শেষের সে দিন বড়ো ভয়ঙ্কর । বড়ো আতঙ্কের । বড়ো দুঃখের । সে দিন অনিবার্য । আবার সেই দিনটি বড়ো রোমান্টিক । জীবন ও মৃত্যু জীবনকে ঘিরে দুটি চরম সত্য যার থেকে কোনো পরিত্রাণ নাই । কবিমন তাই শেষের এই দিনটি নিয়ে বড়ই ভাবিত । সুখে দুঃখে, আনন্দ বেদনায় অতিবাহিত জীবনের শেষ দিনটি নিয়ে কবিকল্পনা নানা রঙের ছবি এঁকে যায় । কিছু ভাবনা মনের ভেতরেই খেলে বেড়ায় । কিছু ভাবনা কবিতার আকারে ঝরে পড়ে ।
কবি এম. ডি. সবুজ " কোন্ এক দিন" রচনায় সেই শেষবারের মতো ঘুমিয়ে পড়ার দিনটির কথা ভেবে তাঁর ভাবনা, আবেগ, বিষন্নতা প্রকাশ করেছেন । এক নীরব করুন স্বরে একদিন হঠাৎ তিনি জীবনে শেষবারের মতো ঘুমিয়ে পড়বেন । আর উঠবেন না । আর কোনোদিন হেসে উঠবেন না । আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব তাঁকে ডাকাডাকি করবেন । কিন্তু তাঁর দিক থেকে কোনো সাড়া থাকবে না । সকলের স্মৃতি বুকে নিয়ে তিনি চলে গেছেন বহু দূরে । যখন সকলে তাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে যাবেন, তাঁর মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে তাঁরা দুঃখ করবেন । তাঁর ভালোবাসার মানুষজনের চোখ থেকে বেদনার অশ্রু ঝরে পড়বে । কেউ কেউ দুঃখ চেপে রাখতে না পেরে চিৎকার করে কেঁদে উঠবেন । তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরবেন । অনেকে আবার তাঁকে শেষ দেখা দেখতেও আসবেন না । তাঁকে ভুলেও জাবেন অনেকে । গ্রামে গঞ্জে মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে যে মুহূর্তগুলি তিনি অতিবাহিত করেছেন, সেই গ্রাম, সেই মানুষজন তাঁকে হয়তো ভুলে যাবে - অভিমানাহত হয়ে কবির এমনটা মনে হচ্ছে । সাদা কাপড়ে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ঘুমিয়ে থাকবেন, দূর গ্রাম থেকে তাঁর প্রিয়জনেরা তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে আসলেন না - এই দুঃখ তাঁর থাকবে । একেবারেই যাঁরা তাঁর সত্যিকারের আপন, তাঁরা নিজ হাতে তাঁর দেহ ধুইয়ে দিবেন । কাঁধে করে কবর পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে যত্ন করে শুইয়ে দিবেন । কিছুদিন খুব প্রিয়জনেরা তাঁকে মনে রাখবেন । কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের প্রবাহে সকলেই তাঁকে ভুলে যাবে । নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে সকল মানুষ । তাঁর কথা আর উচ্চারিত হবে না । তাঁকে নিয়ে কোনো গান, কোনো কবিতা কেউ রচনা করবে না । এক পরম সত্যের মধ্যে মিশে যাবেন কবি ।
জীবনের অন্তিম সত্যকে নিয়ে সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই অভিনন্দন ! !