মাতৃভাষার সম্মান রক্ষায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির আত্ম বলিদান ইতিহাসের এক স্বীকৃত অধ্যায় l তার পরিণতিতে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম এবং বাংলা ভাষাকে ঘিরে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মর্যাদা l মাতৃভাষা যে কোনো জাতির পরিচয়, তার অহঙ্কার l বলা হয়, একটি পরাধীন জাতি যতক্ষণ তার মাতৃভাষাকে আঁকড়ে থাকে, তার স্বাধীনতার সম্ভাবনা জেগে থাকে l এজন্যই একটি বিজয়ী জাতি তাদের বিজয়কে চিরস্থায়ী করার জন্য বিজিত জাতির ওপর নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি আরোপ করে l এই আগ্রাসন সত্ত্বেও বাংলা ভাষা তার অস্তিত্ত্ব ধরে রেখেছে l নিরন্তর চর্চার মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করেছে l নিজ ভাষার প্রতি এই ভালবাসা, আত্মত্যাগ ও বলিদানের মধ্যে দিয়েই জাতি হিসাবে তার প্রতিষ্ঠা এসেছে l
বর্তমান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি, তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন জাতি ও ভাষা পরস্পরের কাছাকাছি চলে এসেছে l বিভিন্ন ভাষার মধ্যে ভাষান্তরে ভাব ও বিষয় আদান প্রদান হচ্ছে l এর ফলে সব ভাষাই সমৃদ্ধ হচ্ছে l এ পর্যন্ত ঠিকই আছে l কিন্তু যখন দেখা যায়, নিজের ভাষার প্রতি অবহেলা, অন্য ভাষার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত মোহ, যুক্তিহীন অনুকরণ, তখন সেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় l যে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় শহীদেরা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই ভাষার অবমাননায় তাঁরা ক্ষুণ্ন হন l যেন তাঁদের অভিশাপ বর্ষিত হয় মাতৃভাষার অবমাননাকারীদের প্রতি l
"শহীদের অভিশাপ" রচনায় কবি বোরহান বিন শিহাব এই বিষয়টিই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন l
হুজুগে মেতে বর্তমান প্রজন্মের একটি অংশ যেভাবে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভুলে গিয়ে অন্য ভাষার চটুল গান ইত্যাদিতে মজে আছেন, যেভাবে এক অন্ধ মোহের বশে মাতৃভাষাকে বর্জন করে নিজ সন্তানদের বিদেশী ভাষায় শিক্ষিত করে তুলবার প্রয়াস করছেন, মনে করছেন এই পথেই মিলবে সব সুখ ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি - আসলে নিজেদের সন্তানদের তারা ঠেলে দিচ্ছেন আত্মবিস্মৃতির অন্তরালে l ভাষা হরণের মধ্যে দিয়ে এক সামগ্রিক পরাধীনতার অভিমুখে এই যাত্রা ভাষা শহীদদের ব্যথিত করেছে l সেই ব্যথার অনুরণন শুনি কবি বোরহান বিন শিহাব এর রচনায় l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!