সময় প্রবহমান l থেকে যায় শুধু অতীতের স্মৃতি l সময়ের পরিবর্তনে পৃথিবীও তার রূপ পরিবর্তন করে চলে l এই পরিবর্তন তার বহিরঙ্গ এবং অন্তরঙ্গ উভয় ক্ষেত্রেই সাধিত হয় l মানবমনও এই পরিবর্তনের শিকার l সময় যতো অতীত হতে থাকে তার স্মৃতিও ততো দুর্বল হতে থাকে l কিছু মনে থাকে, কিছু হারিয়ে যায় l কিছু আবার মনে তো থাকে, কিন্তু তার সম্পূর্ণ অবয়ব স্মৃতি ধরে রাখতে পারে না l কিছুটা আলো, কিছুটা ছায়া, এভাবে ধরা দেয় এবং মনকে উতলা করে তোলে l অতীত স্মৃতি এমনিতেই মনকে রোমান্টিক করে তোলে l সেই দিনগুলি ফিরে পাবার জন্য মন আকুল হয়ে ওঠে l এরকম অতীত কিছু স্মৃতিকে নিয়ে কবি বুলবুল আহমেদ "কি নাম ছিল?" রচনায় তাঁর ভাবনা মেলে ধরেছেন l
আজ যখন গগনচুম্বী বহুতল নির্মাণ আকাশ ঢেকে ফেলছে তখন অতীত দিনের খোলা আকাশের কথা কথা মনে পড়ে কবির l মনে পড়ে উদাস বিকেলে নদীর ধারে বসে সময় অতিবাহিত করার কথা l দিগন্তপ্রসারিত কাশবনের সেই সাদা হাসি এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না l অতীত দিনে গ্রামগঞ্জের মাঝে বিশাল বটবৃক্ষ চোখে পড়ত l ছিলো অনন্তপ্রসারিত ক্ষেতের মাঠ, বহমান স্রোতস্বিনী নদীতে মাছের খেলা, আর নানা উপলক্ষ্যে নদীঘাটে সাধুসন্যাসীর উদাত্ত মন্ত্রপাঠ।
দুপুরবেলার রৌদ্রতাপে যখন আম কাঁঠালের বনে বনে শীতল বাতাস বয়ে যেত, তখন উদোম গায়ে হাঁটার আনন্দ ছিলো l এখন সে কথা কল্পনা করা যায় না l
কখনো রাখাল ছেলের হাতের বাঁশি রাখালিয়া গানের সুরে মধুর স্বরে বেজে উঠতো l গোধূলি বেলায় সুন্দর প্রাকৃতিক রঙে প্রকৃতি রেঙে উঠতো, চোখ জুড়িয়ে যেত l
সবুজ পথের ধারে ছোট্ট সব বাড়িঘর ছিল l
কলাগাছের ভেলায় চরে কিশোর শাপলা তুলতো l সে সব দৃশ্য এখন হারিয়ে গেছে l নাম না জানা গ্রাম্য কিশোরী, তার কাজলকালো চোখ, সর্ষে ক্ষেতের আড়ালে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে তুলতো l
অতীত দিনের এরকম নানা ভালোবাসা ও ভালোলাগার স্মৃতি কবির মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে l ভালোবাসার এই হিসেবনিকেশ তাঁকে স্বস্তি দেয় না l বরং মনকে উদাস করে তোলে l অতীত যতো মধুর হোক, বর্তমানটাই বাস্তব l তাই অতীত নিয়ে বেশি না ভেবে তার প্রতি ভালোবাসায় একসময় দাঁড়ি টানতে হয় এবং বর্তমান জীবনের বাধ্যবাধকতা ও দায়বদ্ধতার প্রতি মনোনিবেশ করতে হয় l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!