কবি তরুণ কান্তির কবিতাপাঠে সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি কথায় কথায় তিনি শব্দের যে মায়াজাল বিস্তার করেন তার আবেশ মুগ্ধ করে রাখে পাঠককে l কবিতা পড়তে শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না l বরং একটি কবিতার পাঠ তাঁর অন্য কবিতাগুলি পড়তে পাঠককে উদ্দীপিত করে l এক সুন্দর কথকতার মধ্যে দিয়ে প্রতিটি কবিতায় তিনি তাঁর বিষয় উপস্থাপন করেন l কথা ও ভাবের মায়াজালের মধ্যে দিয়ে পাঠক এক চেতনাদীপ্ত মধুর অনুভূতির পরশ পান l
'জয়' কবিতায় পাই মানুষের অস্তিত্বের বিচিত্র রূপের পরিচয় l কখনো সে নিজে বাঁচে, কখনো তাকে বেঁচে থাকতে হয় l কখনো তার মনের সাধ পূরণ হয়, কখনো হয় না, কখনো মর্যাদার সঙ্গে স্বাধীনতার আনন্দ নিয়ে সে জীবনকে উপভোগ করে, কখনো জীবন দুর্বিষহ মনে হয় l অন্ধকার আদিমতা তাকে ঘিরে রাখে l এক নিরানন্দ পরিবেশে অপমান লাঞ্ছনা সয়ে তাকে তার কাজ করে যেতে হয়, সৃষ্টিকাজে নিজের ভূমিকা পালন করে যেতে হয় l এক সন্ত্রাস ঘিরে থাকে তাকে l তবু তাকে বেঁচে থাকতে হয় l
এই নিরানন্দ বেঁচে থাকার মধ্যে মাঝে মাঝে আবার বিপন্নতা বাড়ে l নানামুখী আক্রমণ জীবনকে অবিন্যস্ত করে দেয় l এক সর্বনাশের আশঙ্কা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে যেতে হয় l প্রতিপদে জীবন ঘিরে থাকে আতঙ্ক l
কিন্তু এ জীবন, এই পরাধীন বেঁচে থাকা মানুষের নয় l তার নির্বিকার চেতনাবোধ এই বেঁচে থাকা অনুমোদন করে না l মানুষের আছে দুর্দম সাহসিকতা l চেতনাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে জীবনের পথে সমস্ত বিরুদ্ধতাকে রুখে দিতে চায় স্বাধীনতাকামী মানবমন l যখন সে এটা করে উঠতে পারে তখন সমস্ত বিরুদ্ধতা ভগ্নমনোরথ হয়ে ফিরে যায় l কারণ অন্যায়কারীরা সর্বদাই মানসিক দিক থেকে দুর্বল থাকেন l সৎ সাহসী প্রতিরোধের সম্মুখে তারা ভেঙে পড়ে l নিরুপায় হয়ে পিছু হটে যায় l
মানুষের আলোকোজ্জ্বল ইচ্ছা তখনই পূরণ হয় l এই চাওয়া প্রকৃত চাওয়া l এই পাওয়া প্রকৃত পাওয়া l স্বাধীনচেতা মানুষের কাছে এ এক বড়ো প্রাপ্তি l এটা তার মানব অস্তিত্বের জয় l
সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা l