কবি ও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে হাজারো প্রশ্ন l তার সরাসরি উত্তর l নানান আলোচনার শেষে ঘুরেফিরে সেই একই জায়গায় আবর্তন l কখন যে না গুলো হাঁ হয়ে যায় তার রহস্য মোচন l বাধ্যবাধকতা থাকে না, আরোপিত নয়, তবু শেষ পর্যন্ত কবি উন্নততর সমাজগঠনের সৈনিক হয়ে ওঠেন, কবিতা তাঁর হাতিয়ার l কবি সিজু নাসিমুল রচিত 'কবি' কবিতায় বিষয়টির আভাস পাই l
কবি কি সমাজসংস্কারক ? এটাই কি কবির প্রথম ও প্রধান কাজ ? সোজা উত্তর - না l কবিতা কি সমাজের দর্পণ ? যেমনটা আয়নায় আমরা কোনো জিনিসের হুবহু প্রতিবিম্ব দেখি, কবিতায় কি সমাজকে সেভাবে পাওয়া যায় ? পরিষ্কার উত্তর - না l কবি কি তবে সমাজ নিরপেক্ষ ? না l সমাজকে নিয়ে কবির কোনো ভাবনা নেই ? আছে l কিন্তু সেটা আরোপিত নয় l কবিতা হল কবির মনের স্বতস্ফুর্ত, অবারিত শৈল্পিক অভিব্যক্তি l কবি ব্রম্ভ্রচারী, সুন্দরের পূজারী l অনন্ত বিশ্ব ব্রম্ভ্রাণ্ড থেকে তাঁর বিষয় আহরণ l কবির সৃষ্টি মানবজাতির সর্বোচ্চ প্রেরণাস্থল l নানা ভাব ও রসের সমন্বয়ে কবিতা হয়ে ওঠে মানব মনের সর্বোচ্চ বুদ্ধির দীপ্তি l প্রজ্ঞার জৌলুস l চিন্তার সৌকর্য l আবেগের সংহত ও পরিশীলিত মিথষ্ক্রিয়া। কবির এই সৃজনশক্তিই মানবজাতির প্রেরণা l আলোকপথের দিশারী l কবিতাহীন মানবজাতি কৃষ্ণগহ্বরে নিক্ষেপিত গতিহীন বিলুপ্ত প্রজাতিবিশেষ l
কবিতা সাহিত্য যা ঘটে তার বিবরণী নয় l মানুষ যা হতে পারত, যা তার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব ছিলো তার স্বপ্নযাপন কবিতার আরাধ্য l তাই কবিকে মানুষের কৃত আচরণ উপেক্ষা করতে হয় l তিনি তাঁর কলমের আঁচড়ে যে স্বপ্নভুবন নির্মাণ করেন, তা মানবজাতির দৃষ্টিভঙ্গিতে পাহাড়প্রমাণ পরিবর্তন নিয়ে আসে l নতুন উন্নততর সমাজ গড়ে ওঠার ভিত্তিভূমি রচিত হয় l
কবিকল্পনার মানসপটে নতুন সমাজচিত্র ফুটে ওঠে l জীবনের ত্যাজ্য অংশ বাদ গিয়ে, রূঢ় নীতিহীন বাস্তবকে পরিহার করে, কল্পনাকে আশ্রয় করে শৈল্পিক দৃষ্টিতে কবিতার ক্যানভাসে জীবন পুনর্নির্মিত হয় l
মহাবিশ্বের মহাকাব্যিক খেলায় পাঠক কবির সঙ্গে সমান অনুভবে মেতে ওঠেন l সত্যকে আশ্রয় করে, রঙ মেশানো মিথ্যাকে বর্জন করে জীবন প্রবাহিত হয়ে চলে l কবিতা হয়ে ওঠে উন্নততর মহত্তম জীবন গঠনের সূতিকাগার l
কবি সিজু নাসিমুল "কবি" কবিতায় কবি ও কবিতার সম্পর্কের কাব্যভাবনাময় বিশ্লেষন করেছেন এবং কবিতা কি ভাবে মানুষের বেঁচে থাকার উপকরণ হয়ে উঠতে পারে তার দিকনির্দেশ করবার প্রয়াস করেছেন l
কবিকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন l