মানুষের প্রেমিক মন সুন্দর কিছু দেখলে তার রূপে মোহিত হয় । তার প্রশস্তি গেয়ে ওঠে । এই প্রশংসা সেই সুন্দর সৃষ্টির যেমন প্রাপ্য, তেমনই সেই প্রেমিককেও তার লক্ষনরেখা মেনে চলতে হয় । যে কোনো সুন্দর সৃষ্টি ভালো লাগবে তাতে কোনো অসুবিধে নেই । সেই সুন্দরকে দেখতে বাধা নেই। কিন্তু এই অগ্রসর কতোটা পর্যন্ত চলতে পারে তার বিবেচনাবোধ থাকা প্রয়োজন ।
'কামনা' শীর্ষক রচনায় কবি অমরেশ বিশ্বাস যেন একজন প্রেমিক মনকে সেই গন্ডিটাই চিনিয়ে দিয়েছেন । সুন্দরী এক নারীকে দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন । দু চোখ ভরে তাঁকে দেখেছেন । তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে অন্য সব কিছু যেন ভুলে যান তিনি ।
এতটাই মোহিত হয়ে যান যে চোখও ফেরাতে পারেন না । মনে খুশির জোয়ার ওঠে । সেই সুন্দরকে একেবারে নিজের মতো করে কাছে পাবার কামনা জাগে মনে । তাঁর সাগরসদৃশ চোখ দুটিতে ডুবে গিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় । তার সঙ্গে জলকেলি করতে ইচ্ছা জাগে । হাঁপিয়ে উঠলে তাঁকে ভালোবেসেই সেই ক্লান্তি দূর করে নিতে চান । তাঁর সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপনে ইচ্ছা করেন । কোনো পিছুটান থাকে না ।
সেই নারীর স্নিগ্ধ কোমল মুখ দেখে কবির মন খুশিতে ভরে ওঠে । তাঁর ঠোঁট দুটিকে মনে হয় যেন দুটি গোলাপ ফুল । তাঁকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয় কোন কারিগর তার এই সুন্দর রূপ সৃষ্টি করেছে । যেন সরোবরে সদ্য শতদল বিকশিত হয়েছে ।
কিন্তু কবি নিজেকে, নিজের কামনাকে সংবরন করেন । তিনি বোঝেন যে সব কিছু সবার জন্য নয় । এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য ঈশ্বরেরই প্রাপ্য । তিনি সামান্য একজন মানুষ । তিনি যে সেই সৌন্দর্য্য দর্শন করতে পারছেন, তাঁর কাছে এটাই অনেক প্রাপ্তি । এতেই তাঁর জীবন ধন্য হয়েছে । অবুঝের মতো যা পাবার নয় তা পেতে চাইলে তার নিজেরও কষ্ট হবে, সেই সুন্দরের মর্যাদারও হানি হবে । বৃন্তের ফুল বৃন্তেই থাকুক । তা ছিঁড়ে ফেললে মস্ত বড়ো ভুল হয়ে যাবে । সব কিছু সবার জন্য নয় এই প্রবোধবাক্য সংযত করে কবিকে ।
সেই সৌন্দর্য্য নিজের জায়গায় অবিকৃত থাকুক । জগতকে মোহিত করে যাক । দূর থেকেই কবি সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন । তার ছবি বাঁধিয়ে রাখবেন । এর অতিরিক্ত কোনো কামনা বাসনা নেই তাঁর । নিজের কামনা চরিতার্থ করতে সেই সুন্দরকে মলিন করে তুলতে চান না তিনি । তিনি চান সেই সুন্দর আরো সুন্দর হোক । তার সৌন্দর্য্যের আভায় জগত আলোকিত হয়ে উঠুক । তিনি শুধু সেই সুন্দরকে দেখার অধিকারটুকু পেলেই সন্তুষ্ট ।
কবিকে জানাই শুভকামনা ! !