এই জগত প্রপঞ্চময়, মায়ায় ঘেরা l পৃথিবী এক রঙ্গমঞ্চ l সকলেই কোনো না কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ l ঈশ্বর যখন যাকে যা চরিত্র দেন, তাকে সেই ভূমিকায় তার দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়, বলা যেতে পারে সেই ভূমিকায় অভিনয় করে যেতে হয় l যিনি যে মাপের অভিনেতা, সেই অনুসারে তিনি এই পৃথিবী থেকে মান যশ পেয়ে থাকেন l এই পৃথিবীতে জন্মলাভের পর মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে থাকেন l মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা, মিত্র, স্ত্রী, ভাই, বোন - কতো ভূমিকায় অভিনয় করে যেতে হয় l এই অভিনয়েরও শেষ আছে l যার যখন সময় শেষ হয়ে যায়, সব মায়ার বাঁধন ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয় l তখন কোনো সম্পর্কই আর থাকে না l স্ত্রী পুত্রের কাতর কান্না এই যাওয়া আটকাতে পারে না l মায়ার বাঁধন ছিঁড়েই যায় l তবু বারবার এই পৃথিবীতে জন্ম নিতে হয় l মায়ার বাঁধনে জড়াতে হয় l আবার সময় হলে সেই বাঁধন ছিঁড়ে চলে যেতে হয় l যতদিন পৃথিবীর কাজ শেষ হয়ে না যায়, বারবার জন্ম মৃত্যুর এই মায়াখেলায় মানুষ জড়িয়ে থাকে l
কবি মোহাম্মদ আজিজুল হক রাসেল এর 'মায়াজাল' শীর্ষক কবিতা পাঠের আগে বাংলা ছায়াছবি "সাড়ে চুয়াত্তর" এর "এ মায়া প্রপঞ্চময়" শীর্ষক ভক্তিগীতির আলোকে উপরের কথাগুলি মনে ভেসে উঠল l
কবিতাটিতে কবি এক ব্যক্তি অভিজ্ঞতার নিরিখে পৃথিবীর মায়াময় রূপটিকে তুলে ধরার প্রয়াস করেছেন l
মানুষ জন্ম থেকেই স্বপ্ন দেখে l স্বপ্ন দেখে সুন্দর আগামীর l তার পা মাটি স্পর্শ করে থাকলেও তার চোখ থাকে সুদূর নীল আকাশের দিকে, সীমাহীন গভীর নীল জলরাশির দিকে l নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে জীবনযাপন করলেও, সীমিত সামর্থ্যের অধিকারী হলেও, অসম্ভব কিছু একটা অর্জন করার স্বপ্ন ও প্রয়াস নিয়ে সে জীবনের পথে এগুতে থাকে l এই এগুনোর পথে তার নানা মিঠেকড়া অনুভূতি হয় l কখনো স্বপ্নপূরণের অনেকটা দূরে থেকে এক তিক্ত অনুভূতি জাগে, কখনো তার কাছাকাছি পৌঁছে স্বপ্নের আকাশে, নীল গভীর জলরাশির মধ্যে অবগাহনের সুখ মেলে l যেন স্বপ্নের নীল চারণভূমিতে ভ্রমণের অনুভূতি হয় l সুললিত এক মায়াময় ধ্বনি ও কথামালা অস্তিত্বকে মোহাবিষ্ট করে রাখে l
কিন্তু জীবনের পথ অতটা মসৃণ নয় l অনেকক্ষেত্রে বক্র l স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি স্বপ্নভঙ্গেরও সম্মুখীন হতে হয় l গন্তব্য অধরা থেকে যায় l জীবনের পথে চলতে চলতে পা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু কূলের দিশা মেলে না l এই বিশাল জগত সংসারে বিপদসঙ্কুল যাত্রাপথে মাঝে মাঝেই ঝড়, ঝাপটা আসে l তার থেকে ক্ষয়ক্ষতি হয় l বিনাশের আশঙ্কা মনকে গ্রাস করে l
এর মাঝেই মানুষকে চলতে হয় l সফলতা ও ব্যর্থতার আস্বাদ উভয়কেই তাকে গ্রহণ করতে হয়, এবং নিখুঁত, সুচতুর অভিনয় করে যেতে হয় জীবনভর l সোনায় মুড়ানো স্বপ্নের পথ কখনো হারিয়ে যায় l অতি যত্ন সহকারে প্রতি পদে গড়ে তোলা নিরাপত্তার বেষ্টনী খুলে পড়ে l স্বপ্নপুরন এর থেকে দূরত্ব বেড়ে যেতে থাকে l তবু নিজের মননের সঙ্গে ক্রমাগত এক বোঝাপড়া চলতে থাকে l আর থাকে নিখুঁত ও চতুর অভিনয় l অভিনয় অর্থাৎ ব্যর্থতার অনুভবকে আড়াল করে দৃপ্ত পদক্ষেপে সফলতার পথে এগিয়ে চলার ভান l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!
###
গাড় - গাঢ়
ভিভক্ত - বিভক্ত
বিনাসের - বিনাশের