বর্ষা বৈচিত্র্যময় ঋতু l যেমন বিরক্তিকর, তেমন প্রাণদায়ী এবং সৌন্দর্যময় l প্রকৃতির নতুন সাজ, জীব প্রকৃতির ছন্দময় প্রকাশ l বৃষ্টির তালে তালে পেখম তুলে ময়ূরের নাচ বর্ষার সম্পদ l সেই বর্ষা নিয়ে সুন্দর ছড়াকবিতা লেখার প্রয়াস করেছেন কবি মহঃ সানারুল মোমিন "এই বর্ষায়" শিরোনামে l
বর্ষার আকাশ মেঘময় l তালে তালে মেঘগুলি নাচে l তার সঙ্গে নাচে প্রকৃতিপ্রেমিক কবিহৃদয় l ময়ূরের নাচের সঙ্গে সঙ্গে বনের ফুলে ফুলে যেন স্বপ্নমাধুরী খেলে যায় l প্রতি মুহূর্তে বর্ষার ভোলবদলে প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয় l কবির দৃষ্টিতে তা ধরা পড়ে এবং কবি তাঁর রচনায় সেই ছবি এঁকে যান l বর্ষার জলের স্থলের এমন শত শত ছবি আঁকা হয়ে চলে l
ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায় l যেন প্রকৃতি এক আনন্দ উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত l ধরণী জুড়ে, দিবসরজনী আনন্দ কলরব শোনা যায় l
ছন্দ কবিতা l সুন্দর বিষয় l পরিবেশনা সুন্দর l শব্দচয়ন ভালো l কবিকল্পনা, দৃশ্যপট নির্মাণ প্রয়াস সুন্দর l
তবে বিভিন্ন পঙক্তিতে পর্বে পর্বে মাত্রার হেরফের থাকার কারণে ছন্দের দোলা ব্যাহত হয়েছে l শব্দসাম্য বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে l শব্দসাম্য অর্থাৎ যে শব্দের পরে যে শব্দ শ্রুতিমাধুর্য সৃষ্টি করে l এটা গভীর অনুশীলন ও চর্চার বিষয় l শব্দের পর নানা বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে ছন্দের দোলায় বারবার সরব পাঠ করতে হবে l নিজের কানেই ধরা পড়বে কোন্ শব্দের পর কোন্ শব্দের সাম্য বেশি হচ্ছে l
বিভিন্ন পঙক্তিতে কবি কিভাবে অনিয়মিত মাত্রা ব্যবহার করেছেন এবং ঐ পঙ্ক্তিগুলিতে মাত্রাসাম্য কিভাবে আনা যেতে পারত, পরীক্ষামূলকভাবে শুধু দেখানোর জন্য বিষয়টি রাখলাম l প্রথমে কবি যা করেছেন :
১) এই বর্ষায়
মহঃ সানারুল মোমিন
আয় রে ময়ূর, - ৪
বাজে নূপুর, - ৪
বৃষ্টির তালে তালে। - ৬
আছে অপেক্ষায়, - ৫
নাচে হৃদয়, - ৪
মেঘের কোলে কোলে। - ৬
নাচে ঐ ময়ূরী, - ৬
স্বপ্ন মাধূরী, - ৫
বনের ফুলে ফলে। - ৬
আঁকে শত ছবি, - ৬
নীরব রবি - ৪
বর্ষার জলে স্থলে। - ৬
ঘন কালো মেঘে, - ৬
গগণ বাগে, - ৪
আনন্দও উৎসবে। - ৭
খুশির ধরণী, - ৫
দিবা রজনী, - ৫
মেতেছে কলরবে। - ৭
যেটা করেছি :
২) এই বর্ষায়
মহঃ সানারুল মোমিন
আয় রে ময়ূর, - ৪
বাজে নূপুর, - ৪
বৃষ্টির তালে তালে। - ৪ +২ = ৬
রয় অপেক্ষায়, - ৪
কোন্ তিতিক্ষায়, - ৪
মেঘের কোলে কোলে। - ৪ + ২ = ৬
নাচ ময়ূরী, - ৪
ঐ মাধূরী, - ৪
বনের ফুলে ফলে। - ৪ + ২ = ৬
আঁকে ছবি, - ৪
নীরব রবি - ৪
বর্ষা জলে স্থলে l - ৪ + ২ = ৬
কালো মেঘে, - ৪
গগণ বাগে, - ৪
আনন্দ উৎসবে - ৪ + ২ = ৬
মা ধরণী, - ৪
দিন রজনী, - ৪
মাতে কলরবে। - ৪ + ২ = ৬
প্রতি স্তবকের শেষ পঙক্তিতে পূর্ণপর্ব ৪ মাত্রা ও উপপর্ব ২ মাত্রা ধরে নিয়ে l
এটি একটি প্রয়াস মাত্র l পঙক্তিতে পঙক্তিতে পর্বের সংখ্যার তারতম্য হতে পারে l কমমাত্রার উপপর্ব থাকতে পারে । কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রতিটি পূর্নপর্বে মাত্রার সংখ্যা যেন সমান হয় । তবেই ছন্দের দোলা অনুভব করা যাবে ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি সানারুল মোমিন ভাইকে l