দেশ সভ্যতা সমাজ ও ব্যক্তিবিশেষের জীবনে নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ l নারীর মূল্য সে বেশি বোঝে জীবনের কোনো স্তরে সে যখন কোনো একটি ভূমিকায় নারীর উপস্থিতি পায় না l মা হারা সন্তানের মন মায়ের জন্য কাঁদে l বোন নেই যে ভায়েদের তারা বোনের অভাব অনুভব করে প্রতি মুহূর্তে l অনুগত প্রেমিক স্বামী যিনি বিপত্নীক হয়েছেন, তিনি পত্নীবিয়োগের ব্যথা অনুভব করেন l জীবনে এমনই এক অভাববোধের অভিজ্ঞতা নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন কবি দিপক চক্রবর্তী দ্বীপ তাঁর "মেয়ে আমার মা" রচনায় l কবি দেখেছেন, তিনি নিজের জীবনে যে অভাব অনুভব করেছেন, সেই অভাব যখন তাঁর সন্তানের ক্ষেত্রে ঘটে নি, তাঁর প্রাপ্তি কবিকে সন্তুষ্টি দান করেছে l
'মা' এক অদ্ভুত সম্বোধন l দুটি বর্ণ l বলতে বেশি সময় লাগে না l অথচ এটি পৃথিবীর সেরা সম্পর্ক l মাকে নিয়ে ইতিহাসে, সাহিত্যে কতো বিচিত্র কথা আছে l কতো বিশ্বাস ও আন্তরিকতার গল্প আছে l মা'কে নিয়ে একটি দিবস আছে l বিশ্ব জুড়ে সেই দিন উদযাপন হয় l সবাই সেদিন মা'কে নিয়ে কতো কিছু ভাবেন, লেখেন, কতো কিছু পালন করেন l কেউ হয়তো লিখে উঠতে পারেন না l কিন্তু মনে তো ভাব আসে l সেই ভাব চোখের অশ্রু হিসাবে ঝরে পড়ে l
মায়ের কাছে সন্তান যা পায়, তেমনটি আর কোথাও থেকে নয় l নিঃশর্ত সেই প্রাপ্তি l মা নিজের সুখ শান্তির চিন্তা করেন না l তাঁর সব ভাবনাই সন্তানকে নিয়ে l সন্তান খুশি হলেই তিনি খুশি l সন্তানের উন্নতিই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য l
সকলেই মাতৃদিবসে খুশিমনে মায়ের জন্য কিছু লেখে, অন্তত লেখার চেষ্টা করে l না পারলে অশ্রু ঝরায় l কিন্তু কবির জীবনে সেই সৌভাগ্য বা সুযোগ হয় নি l কারণ তিনি হতভাগা l অল্প বয়সেই তিনি মা'কে হারিয়েছেন l তিনি জানেন না তাঁর মা বর্তমানে কোথায় আছেন l বাবার কাছে তিনি শুনেছেন, তাঁর মা দূর আকাশের তারা হয়ে গেছেন l তাঁর দুঃখী মা তাঁদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন l কবি হাসতেন l ঠিক বুঝতে পারতেন না l অর্থহীন কথা বলতেন l এখন তিনি প্রকৃত বিষয়টা জেনে গেছেন l বুঝে গেছেন যে শৈশবেই তিনি মা'কে হারিয়েছেন l এই কঠোর সত্য কথাটা মেনে নিতে তাঁর বড়ো কষ্ট হয় l
কবি বড়ো হয়ে ওঠেন l স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বিয়ে হয় l কন্যাসন্তানের পিতা হন তিনি l নিজের কন্যাসন্তানকে মায়ের ভালোবাসা, আদর যত্ন পেতে দেখেন তিনি l মায়ের কোলে তাঁর সন্তান খেলে বেড়ায় l নিজের জীবনে যা তিনি পান নি, নিজের সন্তান তা পাচ্ছে দেখে কবি এক সন্তোষ লাভ করেন l তাঁর চোখ থেকে খুশির অশ্রু ঝরে পড়ে l মা ও মেয়ের মধ্যে ভালোবাসার এই প্রাচুর্য দেখে তিনি খুব খুশি হন l কবি তাঁর কন্যাকে আশীর্বাদ করেন সে যেন চিরদিন এই ভালোবাসা পায় এবং পরবর্তীতে সে যখন মা হবে, সেও যেন এই ভালোবাসা তাঁর সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত করে l নিজের জীবনে যে অভাব তিনি পেয়েছেন তা পূর্ণ হয়ে যায় l
তিনি আশীর্বাদ করেন তাঁর সন্তান যেন অনেক বড়ো হয়, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় l পৃথিবী জুড়ে তার নাম হবে l নিজের কন্যাসন্তানের মধ্যে তিনি মাতৃরূপ দেখতে পান l আসলে সকল নারীই শেষপর্যন্ত মা l পৃথিবীর সকল মাকে তিনি প্রণাম করেন l
সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা !!