কুয়াশাদের নষ্টামি" কবিতার শেষ ছয় পঙক্তিতে প্রেমের কবিতার স্বাদ পেলাম l তার আগের পঙ্ক্তিগুলিতে কবি শশাঙ্ক সাদী সেই প্রেমের আগমনের পটভূমি নির্মাণ করে গেছেন l শুরু থেকে রচনাটি প্রকৃতিবিষয়ক মনে হয় l নগর জীবনের দূষণ যেন প্রতিপাদ্য বিষয় l কুয়াশাঘেরা ভোর, সাথে শহরের ধুলোর মেঘ, সীসা আর কালো সোনা পোড়া ধোয়াসা। তারা যৌথ প্রযোজনায় নষ্টামিতে মত্ত l মানুষের জন্য দিন মাটি করে দেবার ষড়যন্ত্র l তাদের প্রচেষ্টার সাফল্যে উঁচু সারি সারি ভবনগুলো কুয়াশায়, ধুলায় ঢাকা পড়ে যায় l লেকের ঘোলা জলে প্রতিবিম্ব পড়ে না l রংগীন কাঁচে ঝলসায় না কিরণ প্রভা। দূষণের প্রভাবে চতুর্দিকে কেমন যেন ধুসর স্থবিরতা। যেন মঞ্চের সব জমকালো আয়োজন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্ত l তোপসে মাছের চোখের মতই ঘোলাটে চতুর্দিক l কে নায়িকা আর কে পার্শ্বচরী বোঝা ভার।
এমন দিনে মন ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে l কোনো কাজে মন বসে না l বন্ধ কপাটের ভেতর থেকে ভাঁড়ের ঘনত্ব আর সোনালি মদের গেলাস শুধু হাতছানি দেয় l আরো কতো ছাইপাঁশ - তার আকর্ষণ l
পরিবেশের এই দূষণ, মনের এই বিভ্রান্তি - তার থেকে মুক্তির পথ দেখায় এই জগতে প্রাণের উৎস বলে যা পরিচিত সেই সূর্য l সূর্য একটু একটু করে রোদ মেলে কুয়াশাদের নষ্টামি পণ্ড করার প্রয়াস করতে থাকে l সেই রোদ গিয়ে পড়ে ধুলাচ্ছন্ন গাছের পাতায়, কালো পীচের রাস্তায়, উঁচু ভবনে, আর মসজিদের মিনারে। দীননাথের এই প্রাথমিক সাফল্যে পারিপার্শ্বিক জড়তা কেটে যায়, মানুষের মন যেন নটরাজ ভংগীতে নেচে ওঠে l হয়তো প্রলয় নাচ নয়, ঝালরের অবগুন্ঠনে ঘুঙুরের ঝংকার হয়তো কম শোনা যায়, কিন্তু রবির খুনসুটিতে কুয়াশাদের নস্টামি পন্ড হয় l
এইবার কবিতার শেষ ছয় পঙক্তিতে আসে প্রেমের পরশ l দূষণ জর্জরিত বেতাল শহর, সূর্যের প্রয়াসে যেখানে কিছুটা হলেও দূষণমুক্তি ঘটেছে, সেখানে আগমন হয় প্রেমিকার l ফিরে আসে সে l রাজহংসীর রাজকীয় ঠাট, আর রডোডেনড্রন ফুলের গোলাপী মৌতাত সহকারে। জীবন নতুন দিশা পায় l মরা মন জেগে ওঠে, রঙিন হয়ে ওঠে l শিমুলের, লাল পলাশের, কামনার লাল আগুন জ্বলতে থাকে ধুসর প্রান্তরে।
অসাধারণ সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাiই প্রাণভরা অভিনন্দন !!!