্থ জীবন বিপন্ন হয় l তবু মানুষের কোনো চেতনা নেই l নগর কলকাতা তবু হাসতে থাকে l দাবদাহ তীব্র হয়, তবু মানুষ ভাবনাহীন l অবাধে গাছ কাটা চলে l ভোটকেন্দ্রিক কাজে মেতে থাকে নগর কর্তৃপক্ষ l
রোগ শোক বাড়ে l জীবন ব্যতিব্যস্ত হয় l ঠান্ডাঘরে ঢুকে যায় মানুষ l দায় এড়িয়ে যায় শুধু l অন্যের ঘাড়ে দোষ ঠেলে নিজের পিঠ বাঁচায়।
নগরের নেশা পেয়ে বসেছে মানুষকে l একঘেয়ে সেই নেশা মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে মানবসভ্যতাকে l তবু তার কোনো হুঁশ নেই l যেন মারণনেশা পটাশিয়াম সায়ানাইডে আসক্ত হয়ে পড়েছে সে l
কবিকে জানাই শুভকামনা l